প্রতারণার নতুন অস্ত্র ‘স্কোপোলামিন’

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সন্ধ্যা ০৭:০৫, রবিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৩, ১২ ভাদ্র ১৪৩০

*ঘ্রাণ শুঁকিয়ে ও বাতাসে ফু দিয়ে সম্মোহিত করা হয়
*১৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা পর্যন্ত মানুষ তার নিজের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকেন
*অস্ত্র কিংবা ভয়ভীতি না দেখিয়েই টার্গেট ব্যক্তির সব কিছু লুটে নেয় অপরাধীরা


 

স্কোপোলামিন বা ভয়ঙ্কর ডেভিলস ব্রেথ, যা শয়তানের নিঃশ্বাস নামে পরিচিত। এটি একটি ভয়ঙ্কর উপাদান। যা কারও অজান্তে কিংবা কৌশল-অপকৌশলে বা জোর করে কারও নিঃশ্বাসের মাধ্যমে একবার মানবদেহে ছড়িয়ে দিতে পারলেই ওই ব্যক্তি কিছু সময়ের জন্য চলে যান প্রতারকদের নিয়ন্ত্রণে। ভয়ঙ্কর এই উপাদানের প্রয়োগে ১৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা পর্যন্ত মানুষ তার নিজের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকেন। প্রতারকদের কথা মতোই রোবটের মতো কাজ করেন। বর্তমান সময়ে স্কোপোলামিন দেশে এক আতঙ্কের নাম।

কোন ধরনের অস্ত্র কিংবা ভয়ভীতি না দেখিয়েই টার্গেট ব্যক্তির সব কিছু লুটে নিতে অপরাধীরা এখন এর ব্যবহার করছে। রাজধানীসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখন ডেভিল ব্রেথ বা শয়তানের নিঃশ্বাস জাতীয় পদার্থ দিয়ে অপরাধীরা সাধারণের সর্বস্ব লুট করছে।

অপরাধ বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, শয়তানের নিঃশ্বাস নামের এ উপাদানের অপব্যবহার করে অপরাধী কারো সম্পদ লিখে নেয়া, আবার কোনো নারীর সর্বনাশ করে নীল ছবি তৈরি অথবা পছন্দের নারীকে বিয়ে করলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। কারণ এটি যার ওপর প্রয়োগ করা হয় তিনি তখন নিজের মধ্যে থাকেন না। প্রতারক চক্রের সদস্যের সামনে যিনি (টার্গেট ব্যক্তি) থাকেন, তাকে যা বলা হবে তা-ই করবেন।

প্রতারণার জন্য নতুন আসা ডেভিল ব্রেথকে অনেকে নেশা বা মাদকদ্রব্য বললেও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) বলছে, এটি মাদক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত নয়।

সূত্র বলছে, অনেক আগে থেকেই এটি দিয়ে প্রতারণা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত দেশের ৩২ জেলায় সাধারণ মানুষ শয়তানের নিঃশ্বাসের শিকার হয়ে টাকা পয়সা খুইয়েছেন। এ ধরনের প্রতারক চক্রে বিদেশিরাও জড়িত। পুলিশ ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছে।

ডিএনসি বলছে, এটি নিয়ে গবেষণার সময় এসেছে। তবে আপাতত এটির অপব্যবহার করে কেউ যাতে প্রতারণা করতে না পারে সেজন্য জনসাধারণকে সচেতন হতে হবে। সম্প্রতি রাজবাড়ী সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের মাস্টার্সের ছাত্রী প্রিয়া, বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা সদরের হৃদয় টেলিকমের মালিক দুলাল মিয়া ও দোকানে থাকা তার ভাগ্নের চোখে কিছু একটা লাগিয়ে দেয়া হয়। এরপরই তারা নিজেদের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। ৮ এপ্রিল অভয়নগর উপজেলায় দোকান মালিক শরিফুলের বাবা, ২১ জানুয়ারি পল্লবীর ১২ নম্বরের ডিওএইচএস কমপ্লেক্সে ট্রাভেল এজেন্সির জিসান, ফরিদপুর শহরে আলেয়া বেগমসহ ঢাকার মোহাম্মদপুরের এক ভুক্তভোগী এ চক্রের কবলে পড়ে সর্বস্বান্ত হন।

পল্লবীর মামলার তদন্ত করতে গিয়ে দেশে এ ধরনের ৮-১০টি গ্রুপের সন্ধান পেয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। প্রতি গ্রুপে দুই থেকে তিনজন করে সদস্য আছে। এসব চক্রের নেতৃত্বে রয়েছে ইরানি নাগরিকরা।

অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, স্কোপোলামিন বা শয়তানের শ্বাস বা ডেভিলস ব্রেথ হিসেবে পরিচিত পাওয়া এই মাদক মস্তিষ্কের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। অন্যের দেয়া আদেশকে যান্ত্রিকভাবে অনুসরণ করতে বাধ্য করা হয়। তারা নিজে কিছু চিন্তা করতে পারেন না শুধু সামনের লোক যা বলবে তাই করেন রোবটের মত। ফলে দুর্বৃত্তরা লোকজনকে সর্বস্বান্ত করতে মোক্ষক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে এটি। সম্প্রতি এই চক্রের দৌরাত্ম বৃদ্ধি পেয়েছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগারের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক ড. দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, ২০১৮ সালের তালিকায় স্কোপোলামিন মাদকের তালিকায় নেই। আমাদের দেশে এটা নিয়ে কোনো আইনও নেই। তিনি এটিকে মাদকও বলতে চান না। কারণ মাদক বা নেশা বলতে যা বোঝায় সেটি এটির মধ্যে নেই।

তিনি বলেন, স্কোপোলামিন এখনো আমাদের টিম কোথাও থেকে উদ্ধার করেনি। এ সংক্রান্ত মামলাও মাদকে আছে বলে জানা নেই। কাজেই ওটা নিয়ে এখনো আমাদের ল্যাবে কোনো ধরনের টেষ্ট হয়নি। তবে যেহেতু এটি এখন প্রতারণার কাজে ব্যবহার হচ্ছে, অপরিচিতদের থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে। কেউ যাতে পাশে বসে কোনো কিছু স্প্রে করতে না পারে কিংবা নাকে টিস্যু কিংবা রুমাল ধরতে না পারে সেদিকে সচেতন থাকতে হবে।

দুলাল সাহা বলেন, এটি এমন একটি ভয়ঙ্কর জিনিস। যার প্রয়োগে রিমোট কন্ট্রোল থাকে অপরাধীর হাতে। মেক্সিকানরা এটি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু এখন এটির অপব্যবহার হচ্ছে।

ডিএনসি’র উপ-পরিচালক (নিরোধ ও শিক্ষা) মানজারুল ইসলাম বলেন, ইউএন কনভেশন অনুযায়ীও এটি ড্রাগ নয়। মাদকের ২০১৮ সালের আইনেও এটি সিডিউলভুক্ত মাদক নয়। সর্বমোট ৩৩টি কেমিক্যাল মাদকের অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যেও নেই স্কোপোলামিন বা শয়তানের নিঃশ্বাস। তবে এটি অপপ্রয়োগে যেহেতু মানুষ হতবুদ্ধি হয়ে পড়ে, কিছু সময়ের জন্য ভুক্তভোগীর কাছে যা চাওয়া হয় তা-ই দিয়ে দেয়, তাই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অবস্থান এটির বিরুদ্ধে।

তিনি জানান, এটি একটি কেমিক্যাল। এটি এর আগে মেডিসিন পারপাসে ব্যবহার হয়েছে বলে তার স্ট্যাডিতে রয়েছে। কাজেই এটি যাতে দেশে ঢুকতে না পারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

বিষয়ঃ বাংলাদেশ

Share This Article


ঢাবি ছাত্রদল সভাপতিসহ গ্রেপ্তার ১১, তাজা বোমা ও সরঞ্জাম, ৫০ হাজার লিফলেট উদ্ধার

আদালতে বোমা হামলার মূল পরিকল্পনাকারী গ্রেপ্তার

খুলনায় এজলাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তার ১

নাশকতার মামলায় বিএনপির ৪৭ নেতাকর্মীর কারাদণ্ড

জঙ্গি নেতা বহুজাতিক কোম্পানির কর্মকর্তা গ্রেপ্তার

প্রবাসীর স্ত্রীর গোসলের দৃশ্য ধারণ করে চাঁদা দাবি, গ্রেফতার ২

গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনায় দুই যুবক গ্রেফতার

রাজনৈতিক অস্থিরতায় স্বর্ণ চোরাকারবারিরা সক্রিয়!

শাহজালালে ৭ কোটি টাকার সোনাসহ ৪ যাত্রী আটক

রাজমিস্ত্রির প্রেমে পড়ে কোটিপতি স্বামীকে ‘খুন’

কমলাপুরে ট্রেনে আগুন দেয়ার সময় আটক ১

গাইবান্ধায় হাত-পায়ের রগ কেটে যুবলীগ সভাপতিকে হত্যা