গণতন্ত্রের ডাক শুনেছেনা কেউ : ধীরে ধীরে একা হয়ে পড়ছেন কেন ইউনুস?
এই মুহুর্তে বিশ্বব্যাপী আলোচিত একটি নাম ড. ইউনুস। সারাবিশ্বে ছড়িয়ে আছে যার অনেক শুভাকাঙ্খী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন নেতা থেকে শুরু করে নোবেল লরিয়েটরা পর্যন্ত তার জন্য অন্তপ্রাণ। সেই ড. ইউনুসই কিনা এবার একা হয়ে যাচ্ছেন? গত ২২ মার্চ ওয়াশিংটন ভিত্তিক খ্যাতনামা ম্যাগাজিন ‘দ্য ডিপ্লোম্যাটে’ দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতি বিশ্লেষক মুবাশ্বার হাসান এক নিবন্ধে এসব কথা লিখেন।
শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী ড. ইউনূসের সামনে দীর্ঘদিন ধরেই কারাবন্দি হওয়ার আশঙ্কা। শ্রম আইন লঙ্ঘনের জন্য তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং, কর ফাঁকি ও দুর্নীতিসহ ১৯৮টি মামলাও চলমান। কিন্তু শ্রম আদালতের রায়ের পরই তিনি মানবাধিকার ও গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলা শুরু করেন, যদিও রাজনৈতিক অঙ্গনে তার কথায় কর্নপাত করছেনা কেউ। ফলে ধীরে ধীরে একা হয়ে পড়ছেন ইউনূস।
নিবন্ধে বলা হয়, এক সময় ড. ইউনূসের বন্ধুদের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক তাকে রক্ষার জন্য দাঁড়িয়েছিলো। ২০২৩ সালে শেখ হাসিনার কাছে লেখা এক খোলা চিঠিতে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি-মুনসহ ১৭০ জনেরও বেশি প্রভাবশালী বিশ্ব ব্যক্তিত্ব ইউনূসের বিরুদ্ধে বিচারিক হয়রানি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
কিন্তু এই দেশের ভেতরে সেই অর্থে তার পাশে দাঁড়ানোর মতো কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ তিনি মূলত বিদেশি বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছিলেন, কিন্তু দেশের ভেতরে বুদ্ধিজীবী সাংবাদিক বা সুশিল সমাজের সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক ছিলো না। তাই বিদেশে তার বন্ধু থাকলেও দেশে তার বন্ধু খুঁজে পাওয়া কঠিন। তাছাড়া, বিদেশি বন্ধুরাও একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তার পক্ষে কথা বলেছেন। এটুকু বলেই তাদের দায়িত্ব শেষ করেছেন। তাই মামলা আর কারাগারে যাওয়ার দীর্ঘদিনের দোলাচলে তাদের ভূমিকাও ম্রিয়মাণ হয়ে পড়েছে।
‘দ্য ডিপ্লোম্যাট’ এ আরো বলা হয়, ২০০৬ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতায় সামরিক বাহিনীর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে হাসিনা-খালেদা দুজনকেই বন্দী করে। এই সুযোগে ২০০৭ সালে ইউনূস ‘নাগরিক শক্তি’ নামে একটি রাজনৈতিক দল করেন। কিন্তু, কয়েক সপ্তাহ পরই ইউনূস রাজনীতি ছেড়ে দেন। হাসিনা ও খালেদা জেল থেকে মুক্ত হন। আর ২০০৮ সালে ভোটে জয় পেয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।
মুবাশ্বার হাসান নিবন্ধে লিখেন, শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া যখন কারাগারে ছিলেন তখন ইউনূসের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে হুমকি হিসেবে দেখছিলেন দুই নেত্রীই। পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় যখন ইউনূসের প্রভাবে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পের ঋণ বাতিল করে। যেটি শুধু আওয়ামীলীগ বা সরকারের বিষয় ছিলোনা। দেশের মানুষের আবেগের বিষয়ও ছিল। ইউনূস আ.লীগ সরকারের বিরুদ্ধে দেশে লড়াই করার চেয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে বক্তব্য প্রদানে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখায় অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নিজের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতের রায়ের পরই ইউনূস মানবাধিকার ও গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলেছেন। তবে তা হালে পানি পাচ্ছে না। তার বিচার পক্রিয়া বন্ধ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ফলে ড. ইউনূসের অবস্থান সর্বত্র দুর্বল হচ্ছে। কেননা তিনি বাংলাদেশের কোনো সংকটে পাশে থাকেন না। তাই তার পাশেও এখন কেউ নেই।