এক লাখ ডলারে পুরোনো বিমান কিনে বাড়ি বানালেন ৭৩ বছর বয়সী প্রকৌশলী

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ১০:০০, বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২, ১৩ পৌষ ১৪২৯

‘আপনি যদি একজন প্রকৌশলী বা বিজ্ঞানী হন, কিংবা যদি আপনার এমন মহাকাশ প্রযুক্তির চমৎকারিত্ব এবং সৌন্দর্যের প্রতি মুগ্ধতা থাকে, তবে বাসস্থান হিসেবে নিঃসন্দেহে এটি আপনার জন্য একটি সুখকর জায়গা হবে!’

মানুষ বড়ই অনন্য জীব। আমাদের কৌতুহলের যেমন শেষ নেই, তেমনি লাগামহীন আমাদের স্বপ্ন, আর শখের ধরণও অন্তহীন।

ছোটবেলা থেকেই আমরা কত কী স্বপ্ন দেখি। বড় হয়ে জাহাজ চালাব কিংবা এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছাব আরো কত কী! মনের মধ্যে সেসব শখ কিংবা স্বপ্ন পুষে রাখি। তেমনিই ব্রুস ক্যাম্পবেলের স্বপ্ন ছিল তিন একদিন বিমানে বাস করবেন।  বয়স যখন ১৫, তখন থেকেই তার মনে এই শখ বাসা বাঁধে। খবর সিএনবিসির।

ব্রুস ক্যাম্পবেল যুক্তরাষ্ট্রের একজন নাগরিক। থাকেন ওরেগনের পোর্টল্যান্ডের একটি শহরতলী হিলসবরোতে। সেখানে ৭০'র দশকের শুরুর দিকে ২৫ হাজার ৮০০ ডলার দিয়ে ১০ একরের একটি জায়গা কিনেছিলেন তিনি।

 

নিজের বিমানবাড়ির সামনে ব্রুস ক্যাম্পবেল। ছবি: সিএনবিসি।

 

পেশায় ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ব্রুস ক্যাম্পবেলের বয়স এখন ৭৩ বছর। ১৫ বছর বয়সে একদিন তিনি টেলিভিশনের পর্দায় এক বিমান বোনইয়ার্ড দেখেন। সেই থেকে বিমান নিয়ে কৌতুহলী হয়ে পড়েন তিনি। স্বপ্ন দেখতে থাকেন, একদিন বিমানেই বাসা গড়বেন তিনি।

বড় হয়েও একই স্বপ্ন রয়ে যায় তার। তবে বুঝে উঠতে পারিছিলেন না এটি কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়। ১৯৯৯ সালে পুরোনো বিমান কিনতে একটি স্যালভেইজ কোম্পানি ভাড়া করেন তিনি।

স্যালভেজ কোম্পানি হলো এমন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান যারা পুরোনো যান কিনে এর অংশগুলো বিচ্ছিন্ন করে এবং পরবর্তীতে পুনরায় বিক্রি করে।

কয়েক মাস খোঁজার পর, কোম্পানিটি একটি বিমান খুঁজে পায়, যেটি ছিল একটি বোয়িং ৭২৭ ২০০-প্যাসেঞ্জার জেটলাইনার। এক হাজার ৬৬ বর্গফুটের এই বিমানের ওজন ছিল প্রায় ৩২ হাজার কেজি। এই বিমানটিকে গ্রিসে পাওয়া গিয়েছিল।

বিমানটির সাবেক মালিক ছিলেন ব্যবসায়ী ও ধনকুবের এরিস্টটল ওনাসিস। যুক্তরাষ্টের প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির সাবেক স্ত্রী জ্যাকুলিন কেনেডি ওনাসিসের সাথে এই গ্রিক-আর্জেন্টাইনিয়ান ধনকুবের বিবাহিত ছিলেন। ১৯৭৫ সালে মারা গেলে, এরিস্টটলের মৃতদেহ এই বিমানটির মাধ্যমেই স্থানান্তর করা হয়েছিল।

এই বিমানটির জন্য পুরো এক লাখ ডলার গুণতে হয়েছিল ব্রুসকে। গ্রিস থেকে ওরেগনে এনে বিমানের কিছু অংশ ফেলে তার জমিতে রেখে দেওয়া হয়। ইঞ্জিনসহ বিমানটির আরও কিছু অংশ খুলে ফেলা হয়, যাতে এটি আর উড্ডয়নযোগ্য না থাকে। এই পুরো প্রক্রিয়াটিতে তার খরচ হয়েছিল প্রায় এক লাখ ২০ হাজার ডলার।

শখ মেটাতে গুণতে হচ্ছে লাখ লাখ ডোলার। তবুও তার খুশিতে এতটুকুও ভাটা পড়েনি। 'আপনি যখন এই ধরনের কাঠামোতে বাস করেন, তখন জীবনে আপনার অনেক বেশি পরিপূর্ণ বোধ করবেন,' বলেন তিনি।

'এবং আপনি যদি একজন প্রকৌশলী বা বিজ্ঞানী হন, কিংবা যদি আপনার এমন মহাকাশ প্রযুক্তির চমৎকারিত্ব এবং সৌন্দর্যের প্রতি মুগ্ধতা থাকে, তবে বাসস্থান হিসেবে নিঃসন্দেহে এটি আপনার জন্য একটি সুখকর জায়গা হবে!' যোগ করেন ব্রুস।   
 
ইঞ্জিন এবং অন্যান্য অকেজো যন্ত্রাংশগুলো ছাঁটাই করার পরে, বিমানটিকে বাসাবাড়ির মতো করে সাজিয়ে তুলতে আরও ১৫ হাজার ডলার খরচ করেছেন তিনি। দুই বছর ধরে তিলে তিলে এই শখের বাড়িটিকে সাজিয়ে তুলেছেন বিমান নিয়ে কৌতুহলী এই প্রকৌশলী।

বাড়ির আসবাবপত্র বলতে যা নিতান্তই প্রয়োজনীয় কেবল সেগুলোই রেখেছেন। সুবিধা বিবেচনায়, এমন জিনিস রেখেছেন যা চাইলেই অন্যত্র নিয়ে যাওয়া যাবে। এতে রয়েছে স্থানান্তরযোগ্য শাওয়ার, একটি অস্থায়ী সিংক, বহনযোগ্য ওয়াশিং মেশিন এবং একটি ফ্রিজ। একটি সার্ভিস কার্টও ব্যবহারের জন্য রেখে দেন তিনি, যেটি বিমানে প্যান্ট্রি হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

ব্রুস জানালেন, তিনি রান্নাবাড়া একটু কম করেন। তাই রান্নার জায়গাটা রেখেছেন অল্প পরিসরে। সেখানে চুলার পরিবর্তে রয়েছে কেবল একটি মাইক্রোওয়েভ এবং একটি টোস্টার ওভেন। সেগুলোও খুব কমই ব্যবহার করেন।

কোনো কৌতহলী ব্যক্তি তার এই ভিন্ন ধাঁচের আবাসস্থল দেখতে এলে, কখনোই তাদের ফিরিয়ে দেন না ব্রুস। ছবি: সিএনবিসি।

 

রান্নাঘরের পাশে রয়েছে একটু ফুটন সোফা, যা বড়-ছোট করা যায়। এটি তিনি ঘুমানোর বিছানা এবং কর্মক্ষেত্র - উভয় কাজে ব্যবহার করেন।

এভাবেই ব্রুস ব্যম্পবেল তার বিমান বাড়ি নিজের মতো করে সাজিয়েছেন। কোনো কৌতহলী ব্যক্তি তার এই ভিন্ন ধাঁচের আবাসস্থল দেখতে এলে কখনোই ফিরিয়ে দেন না। বরং টুরগাইডের মতো করেই ঘুরে ঘুরে সবকিছু দেখান।

নিজের ছোটবেলার স্বপ্নকে এভাবে বাস্তবায়িত রূপে রেখে পুরোপুরি সন্তুষ্ট তিনি, নেই কোনো আক্ষেপ। 'আমার স্বপ্নের পিছে ছুটে যাওয়া নিয়ে কোনো অনুশোচনা নেই,' বলে তিনি।

পুরোনো বিমানকে এভাবে কাজে লাগে লাগানোর ব্যাপারটিকে মানুষ ইতিবাচকভাবে দেখবে বলেও তার বিশ্বাস। আশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, 'আমার অতিথিদের সাথে সাক্ষাতের অভিজ্ঞতা বলে, মানুষ এই ব্যাপারটিকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করবে। আমি বিশ্বাস করি, তারা অবসরে যাওয়া প্রতিটি বিমানকে এভাবে লাজে লাগানোয় অনুপ্রাণিত হবে।'

পেশাগত কারণে যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপান - এই দুই দেশে অনবরত যাতায়াতের মধ্যে থাকতে হয় তাকে। তাই তার আশা, একদিন জাপানেও তার একটি বিমান বাড়ি থাকবে।

কথায় বলে, শখের তুলা ৮০ টাকা। তাই অন্যদের কাছে যতই অর্থহীন হোক না কেন, যার যার শখ তার নিজের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান। ব্রুস ক্যাম্পবেলের ক্ষেত্রেও ঠি তা-ই! তবে বিমান বাড়ির জন্য বিমান কেনার ক্ষেত্রে স্যালভেজ কোম্পানির দ্বারস্থ না হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। তার মতে, এর পরিবর্তে সবদিক বিবেচনায়, কেবল ইঞ্জিন অপসারণ করে সম্পূর্ণরূপে অক্ষত এবং কার্যকরী একটি যাত্রীনাহী বিমান কেনাই ভালো।  

 

 

Share This Article