ব্যাংকে গিয়ে টাকা পায়নি এমন ঘটনা কি দেশে ঘটেছে?
- দেশের ব্যাংক খাত নিয়ে নানা ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে
- এসব তথ্যের কি কোনো ভিত্তি আছে
- বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকারদের স্পষ্ট বার্তা
গেল কয়েক মাস ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে গুজব ছড়িয়েছে ব্যাংকে টাকা নেই,বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হতে যাচ্ছে ইত্যাদি। তাই গ্রাহকরা ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিতে শুরু করেছিলেন। এমনকি ব্যাংক থেকে টাকা তোলার জন্য হুড়াহুড়ি লেগেছিল বলেও সামাজিক মাধ্যমগুলোতে বিভ্রান্তিকর নানা তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া এমন বিভ্রান্তিকর কিছু ভিডিও দেখে জনমনে নানা প্রশ্ন ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল,যা এখনও চলমান রয়েছে। 'ব্যাংকে রাখা টাকা কি পাওয়া যাবে?' এমন গুজবের সত্যতা জানতে কথা হয় দেশের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে।
দেশের দক্ষিণের জনপদ যশোরের মনিরাম উপজেলার ফুলের পাইকারি ব্যবসায়ী মিয়া মনিরুজ্জামান বলেন, গত ১৭ বছর ধরে আমি ফুলের ব্যবসা করি। দিন শেষে ব্যাংকে টাকা রাখি। আবার দিনের শুরুতে টাকা তুলি। ব্যাংকে গিয়ে কোনো দিন টাকা পাইনি এমন ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে দেশের উত্তরের জনপদ দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার রড ও সিমেন্টের ডিলার জিলানি সরকার বলেন, দুই যুগের বেশি সময় ধরে আমি ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করি। ব্যাংকে গিয়ে টাকা পাইনি এমন ঘটনা কোনো দিন ঘটেনি।তবে এবার গুজবে কান দিয়ে আমি একই দিন একাধিকবার টাকা তুলেছিলাম।কিন্তু ব্যাংক আমাকে টাকা দেয়নি এমন হয়নি কখনও।
মিয়া মনিরুজ্জামান-জিলানি সরকারের মতো দেশের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ পূর্ব থেকে পশ্চিমের এমন কোন এলাকা নেই যে নিজের গচ্ছিত রাখা টাকা ব্যাংকে গিয়ে পাননি। চাওয়া মাত্রই ব্যাংক টাকার মালিককে তা দিয়ে দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংকে টাকা নেই এসব তথ্যের কোনো ভিত্তি নেই। ব্যাংকব্যবস্থায় বর্তমানে এক লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকার অতিরিক্ত নগদ রয়েছে। ব্যাংক খাতে নগদ অর্থের কোনো সংকট নেই। বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের চেয়েও ভালো।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হবে’বলে এত দিন গুজব ছড়িয়ে যারা ব্যর্থ হয়েছে, সেই সুযোগসন্ধানীরাই এখন ব্যাংক নিয়ে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে বসে কয়েকজন ব্যক্তি অর্থনীতি নিয়ে কল্পিত সব তথ্য ফেসবুক, ইউটিউবসহ নানা মাধ্যমে প্রকাশ করছেন। আর দেশে বসে অনেকেই সেই গুজবে আগুন ঢালছেন। এতে দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা বাণিজ্যের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে।