পান চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের
চলতি বছর উপজেলায় ১২ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হয়েছে। এর প্রতি একর জমিতে পানের উৎপাদন ব্যয় ৫-৬ লাখ টাকা, আর তা বিক্রি হয় ১০-১২ লাখ টাকায়। উপজেলায় সুরাটি, হারেঞ্জা ও ভরুয়া, গোবিন্দপুর সহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৫শ পান চাষি রয়েছে। যাদের কৃষি জমি নেই, তারাও বসতবাড়ির পাশে ও আঙিনায় পানের চাষ করছেন।
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলায় বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে আবাদি উঁচু জমিতে, বাড়ির পাশে, বিভিন্ন গাছে কিংবা বাড়ির উঠোনে পান চাষে চাষিদের আগ্রহ বাড়ছে। এতে একদিকে চাঙ্গা হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি, অন্যদিকে স্বাবলম্বী হচ্ছেন এলাকার অনেক দরিদ্র পরিবার। বাজারে পানের দাম বেশি ও ব্যাপক চাহিদা থাকায় অন্যান্য ফসলের তুলনায় পান চাষের প্রতি ঝুঁকছে স্থানীয় কৃষকরা।
এক সময় ইউনিয়নজুড়ে দেখা যেত ধান ক্ষেত, এখন সেখানে চোখে পড়ে পানের বরজ। যারা একসময় শ্রমিকের কাজ করতেন, তারাও বাড়ির সামনে পরিত্যক্ত জায়গায় পানের চাষ করছেন। পান চাষ করে এলাকার অনেকেই ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, চলতি বছর উপজেলায় ১২ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হয়েছে। এর প্রতি একর জমিতে পানের উৎপাদন ব্যয় ৫-৬ লাখ টাকা, আর তা বিক্রি হয় ১০-১২ লাখ টাকায়। উপজেলায় সুরাটি, হারেঞ্জা ও ভরুয়া, গোবিন্দপুর সহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৫শ পান চাষি রয়েছে। যাদের কৃষি জমি নেই, তারাও বসতবাড়ির পাশে ও আঙিনায় পানের চাষ করছেন।
পান ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক।
উপজেলার পিতলগঞ্জ গ্রামের বিল্লাল হোসেন জানান, পান লাভজনক ফসল। উৎপাদন খরচের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ লাভ হওয়ায় বরজ পাল্টে দিয়েছে তার অভাবের সংসার। পানের এই আয় থেকেই ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করানোর পাশাপাশি স্বাবলম্বী হচ্ছেন তারা। কিনেছেন ফসলি জমিও।
সিদলা ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কাঞ্চন মিয়া বলেন, আট-নয় বছর ধরে এ ইউনিয়নের অনেক কৃষক ধানের আবাদ কমিয়ে দিয়ে পানের চাষ করছেন। এতে লাভ বেশি। ব্যবসায়ীরা গ্রামে ঘুরে কৃষকদের কাছ থেকে এসব পান কিনে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন। দিন দিন বাড়ছে এলাকায় পানের চাষ।
হারেঞ্জা গ্রামে সুরুজ মিয়ার বাড়ি। বাড়ির পাশে লাগানো পানখেত পরিচর্যায় ব্যস্ত তিনি। সুরুজ মিয়া বলেন, এক বছর ২০ শতক জমিতে ৫০ হাজার টাকা খরচ করি পানের গাছ লাগাইছি। চার মাস পর যাবৎ পান তুলে বিক্রি করছি। পান বিক্রিতে প্রত্যেক বছরে খরচ বাদে ৮০ হাজার টাকা আয় করছি।
পান ক্ষেতে পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষাণী।
উপজেলার ৬ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় বিভিন্ন গ্রাম অঞ্চলে অসংখ্য পানের বরজ রয়েছে। এখানকার উৎপাদিত পান উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ হচ্ছে পার্শ্ববর্তী পাকুন্দিয়া, নান্দাইল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। এরই মধ্যে উপজেলা পানপল্লী খ্যাত সুরাটি, সিদলা, জাহাঙ্গীর পুর, পিতলগঞ্জ, বরুয়া, হারেঞ্জাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ পান চাষ করে বদলে দিয়েছে গোটা উপজেলার পরিবেশ। ওই উপজেলার পান চাষি তার শ্রম কাজে লাগিয়ে পান চাষ করে বদলে দিচ্ছে তাদের পরিবারের ভাগ্য।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম সাহজাহান কবির জানান, পান লাভজনক হওয়ায় এ অঞ্চলে পান চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এবার উৎপাদিত পান থেকে প্রচুর আয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়াও পান চাষ করতে গিয়ে কৃষক কোনো রকমের সমস্যার সম্মুখীন হলে খুব দ্রুত তাদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে থাকেন বলেও জানান তিনি।