হাইকমান্ডের নজরদারিতে বিএনপি মহাসচিবসহ আরও যারা
যারা তলে তলে সরকারের সঙ্গে আতাঁত করছে বলে সন্দেহ রয়েছে, তাদের সম্বন্ধে বিএনপির হাইকমান্ড অবহিত। তাই তাদের সকলকেই নজরদারীতে রাখা হচ্ছে। এমনকি নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় সন্দেহের তালিকায় আরও অনেক কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক নেতাই এই তালিকায় যুক্ত হতে পারেন। সেই হিসেবে সম্ভাব্য তালিকাও প্রস্তুত করা হচ্ছে। আর এসব ঘিরে নানান সন্দেহ ও শঙ্কায় অস্থিরতা বিরাজ করছে।
মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিবসহ বেশ কয়েকজন নেতার প্রতি সন্দেহ-অবিশ্বাস বাড়ছে দলটির হাইকমান্ডের। সরকারের সঙ্গে এসব নেতার বিশেষ সম্পর্ক আছে—এমন ধারণাই এই সন্দেহের মূল কারণ। তাই তাদের গতিবিধি নজরদারীর সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাইকমান্ড।
দলটির নেতাদের অভিযোগ বিএনপির অভ্যন্তরেই সরকারের কয়েকজন এজেন্ট রয়েছে, যারা প্রকাশ্যে সরকারের সমালোচনা করলেও গোপনে সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করছেন। সরকারের সঙ্গে এদের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ রয়েছে। এদের কারণেই বিএনপি বারবার আন্দোলনের গতি হারাচ্ছে, বিভ্রান্ত হচ্ছেন কর্মীরা।
এই নেতাদের কয়েকজন গত কয়েক মাসে ব্যাংকক, মালয়েশিয়া ও নেপালে সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত এজেন্টদের সাথে পৃথক পৃথক বৈঠক করেছেন বলে তথ্য রয়েছে বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে। তবে সবচেয়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছে রাজধানীর উত্তরায় সম্প্রতি হওয়া একটি বৈঠক ঘিরে।
জানা গেছে, উত্তরায় সম্প্রতি যে গোপন বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে সেখানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত ছিলেন। তবে বৈঠকটি তার বাসায় হয়নি। বাসা থেকে দূরে অন্য একজনের বাসায় হয়েছে। উত্তরার বৈঠকের বিষয়ে দলের নীতি নির্ধারকদের অবগত না করায় মির্জা ফখরুলের প্রতি সন্দেহ গভীর হয়। অবশ্য মির্জা ফখরুলের প্রতি অনেক আগে থেকেই সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ ও সখ্যতার অভিযোগ এমনকি প্রমাণ রয়েছে বলেও দাবি করে আসছেন দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।
এছাড়া সন্দেহের তালিকায় আছেন ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান। গত বছরের নভেম্বরে ‘১০ ডিসেম্বরের পর দেশ চলবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কথায়’ তার এমন বিতর্কিত মন্তব্যকে কেন্দ্র করে অনেকে গ্রেফতার হলেও তাকে কারাগারে নেওয়ার আগেই ছেড়ে দেওয়া হয়। এতে সাধারণ নেতা-কর্মীসহ হাইকমান্ডে সন্দেহ দানা বাঁধে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, যাদের সন্দেহ করা হচ্ছে তাঁদের মধ্যে আরও আছেন মির্জা আব্বাস, মেজর (অব:) হাফিজসহ বিএনপির সাবেক একাধিক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী। আছেন দলের তিনজন কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যানও। দুজন কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব, উত্তরাঞ্চলের একজন এমপি, খুলনার এক নেতা, যুবদলের সাবেক এক নেতা, নারায়ণগঞ্জ জেলার দুজন নেতা, সিলেটের এক নেতা ও দলের কয়েকজন সহসম্পাদকও এই তালিকায় যুক্ত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, ১০ ডিসেম্বর দলটির মহাসমাবেশের পূর্বে গ্রেফতাকৃত অবস্থায় জেলে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসের সাথে সরকারের এজেন্টদের মাঝে গোপন বৈঠক হয়েছে এবং এই গ্রেফতারও পূর্বপরিকল্পিত বলে বিশ্বাস করেন বিএনপির অনেক নেতাই।
সূত্রমতে, যারা তলে তলে সরকারের সঙ্গে আতাঁত করছে বলে সন্দেহ রয়েছে, তাদের সম্বন্ধে বিএনপির হাইকমান্ড অবহিত। তাই তাদের সকলকেই নজরদারীতে রাখা হচ্ছে। এমনকি নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় সন্দেহের তালিকায় আরও অনেক কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক নেতাই এই তালিকায় যুক্ত হতে পারেন। সেই হিসেবে সম্ভাব্য তালিকাও প্রস্তুত করা হচ্ছে। আর এসব ঘিরে নানান সন্দেহ ও শঙ্কায় অস্থিরতা বিরাজ করছে দলটিতে।