বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস

৩০ পার হলেই ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে হবে

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ১১:৫৫, মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৩, ২৯ কার্তিক ১৪৩০

ডাক্তার দেখাবেন বলে টিকিট কেটে অপেক্ষা করছেন পঞ্চাশোর্ধ আম্বিয়া খাতুন। রাজধানীতে বারডেম জেনারেল হাসপাতালের গেটের সামনে চিকিৎসা নিতে আসা আম্বিয়া খাতুনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তিনি ডায়াবেটিস, প্রেশার আর শ্বাসকষ্টের মতো রোগে ভুগছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে কয়েকবার চিকিৎসাও নিয়েছেন। শ্বাসকষ্টের সমস্যা তার দীর্ঘদিনের। 

আসাদ ও হাছিনা বেগম দম্পতি, দু’জনই ডায়াবেটিসের রোগী। প্রতিদিন নিতে হয় ইনসুলিন। দুই জনের ওষুধের পেছনেই প্রতিমাসে খরচ হচ্ছে ৫ হাজার করে টাকা। এছাড়া নিয়মিত ডাক্তার আর চেকআপের পেছনে খরচ তো আছেই।

jagonews24

আম্বিয়া খাতুন কিংবা আসাদ-হাছিনা দম্পতির মতো ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত মানুষের চিকিৎসা খরচ চালাতেই হিমশিম অবস্থা, দুর্ভোগ তো আছেই।

 

আজ, মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) সারাবিশ্বে পালন করা হচ্ছে ‘বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস’। এবারের প্রতিপাদ্য ‘ডায়াবেটিসের ঝুঁকি জানুন-প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন’। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারিভাবে আলোচনা সভা, বিনামূল্যে ডায়াবেটিস নির্ণয়, র্যালি এবং সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণসহ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে বাংলাদেশেও।

 

বাংলাদেশের শহর ও গ্রামে প্রায় সমানভাবে বাড়ছে ডায়াবেটিসের রোগী। গত দুই বছরে ৫৬ শতাংশ বেড়েছে। নিয়মিত চিকিৎসা না করায় ইনসুলিন নেওয়ার পরও ৮০ ভাগের বেশি রোগীর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই।

 

https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2023March/img-20231113-123943-20231114102909.jpg

দিবসটি উপলক্ষে সোমবার (১৩ নভেম্বর) ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৫৪ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ২০৪৫ সালে ৭৮ কোটিতে পৌঁছানোর আশঙ্কা রয়েছে। ২০২১ সালে বিশ্বে ৬৭ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসের কারণে মৃত্যুবরণ করে। বাংলাদেশে ১ কোটি ৩০ লাখ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। দেশের ৬৫ শতাংশই জানে না তাদের ডায়াবেটিস আছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ১০০ জনের মধ্যে ২৬ জন নারীই গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। যাদের ৬০ শতাংশই পরবর্তীকালে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। এসব রোগীর জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছে মাত্র ৩২০ জন।

অন্যদিকে, দিবসটিকে ঘিরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশে এন্ড্রোক্রাইন সোসাইটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সোমবার (১৩ নভেম্বর)। এতে সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেলের (বিএসএমএমইউ) এন্ডোক্রাইনোলোজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহাজাদা সেলিম বলেন, সর্বশেষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অর্থায়নে যে গবেষণা হয়েছে, তাতে দেখা গেছে, দেশে মোট জনসংখ্যার ১০ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। অর্থাৎ প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিস রোগে ভুগছে। ডায়াবেটিস থেকে অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। এর মধ্যে প্রধান হলো হৃদরোগ। হৃদরোগের ৮০ শতাংশই রোগী ডায়াবেটিসের কারণে মারা যায়। ৪০-৪৫ শতাংশের কিডনি প্রতিস্থাপন প্রয়োজন হয় ডায়াবেটিসের কারণে। এছাড়া অন্ধত্বের অন্যতম প্রধান কারণ ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিস রোগীর ২৯ শতাংশ রেটিনোপ্যাথিতে ভুগছেন। ডায়াবেটিসের কারণে প্রজনন ক্ষমতাও হ্রাস পাচ্ছে।

 

jagonews24

সেন্টার ফর গ্লোবাল হেলথ রিসার্চের প্রকল্প পরিচালক ডা. বিশ্বজিৎ ভৌমিক জাগো নিউজকে বলেন, ২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সালেই ডায়াবেটিস রোগী বেড়েছে ৫৬ শতাংশ। ২০১৯ সালে ছিল ৮৪ লাখ। সেখানে দুই বছরের মাথায় তা গিয়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ৩০ লাখে। যা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর চিত্র। আরও ভয়ের বিষয় হচ্ছে অনেকেই জানেন না তাদের ডায়াবেটিস আছে। উপসর্গ না থাকায় ৬০ ভাগ লোকই জটিলতা হওয়ার পরে চিকিৎসা নেন।



বারডেম একাডেমির পরিচালক ও হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. ফারুক পাঠান বলেন, ডায়াবেটিস সারা জীবনের রোগ। এ রোগ কখনো সম্পূর্ণ সারে না। সারাবিশ্বেই এই রোগটি আছে। এই উপ-মহাদেশে প্রকোপ কিছুটা বেশি। ডায়াবেটিসের কিছু ঝুঁকি আছে পরিবর্তন করা যায় এবং কিছু যায় না। কারও পরিবার, আত্মীয়-স্বজন এবং বংশে কারও ডায়াবেটিস থাকলে সেক্ষেত্রে অন্যরা কায়িক পরিশ্রম না করলে, ওজন ও মেদ বাড়লে ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে থাকেন। এছাড়া হার্টের রোগী, উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, কোলেস্টরেল বেশি, ধূমপান করেন, শরীরে ইনুসলিনের কার্যক্ষমতা কম, তারা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। ঝুঁকি কমাতে পারলে রোগটি প্রতিরোধ সম্ভব।

বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, সারা বিশ্বেই ডায়াবেটিস মহামারি আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশেও ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। নগরায়ন ও জীবনযাপনের ধরনের পরিবর্তনের কারণে দিন দিন ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ডায়াবেটিস একবার হলেই চিকিৎসা নিতে হয় আজীবন। অতিরিক্ত ফাস্টফুড ও চর্বিযুক্ত খাবার খেলে, শারীরিক পরিশ্রম না করলে, নিয়মিত শরীরচর্চা না করলে, স্বাভাবিকের চেয়ে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বেড়ে গেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। যাদের ডায়াবেটিস নেই, তারা যদি ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে জানতে পারেন এবং সেসব ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে পারেন তাহলে অনেকটাই প্রতিরোধ সম্ভব। এছাড়াও সঠিক খাদ্যাভাস এবং জীবনমানের পরিবর্তন করে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও ঝুঁকি এড়ানো যায়। ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা থেকেও রক্ষা পাওয়া সম্ভব।



এ কে আজাদ খান আরও বলেন, বর্তমান চিকিৎসা ব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণ করা যায় না এমন কোনো ডায়াবেটিস রোগ নেই। দেশে বেশিরভাগ ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগী নিয়ন্ত্রণ করেন না বা করতে জানেন না। বাংলাদেশে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের মহামারি চলছে। শুরুতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো উপসর্গ থাকে না। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে এটি। এজন্য ৪০ বছরের বেশি সবার ডায়াবেটিস পরীক্ষা জরুরি। যাদের ঝুঁকি বেশি তারা ৩০ বছর হলেই পরীক্ষা করবে।

বিষয়ঃ বাংলাদেশ

Share This Article


থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান

মরিশাসের মন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের তথ্য প্রতিমন্ত্রীর বৈঠক

রোববার থেকে খুলছে প্রাথমিক বিদ্যালয়, বন্ধ থাকবে প্রাক-প্রাথমিক

শিশু-কিশোরদের সঙ্গে রাস্তায় ভিজলেন মেয়র আতিক

শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে হবে: নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী

বছরে একটি বিসিএস সম্পন্ন করার পরিকল্পনা পিএসসির

৭৬ বছরের রেকর্ড ভাঙলো তাপপ্রবাহ

বাংলাদেশ-ভুটান ৯ম বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত

মাদকের অপব্যবহার বিষয়ক সম্মেলনে যোগ দিলেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী

জলবায়ু অভিযোজনে সহায়তা দ্বিগুণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে সরকার কাজ করছে