বিনা চিকিৎসায় মারা যান গ্রামীণ ব্যাংকের প্রথম ঋণগ্রহীতা সুফিয়া খাতুন
- গ্রামীণ ব্যাংকের প্রথম ঋণ গ্রহীতা সুফিয়া খাতুন মারা যান ১৯৯৪ সালে
- ২০০৬ সালে নোবেল পাওয়ার দিন সুফিয়ার সাফল্যগাঁথা তুলে ধরেন ইউনুস
- অসলোর সিটিহল মঞ্চে বিশাল টিভির পর্দায় প্রতিবেদন প্রচার করা হয়
- প্রতিবেদনে ঋণ নিয়ে সুফিয়ার ভাগ্য পরিবর্তনের বিশাল অর্জন ফলাও করা হয়
- প্রকৃত পক্ষে ঐই বাড়িটি সুফিয়ার নয়, দুবাই প্রবাসী জেবল হোসেনের বাড়ি ছিল
শ্রম আইন লঙ্ঘন করে সাজা, জামিন, অর্থ আত্মসাতের দায়ে জরিমানা এ সবই পুরনো খবর। এবার বেরিয়ে এসেছে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের গ্রামীণ ব্যাংক শুরুর দিকের অমানবিকতা ও মিথ্যাচারের কথা।
১৯৭৪ সাল। জোবরা গ্রামের অভাবী নারী সুফিয়ার হাতে ঋণ হিসাবে প্রথম ২০ টাকা তুলে দিয়ে ক্ষুদ্রঋণের যাত্রা শুরু করেন তৎকালীন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. ইউনুস। বেশি ঋণের আশ্বাস পেয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই ঋণ পরিশোধ করে নতুন করে ৫০০ টাকা ঋণ পান সুফিয়া। সময়ের হিসেবে একসঙ্গে এতো টাকা পাওয়ার আনন্দে সুফিয়া সেদিন তা সারা গ্রামে জানিয়ে দেন। এরপরই ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের আওতায় চলে আসে পুরো জোবরা গ্রাম।
জোবরার ঘরে ঘরে তখন নগদ টাকার আনন্দ। কিন্তু সেই আনন্দ মিলিয়ে যেতে বেশিদিন লাগেনি। সুদে আসলে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন অনেকে, এলাকা ছেড়েছেন রহিমা ও সায়েরা খাতুনসহ অনেকেই।
স্বাবলম্বী করার নামে ড. ইউনুসের " ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প" জোবরা গ্রামবাসীকে গরীব থেকে আরো গরীব করেছে। গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ শোধ করতে তারা "আশা'র দ্বারস্থ হয়েছেন। আশার টাকা শোধ করতে "ব্র্যাক"এর দ্বারস্থ হয়েছেন। এভাবে ঋণ বাণিজ্যের নামে গরীব দুঃখী, সহজ-সরল গ্রামের মানুষকে দারিদ্রের চরম পর্যায়ে ঠেলে দেন ইউনুস।
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রথম ঋণ গ্রহীতা সুফিয়া খাতুন চরম দারিদ্রের মধ্যে বিনা চিকিৎসায় ধুকেঁ ধুঁকে মারা যান ১৯৯৪ সালে। চিকিৎসার টাকা যোগাতে ভিক্ষা করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। চিকিৎসার জন্য সাহায্য চাইলে একটি কানাকড়িও দেননি ড. ইউনুস। এমনকি সুফিয়ার পরিবারের সদস্যরা ড. ইউনূসের গ্রামের বাড়ি কুয়াইশ বুড়িশ্চরে গিয়েও তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেননি।
সুফিয়া খাতুনের মেয়ে নুরুন্নাহার আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমার মাকে বাঁচানোর জন্য, চিকিৎসা করার জন্য মানুষের কাছ থেকে ভিক্ষা করে টাকা নিয়েছি। কিন্তু ইউনূস কোনো টাকা দেননি। তিনি নিজের বাড়ির কাজের ব্যস্ততার অজুহাত তুলে তার বাড়িতে যাওয়ার পরেও দেখা করেননি। ’
ইউনুস ও গ্রামীণ ব্যাংকের কোনো সহায়তা পাওয়া যায়নি। পরে গ্রামবাসী চাঁদা তুলে সুফিয়া খাতুনের দাফনের ব্যবস্থা করে। সুফিয়ার দুই মেয়ে হালিমা ও নূরুন্নারের দিন কেটেছে অর্ধাহারে, অনাহারে। তাদের মাথা গোজাঁর কুঁড়েঘরটিও নড়েবড়ে। বর্ষায় তারা অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নেয়।
সুফিয়া খাতুন মারা গেছেন ১৯৯৪ সালে। কিন্তু ২০০৬ সালের ১৩ অক্টোবর গ্রামীণ ব্যাংক ও ড. ইউনূস নোবেল পুরস্কার পাওয়ার দিন গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ নিয়ে সুফিয়ার দারিদ্র্যবিমোচনের সাফল্যগাঁথা তুলে ধরা হয় আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়। তখন বিষয়টি এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যে, সুফিয়াকে এ পর্যায়ে নিয়ে আসার পুরো কৃতিত্ব গ্রামীণব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. ইউনূসের।
ড. ইউনূস যখন নরওয়ের অসলোর সিটিহলে নোবেল পুরস্কার নেওয়ার জন্য মঞ্চে দাঁড়ান তখন মঞ্চে থাকা বিশাল টিভির পর্দায় গ্রামীণব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম সম্পর্কে একটি ভূমিকা প্রতিবেদন প্রচার করা হয়। প্রতিবেদনে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রথম ঋণগ্রহীতা সুফিয়া খাতুনের নাম উল্লেখ করা হয়। একইসঙ্গে ঋণ নিয়ে সুফিয়ার ভাগ্য পরিবর্তনের বিশাল অর্জন ফলাও করে প্রচার করা হয়।
প্রতিবেদনে দেখানো হয়, সুফিয়া ঋণ নিয়ে দোতলা বাড়ি করেছেন। একই সঙ্গে আর্থিকভাবে সচ্ছল হওয়ার বিষয়টিও উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু বাস্তবে কখনোই সুফিয়ার এমন অবস্থা ছিল না। প্রকৃত পক্ষে সুফিয়ার বাড়ির পাশে দুবাই প্রবাসী জেবল হোসেনের দোতলা বাড়িটিকে সুফিয়ার নিজের বাড়ি বলে সারা বিশ্বে প্রচার করেন ড. মুহাম্মদ ইউনুস, যা ছিল সম্পূর্ণ প্রতারণা। দেশি-বিদেশি মিডিয়া এটিকেই সুফিয়ার বাড়ি হিসেবে প্রচার করে ইউনুসের গুণকীর্তন করে।
গরীবের রক্ত শুষে জোকেঁর মতো ফুলে ফেপেঁ নোবেল মেডেল গলায় দিয়ে ড. ইউনুস ঘুরে বেড়াচ্ছেন দেশ বিদেশে। আর তারই হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে ঋণের কষাঘাতে বিপযস্ত হয়েছে সুফিয়ারা।