বিদ্যুৎ বিপর্যয়: এড়ানোর সুযোগ ছিল কি?
বিভিন্ন সংকট দেখা দিলেও গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে পরিস্থিতি অনেকটা সামলে ওঠে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশ। কিন্তু ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় অর্থনীতিতে ফের চলছে ধীরগতি। এবার নতুন করে সংকট দেখা দিয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে।
করোনা মহামারি আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় আর্থিক মন্দার মুখে পড়ে গোটা বিশ্ব। পাল্টে যায় প্রায় সব দেশেরই সমীকরণ। বাংলাদেশেও পড়ে এর প্রভাব। তবে বিভিন্ন সংকট দেখা দিলেও গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে পরিস্থিতি অনেকটা সামলে ওঠে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশ। কিন্তু ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় অর্থনীতিতে ফের চলছে ধীরগতি। এবার নতুন করে সংকট দেখা দিয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। ফলে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কবলে পড়ে সারাদেশ। কিন্তু কোনোভাবেই কি এই বিপর্যয় এড়ানো যেত না?
বৈশ্বিক সংকটের ফলে অন্যান্য দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশও ক্ষতির সম্মুখীন হয়। বিঘ্ন ঘটে আমদানি-রফতানিতেও। চাহিদা থাকলেও আমদানি করতে পারেনি জ্বালানিসহ বিভিন্ন পণ্য। লেটার অব ক্রেডিট বা এলসি’র টাকা পরিশোধ করলেও সংকট যেন পিছু ছাড়ছে না। জলপথেও ছিল নানা সমস্যা। একই সঙ্গে পর্যাপ্ত কয়লা না মেলায় করা যায়নি আমদানিও। এর ফলে ৫ জুনের পর পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা। বলা হচ্ছে ডলার সংকটে কয়লার মূল্য পরিশোধ করতে না পারাই এর মূল কারণ। তবে এটাই কি মূল কারণ? কেনই বা পরিশোধ করা গেল না?
তথ্যমতে, বিশ্বের কোনো দেশে নজির না থাকলেও বাংলাদেশে বিদ্যুতে ব্যাপক ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। ১০০ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহারে গ্রাহকরা ৫২৯.৫০ টাকা দিলেও সরকারকে লোকসান বাবদ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে ১০৭০.৫০ টাকা। কেননা ১০০ ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় খরচ হয় ১৬০০ টাকা। এ নিয়ে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ বহুবার চাপ দিলেও দেশের জনগণের স্বার্থে সরকার তুলে নেয়নি ভর্তুকি। বৈশ্বিক সংকটেও দিচ্ছে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবারহ। তবে গ্রীষ্মের অতিরিক্ত গরম আর কয়লা সংকটে চলছে সাময়িক লোডশেডিং।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জ্বালানি কিংবা কয়লা সংকটের মূল কারণ হলো বিশ্বের অস্থিতিশীল পরিবেশ। সামগ্রিক দিক বিবেচনা করলে এই বিদ্যুৎ বিপর্যয় এড়ানোর সুযোগ ছিল না সরকারের। কেননা আর্থিক বিভিন্ন সংকটের মাঝেও এর আগে সরকার ডিজেল সরবরাহ করেছে। তবে বর্তমানে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া আর কয়লার বাজারে অস্থিরতা থাকা, উপরন্ত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর নানানরকম নিষেধাজ্ঞা ও মানি ট্রান্সফারজনিত সমস্যা থাকায় চাইলেও বিদ্যুতের এই জ্বালানি কিনতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে বিকল্প পথে কয়লা আমদানি করা হচ্ছে। আগামী ৮-১০ দিনের মধ্যেই এ সংকট কেটে যাবে বলেও ধারণা তাদের।