বান্দরবানে সাঁড়াশি অভিযান

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ০৯:৩১, শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৪, ২৩ চৈত্র ১৪৩১
  • আজ যাচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, নিরাপত্তা জোরদার 
  • কেএনএফ নির্মূল পর্যন্ত অভিযান চলবে 
  •  তিন উপজেলায় সশস্ত্র হামলায় স্থবির জনজীবন
  • কেএনএসহ সন্ত্রাসীদের ধরতে খুব শিগগিরই আরও একটি বিশেষ সাঁড়াশি অভিযান শুরু করা হবে।

পার্বত্য জেলা বান্দরবানের তিন উপজেলায় দুই দিনে তিন সরকারি ব্যাংকে ডাকাতি, ১৪টি অস্ত্র লুট, তল্লাশি চৌকিতে হামলা ও ব্যাংক ম্যানেজার অপহরণের জেরে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান চলছে। অভিযানে অংশগ্রহণকারী নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি উপজেলার সম্ভাব্য স্থানে তল্লাশি চালাচ্ছেন। এদিকে অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজার নিজাম উদ্দিন রাসেলকে উদ্ধারের পর গতকাল সকালে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘কেএনএসহ সন্ত্রাসীদের ধরতে খুব শিগগিরই আরও একটি বিশেষ সাঁড়াশি অভিযান শুরু করা হবে।’ তবে সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, র‌্যাবের এ বিশেষ সাঁড়াশি অভিযান এখনো শুরু হয়নি।

 

 আজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান রুমায় গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন। সেখান থেকে ফিরে দুপুর সাড়ে ১২টায় স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। ধারণা করা হচ্ছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের পর তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) বিশেষ সাঁড়াশি অভিযান শুরু করতে পারে। অন্যদিকে রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি উপজেলায় পুলিশের সংখ্যা দ্বিগুণ করা হয়েছে। বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রায়হান কাজেমী জানান, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) কর্তৃপক্ষের কাছে আরও ৪০০ পুলিশ সদস্য চাওয়া হয়েছে। আগামীকাল (আজ) সকাল থেকে তারা ওই এলাকাগুলোয় বিদ্যমান পুলিশের সঙ্গে যুক্ত হবে।

বান্দরবান জেলা সদর এবং রুমা, রোয়াংছড়ি, থানচি এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানে নিরাপত্তা বাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) টহল দিচ্ছে। এলাকাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও স্পর্শকাতর পয়েন্টে রাখা হয়েছে নিরাপত্তাবাহিনী ও বিজিবিকে। স্থানীয় অভিজ্ঞ মহল ধারণা করছে, বড় ধরনের একটি সাঁড়াশি অভিযানের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে এসব নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এর আগে গত বছরে র‌্যাব পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাস ও মৌলবাদ বিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। ওই অভিযানে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র বিপুলসংখ্যক অনুসারী ও শীর্ষ নেতাকে আটকের পর বান্দরবানের দুর্গম এলাকায় কেএনএ’র সঙ্গে জঙ্গি সংগঠনগুলোর গড়ে ওঠা নেটওয়ার্ক অনেকটা ভেঙে যায়। স্থানীয়দের ধারণা, এবারের বিশেষ সাঁড়াশি অভিযান এ অঞ্চল থেকে সন্ত্রাসীদের নির্মূলে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে র‌্যাব। গতকালের সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানায়, কেএনএফ নির্মূল পর্যন্ত এ যৌথ অভিযান চলবে।

 

এদিকে পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) হামলা, ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্র লুটের ঘটনায় স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। বড় কোনো সংঘাতের আশঙ্কায় স্থানীয় অনেক বাসিন্দা এলাকা ছাড়ছেন। থানচি, রুমা ও আলীকদম উপজেলা সদরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। স্থানীয় বাজারগুলোয় ক্রেতার অভাবে অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ। এদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল ঢাকায় বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র তৎপরতা নিয়ে সরকার অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে রয়েছে। সেখানে যৌথ অভিযান চলছে। অচিরেই পরিস্থিতি শান্ত হবে।


যৌথ সাঁড়াশি অভিযান : বান্দরবানে পাহাড়ের নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠী কেএনএফের বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান শুরুর কথা জানিয়েছে র?্যাব। গতকাল সকালে বান্দরবান জেলা পরিষদ মিলনায়তনে র?্যাব আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সেনাবাহিনী, র?্যাব, বিজিবি ও পুলিশের যৌথ এ অভিযান কেএনএফ নির্মূল পর্যন্ত চলবে। সন্ত্রাসীদের দমনে পাহাড়ে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের মতো সব ধরনের কৌশল অবলম্বন করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে অভিযানের বিস্তারিত তুলে ধরেন র?্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের সহকারী পরিচালক খন্দকার আল মঈন। 

 

তিনি বলেন, গত কয়েক দিনে ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্র লুটের ঘটনার দুটি উদ্দেশ্য থাকতে পারে। প্রথমত, টাকা লুটপাট ও অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়া। দ্বিতীয়ত, সক্ষমতা প্রদর্শন করা। তিনি বলেন, কেএনএফ তাদের সমর্থক ও প্রতিদ্বন্দ্বী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে দেখাতে চাইছে, তারা যথেষ্ট শক্তিশালী একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। তাদের সন্ত্রাসীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এ লক্ষ্যে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি কাজ করছিল। কিন্তু সে সুযোগে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে ব্যাংক ডাকাতি, অপহরণ, অস্ত্র লুট, পুলিশ ক্যাম্পে গুলিবর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধ কার্যক্রম চালিয়েছে।

 

সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক নিজাম উদ্দিনকে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা সম্পর্কে খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, রুমা ও থানচি উপজেলায় মঙ্গল ও বুধবার ব্যাংক ডাকাতি ও লুটপাট হয়েছে। ব্যাংক ব্যবস্থাপককে অপহরণ করে সন্ত্রাসীরা। তাঁকে নিরাপদে উদ্ধার করার জন্য বিভিন্ন কৌশল নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অপরাধীদের শনাক্ত করতে সিসিটিভি ফুটেজ ও বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সম্মিলিত সাঁড়াশি অভিযানে কেএনএফ সন্ত্রাসীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। লুট করে নেওয়া ১৪টি অস্ত্র উদ্ধারসহ তাদের নির্মূল করা হবে।

 

বান্দরবানের দুই উপজেলায় মঙ্গলবার রাতে ও বুধবার দুপুরে ১৭ ঘণ্টার মধ্যে দুটি ব্যাংকের তিনটি শাখায় হামলা, অস্ত্র লুট ও অপহরণের ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার রাতে থানচি থানা লক্ষ্য করে গুলি করেছে সশস্ত্র গোষ্ঠী। পরে গভীর রাতে আলীকদম উপজেলায় পুলিশ ও সেনার একটি যৌথ তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এদিকে রুমা থেকে অপহৃত সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক নিজাম উদ্দিন প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ছাড়া পেয়েছেন।

 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বান্দরবান যাচ্ছেন : ব্যাংক ডাকাতি, ম্যানেজার অপহরণ ও সশস্ত্র হামলা ঘটনার পর বান্দরবান পরিদর্শনে যাচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। আজ সকালে তিনি ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে পরিস্থিতি সরেজমিন পরিদর্শন করতে রুমা যাচ্ছেন। সফরসূচি অনুযায়ী, সকাল ৯টায় ঢাকা থেকে রওনা হয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রুমায় পৌঁছাবেন সাড়ে ১০টায়। সেখান থেকে বান্দরবান সদরে যাবেন। দুপুর সাড়ে ১২টায় সার্কিট হাউসে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

বিষয়ঃ বাংলাদেশ

Share This Article