মেজর হাফিজ কেন সাধু সাজতে চাইছেন?
*বিরোধী দলীয় একজন নেতা হিসেবে বিএনপিতে দীর্ঘদিন অবহেলিত ছিলেন মেজর হাফিজ। এই সুবাদে কেউ তাকে দল ত্যাগের প্রস্তাব দিতেই পারেন। তবে সেই প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখানের করে তিনি দলের একজন সৎ ও ত্যাগী নেতার পরিচয় দিয়েছেন বটে।
*কিন্তু তিনি যদি এই দলের কারিগর না হতেন তবে নতুন দলে যোগ দিতে তার বাসায় এসে তার হাতেই কেন আবেদন ফরম তুলে দিয়েছিলেন বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান?
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বা বিএনএম নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন এবং তাতে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের কথিত যোগদানের বিষয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব:) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ক্ষমতাসীন দলের তরফ থেকে এর দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তাব থাকলেও তিনি তা গ্রহণ করেননি। একই সাথে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানও রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার নিজ ইচ্ছা থেকেই তার বাসায় এসেছিলেন। তবে তাকে উৎসাহ না দেওয়ারও দাবি করেন তিনি।
এটা খুব স্বাভাবিক যে একজন বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে বিএনপিতে দীর্ঘদিন অবহেলিত ছিলেন মেজর হাফিজ। এই সুবাদে কেউ তাকে দল ত্যাগের প্রস্তাব দিতেই পারে। কিন্তু সেই প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখানের করে তিনি দলের একজন সৎ ও ত্যাগী নেতার পরিচয় দিয়েছেন নিঃসন্দেহে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, কিংস পার্টি’ খ্যাত বিএনএমে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ না দিলেও নতুন এই দল গঠনে নেপথ্যের কারিগর ছিলেন মেজর হাফিজ নিজেই। শুধু তাই নয়, এই দলের নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন ফরম তিনিই সংগ্রহ করিয়েছিলেন। এছাড়া তিনি যদি এই দলের কারিগর না হতেন তবে নতুন এ দলে যোগ দিতে তার বাসায় এসে তার হাতেই কেন আবেদন ফরম তুলে দিয়েছিলেন বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান?
সমালোচকরা বলছেন, হাফিজউদ্দিন আহমেদ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে জেড ফোর্সের অধীনে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে বিএনপি সরকার তাকে দু’টি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছিলো। অথচ ওয়ান-ইলেভেনে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তিনিই বিএনপির সংস্কারপন্থি অংশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে দল ভাঙ্গার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কৌশলে তিনি বিএনপির বিরুদ্ধে গিয়ে অন্যান্য সংস্কারপন্থীদের সাথে নিয়ে নতুন দল গঠনের মাধ্যমে নির্বাচনে যেতে চেয়েছিলেন। আর এখানে চমক আনতে বেছে নিয়েছেন বিশ্বসেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে। তবে শুরুতে নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকলেও শেষমেষ সাকিব সরে যাওয়ায় তার সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। তার উপর নতুন দল গঠন করে আদৌ কোনো সফলতা আসা নিয়েও ছিল সংশয়। এরপরই প্ল্যান বি’তে রূপান্তর হন তিনি। চতুরতার সঙ্গে সব দোষ সরকারের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে দলের কাছে সাধু সাজতে চেয়েছেন এবং হাতে গরম সেই ফলও পেয়েছেন তিনি।
মেজর হাফিজের উপর খুশি হয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপনের জন্য বিএনপির গঠিত কমিটির প্রধানের দায়িত্ব দিয়েছেন তাকে। আর এর মাধ্যমে বিএনপির রাজনীতিতে আবার পুরোপুরি সক্রিয় হলেন তিনি।