ড. ইউনূস নিজেই যখন লবিস্ট!
তদবিরকারক হিসেবে পরিচিতি পেলেও ইউনূসের শুরুটা তেমন ভালো ছিল না। তবে ২০০৯ সালে নিজের সবচেয়ে কাছের বন্ধু হিলারি ক্লিনটন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতেই পশ্চিমা বিশ্বে তার কদর বেড়ে যায়।
‘লবিস্ট’ তথা 'তদবিরকারক' শব্দটির সঙ্গে অনেকেই পরিচিত। মূলত লবিং সংস্কৃতি আমেরিকা-ইউরোপে বেশ রমরমা ব্যবসা। লাভজনক হওয়ায় মার্কিন সিনেট-কংগ্রেস সদস্যদের কেউ কেউ মূল পেশা হিসেবেই বেছে নিয়েছেন। আর পুঁজিবাদী পশ্চিমাদের সঙ্গে ওঠাবসা থাকায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসও এ খাতায় নাম লিখিয়েছেন অনেক আগে। ‘সামাজিক ব্যবসার’ আড়ালে এটিই তার আয়ের অন্যতম উৎস। হোক বাণিজ্যিক কিংবা রাজনৈতিক; অর্থ পেলে সব কাজেই তদবির করেন এই নোবেলজয়ী।
ইউনূসের লবিং ব্যবসা পুরোনো হলেও বাংলাদেশে আসে ২০০৫ সালে। সেই সময় তাকে লবিস্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন ‘বিজিএমইএ’। আমেরিকায় ডিউটি ফ্রি গার্মেন্টেস পণ্য প্রবেশের অনুমতির জন্য এই অধ্যাপককে কোটি টাকার বিনিময়ে খাটানো হয়েছিল। এজন্য পোশাক শিল্পের নেতাদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী কংগ্রেসম্যানদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির মার্কিন এফডিএ সনদ এনে দিতেও প্রচুর অর্থের বিনিময়ে ড. ইউনূস তদবির চালিয়েছিলেন বলে জানা যায়।
বিভিন্ন তথ্য বলছে, তদবিরকারক হিসেবে পরিচিতি পেলেও ইউনূসের শুরুটা তেমন ভালো ছিল না। তবে ২০০৯ সালে নিজের সবচেয়ে কাছের বন্ধু হিলারি ক্লিনটন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতেই পশ্চিমা বিশ্বে তার কদর বেড়ে যায়। দেশে-বিদেশে বাড়তে থাকে লবিংয়ের কাজও। এসব দেখাদেখি ক্ষমতায় যেতে বিএনপিও ইউনূসকে লবিস্ট হিসেবে বেছে নেয়। এমনকি তার মাধ্যমেই দলটি বারবার যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ দিয়ছিল বলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে। আর এ কারণেই বিএনপির সঙ্গে ইউনূসের সম্পর্ক বাড়ে। শুধু তাই নয়, ইউনূস নিজেও বিএনপির লবিস্ট হিসেবে কাজ করছিলেন বলে কথিত রয়েছে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেও এই নোবেলজয়ীর দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। যুক্তরাষ্ট্র-ইইউ তথা পশ্চিমা বিশ্ব যেন ক্ষমতাসীন সরকারকে চাপে রাখে; এজন্য তার পেছনে বেশ মোটা অংকের অর্থ ঢেলেছেন তারা। এর পরিপ্রেক্ষিতেই র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা, ভিসানীতিসহ বিভিন্ন ধরনের অপতৎপরতা চালিয়েছিলেন মার্কিনিরা। একই সঙ্গে জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ'র মতো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাও বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেছিল। মূলত টাকা পেলে যে কারও জন্যই ভাড়ায় খাটতে পারেন এই অর্থনীতিবিদ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মামলাসহ নানান ঝামেলায় পড়ায় নিজেই বিভিন্ন লবিস্ট ফার্মের দ্বারস্থ হন ইউনূস।
সমালোচকরা বলছেন, ড. ইউনূসের চতুরতা বোঝা বড় দায়। নিজের চেহারাও মুহূর্তে বদলাতে পারেন। কেননা ১৯৯৬ সালে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অন্যতম প্রভাবশালী উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। তার গ্রামীণফোনের লাইসেন্সও দিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। মোটকথা সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে। অথচ নিজের স্বার্থে আঘাত লাগায় বিশ্বে নানাভাবে তদবির চালিয়ে সেই সরকারের সঙ্গেই ‘গাদ্দারি’ করছেন তিনি।