না ফেরার দেশে কিংবদন্তি শিল্পী হ্যারি বেলাফন্তে

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ০৯:৪৯, বুধবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৩, ১৩ বৈশাখ ১৪২৯

কিংবদন্তি মার্কিন সংগীতশিল্পী হ্যারি বেলাফন্তে আর নেই। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ম্যানহাটনের আপার ওয়েস্টসাইডে নিজের বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ৯৬ বছর বয়সী এ শিল্পী।

বেলাফন্টের মুখপাত্র কেন সানশাইন গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে এই তারকার।

সঙ্গীতের জগতে হ্যারির অবদান অনস্বীকার্য। পঞ্চাশের দশকে নিজস্ব গায়কিতে লোকগানের জগতে আলোড়ন তোলেন তিনি। শুধু গানের মধ্যেই নিজেকে আবদ্ধ রাখেননি, তার সৃষ্টিকে হাতিয়ার করে আমেরিকার বর্ণবৈষম্যকে ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।

বেলাফন্টের আগেও আমেরিকার বিনোদন জগতে ঝড় বইয়ে দিয়েছিলেন এলা ফিটজেরাল্ড বা লুই আর্মস্ট্রংয়ের মতো শিল্পীরা। তবে পঞ্চাশের দশকে সে দেশের সমাজে ভেদাভেদের শিকড় যখন গভীরে প্রবেশ করেছে, সে সময় এক কৃষ্ণাঙ্গের গুরুগম্ভীর কণ্ঠের মাদকতা তোলপাড় করেছিল আমেরিকা তথা গোটা বিশ্বকে। বর্ণবৈষম্যের দেয়াল টপকে বৃহত্তর সমাজের কাছে পৌঁছতে সফল হয়েছিলেন তিনি।

১৯২৭ সালের ১ মার্চ নিউ ইয়র্ক শহরে জন্ম বেলাফন্তের। তবে শৈশবের আটটি বছর জ্যামাইকায় কেটেছে তার। পরে নিউ ইয়র্কে ফিরলেও ডায়ালেক্সিয়ার সমস্যায় হাই স্কুলের পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। পেটের তাগিদে করেছেন নানা বিচিত্র কাজ। ১৭ বছর বয়সে যোগ দেন মার্কিন নৌসেনায়। সেই সময় পুরো বিশ্ব ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াল থাবায়।

যুদ্ধশেষে অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন বেলাফন্তে। সেই প্রথম অভিনয়ের ক্লাসে ভর্তি হন, সেই সঙ্গে হাতে তোলেন গিটার। লোকগীতি থেকে পপ, জ্যাজ গেয়ে উপার্জন শুরু করেন নিউ ইয়র্কের ক্লাবগুলোতে। ক্রমে গানই হয়ে ওঠে তার পরিচয়।

১৯৫৪ সালে প্রকাশ পায় তার প্রথম অ্যালবাম। এরপর দ্বিতীয় অ্যালবামেই দেখলেন খ্যাতির মুখ। তবে ইতিহাস গড়ল তৃতীয় অ্যালবাম। ‘ক্যালিপসো’ নামের সেই অ্যালবামে জ্যামাইকান ঐতিহ্যের ছোঁয়া মার্কিনীদের অভিভূত করে। আমেরিকায় সেটিই প্রথম অ্যালবাম যেটা দশ লাখেরও বেশি বিক্রি হয়েছিল।

‘দ্য বানানা বোট সং’, ‘জাম্প ইন দ্য লাইন’ থেকে ‘কারমেন জোন্স’, ‘আইল্যান্ড ইন দ্য সান’, ‘অডস এগেনস্ট টুমরো’— পঞ্চাশের দশক জুড়ে একের পর এক হিট গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন বেলাফন্টে।

পঞ্চাশের দশকের শেষে তিনি ছিলেন সবচেয়ে বেশি আয় করা কৃষ্ণাঙ্গ শিল্পী। গায়ক হিসাবে সাফল্যের পর একের পর এক সিনেমার অফার আসতে শুরু করেছিল তার কাছে। এক সময় হলিউডের প্রথম সারির অভিনেতার তালিকায় নাম উঠে যায় বেলাফন্টের। তবে সিনেমার জগৎ বোধ হয় তার কাছে অগ্রাধিকার পায়নি। বেশ কিছু বছর পর আবার গায়কির জগতেই ফিরে যান। পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে সামাজিক আন্দোলনের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছিলেন তিনি। মার্টিন লুথারের সাদার্ন ক্রিশ্চিয়ান লিডারশিপ কনফারেন্সের জন্য অর্থসংগ্রহের মূল উদ্যোক্তাও ছিলেন বেলাফন্টে।

ব্যক্তি জীবনে তিনবার বিয়ে করেছিলেন বেলাফন্তে। তার এবং তার প্রথম স্ত্রী মার্গারিট বার্ডের দুটি সন্তান ছিল। যার মধ্যে একজন অভিনেত্রী-মডেল শারি বেলাফন্তে। প্রাক্তন নৃত্যশিল্পী জুলিয়া রবিনসনের দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গেও তার দুটি সন্তান ছিল। সূত্র: আনন্দবাজার, নিউজ ১৮

বিষয়ঃ তারকা

Share This Article