জঙ্গি নেতা বহুজাতিক কোম্পানির কর্মকর্তা গ্রেপ্তার

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ বিকাল ০৫:২৪, বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৩, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩০

দেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীর বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা ও গত এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত অনলাইন সমাবেশে বক্তব্য রাখা র্শীষ নেতা ইমতিয়াজ সেলিম ওরফে ইমাদুল আমিনকে (৪১) গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউটার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্স নাশনাল ক্রাইম (সিটিসিসি)’র ইন্টেলিজেন্স এ্যানালাইসিস বিভাগ। মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বসুন্ধারা আবাসিক এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

 

সিটিটিসি বলছে, ইমতিয়াজ সেলিম দেশের একটি বহুজাতিক কোম্পানির কর্মকর্তা পরিচয়ে ছদ্মবেশে দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনটির শীর্ষ পর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। তিনি সমান তালে পেশাগত পরিচয়ে কাজ করার পাশাপাশি হিজবুত তাহরীর নীতি নির্ধারক হিসেবে কাজ করে আসছেন। বুধবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান।

তিনি বলেন, ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীর বাংলাদেশে ২০০৯ সালে নিষিদ্ধ করে সরকার। সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশে জঙ্গি ও মৌলবাদী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় তারা গত কয়েক বছর ধরে অনলাইন সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে নিষিদ্ধ সংগঠনের কর্মকান্ড গতিশীল বিভিন্ন প্রচার প্রচারনায় করে আসছিলো। সর্বশেষ চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ‘জালিম হাসিনা এবং ঔপনিবেশবাদী মার্কিনীদের কবল থেকে মুক্তির উপায়’ বিষয়ক অনলাইন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনটি লেবানন ভিত্তিক একটি আইটিউব চ্যানেলে প্রচার করা হয়। এ সম্মেলনে অংশগ্রহন করার জন্য সংগঠনটির সদস্যরা রাজধানীসহ সারা বাংলাদেশে পোস্টারিং এবং অনলাইনে প্রচার-প্রচারণা চালায়।

সম্মেলনে দুইজন বক্তা এবং একজন উপস্থাপক অংশগ্রহন করে যেখানে সবাই ছদ্মনাম ব্যবহার করে। এ সম্মেলনে বক্তারা সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড ও মার্কিন যুক্তরাষ্টসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক নিয়ে ভুল তথ্য উপস্থাপন করে বর্তমান পরিস্থিতি বুঝানোর চেষ্টা করা হয়। আবার ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়েও দেশের সাধারন মানুষকে হিজবুত তাহরীরের নেতৃত্বে শাসন ব্যবস্থা কায়েমের মাধ্যমে ইসলামী রাস্ট্র তথা খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য উস্কানী দেওয়া হয়। এমনকি দেশের প্রচলিত সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে অস্বীকার করে তাদের পক্ষে বিভিন্ন মতবাদ জনগনের মধ্যে প্রচার করারও চেষ্টা করা হয়েছে। তাদের এ ধরনের কাজ দেশের বিদ্যমান আইনের সুস্পষ্ট লংঘন। এ সম্মেলনের ২য় বক্তা ও হিজবুত তাহরীরের অন্যতম নেতা এবং বর্তমান সময়ে সক্রিয় নেতৃত্বদানকারী ইমতিয়াজ সেলিম ওরফে ইমাদুল আমিন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইমতিয়াজ সেলিম সিটিটিসিকে জানিয়েছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যাল থেকে বিবিএ ও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী সম্পন্ন করেন। বর্তমানে সে রাজধানীর বনানীতে একটি মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানির বিক্রয় বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করছিলো। দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গিবাদে সঙ্গে জড়িত ইমতিয়াজ মার্শাল আর্টে ব্লাক বেল্ট ধারী।

বাংলাদেশ জাতীয় কারাতে ফেডারেশনের তালিকাভুক্ত প্রশিক্ষক ও আন্তর্জাতিক রেফারি। এছাড়া তিনি জাপান কারাতে এসোসিয়েশনের লাইসেন্সধারী প্রশিক্ষক। সংগঠনটির জন্য বিশেষ এ্যাপস ও এনক্রিপ্টেড অ্যাপসের মাধ্যমে সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করত। পাশাপাশি বিভিন্ন কৌশলে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে সরকার ও দেশ বিরোধী পোস্টার, মসজিদে মসজিদে বয়ান নান কর্যক্রমে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ও অনলাইন সম্মেলনগুলোতে সমন্বয়ক হিসেবে বক্তব্য দিত।

যেভাবে জঙ্গি সংগঠনের সদস্য হলেন ইমতিয়াজ সেলিম:

আসাদুজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে ২০১০ সালে তার এক বন্ধুর মাধ্যমে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীর সম্পর্কে জানে এবং সদস্য হিসেব যোগ দেয়। একই বছরের ১২ মে হিজবুত তাহরীর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়। তার বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলায় ছয় মাস কারাগারে থাকেন। এই কারাগারে থাকার সময়ে ইমতিয়াজ সেলিম হিজবুত তাহরীর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম মাওলা ও প্রফেসর মহিউদ্দিনের সান্নিধ্য লাভ করে। কারাগারে বসে তাদের বয়ানে আরও বেশি অনুরক্ত হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে জামিনে মুক্তি পেয়ে পরিবার নিয়ে অস্ট্রেলিয়া চলে যায়।

সেখানে এক বছর থাকার পরে দেশে ফিরে আবারও হিজবুত তাহরীরের সদস্য হিসাবে কার্যক্রম চালিয়ে যায়। ইমতিয়াজ সেলিম ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ও ৩ ডিসেম্বর আরও একটি অনলাইন সম্মেলনের বক্তা হিসেবে গনতন্ত্র ও দেশের প্রচলিত আইনকে অস্বীকার করে বক্তব্য দেন।

গ্রেপ্তর ইমতিয়াজ সেলিমের সাংগঠনির ছদ্মনাম ইমাদুল আমিন। গত ৮ ডিসেম্বরডিএমপির রমনা থানায় অনলাইন মিটিংয়ে জড়িত থাকায় সন্ত্রাস বিরোধী আইন আইনে দায়েল করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

বিষয়ঃ বাংলাদেশ

Share This Article