যশোর থেকে শুরু হলো আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রচারণা

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ রাত ০৮:৫৯, বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২২, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪২৯

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হতে যশোর থেকে প্রচারণা শুরু করলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি যশোরবাসীর কাছে ভোট ও দোয়া চেয়েছেন। একইসঙ্গে আগামী নির্বাচনে তার দলীয় প্রার্থীদের জয়যুক্ত করতে সবার কাছে ওয়াদা চেয়েছেন। 

বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) বিকাল সোয়া ৩টায় যশোরের শামসুল হুদা স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগের সমাবেশে জনতার উদ্দেশে ভাষণ দেন তিনি। ৩৫ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডের ভাষণে যশোর ও দক্ষিণ অঞ্চলের জন্য সম্পন্ন করা ও চলমান থাকা বিভিন্ন প্রকল্পের বিষয়ে তুলে ধরেন তিনি। সেইসঙ্গে সারা দেশের উন্নয়নের চিত্র উল্লেখ করার পাশাপাশি আগামী দিনে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়নের পরিকল্পনার কথা জানান।

যশোর থেকে নির্বাচনি প্রচারণা শুরুর ইঙ্গিত দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ সময় করোনার কারণে এতদিন সমাবেশ করতে পারেনি বলেও জানান। তিনি বলেন, ‘আজকে আমার প্রথম জনসভা এই যশোরে। যে মাটিতে আমার নানা (শেখ জহুরুল হক) শুয়ে আছেন। যে যশোর মুক্তিযুদ্ধের সময় বিরাট অবদান রেখেছে, যে যশোর খেজুরের গুড়ের, ফুলের যশোর। উন্নয়নের একটা দৃষ্টান্ত। সেই যশোরে জনসভা করতে পেরে আমি আনন্দিত।’

বিগত দিনে আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আপনাদের কাছে ওয়াদা চাই, আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন। আপনারা হাত তুলে ওয়াদা করেন ভোট দেবেন কিনা। হাত তুলে বলুন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে আবারও নৌকায় ভোট দেবেন।’

তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচনে আপনারা এখানে নৌকার সব প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেছেন। এজন্য আপনাদের প্রতি জানাই আন্তরিক অভিনন্দন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনি ইশতেহার অনুযায়ী আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। সাবমেরিন ক্যাবল এবং ব্রডব্যান্ড ইউনিয়নে পৌঁছে গেছে। এই যশোর থেকে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের যাত্রা শুরু করেছিলাম। এই যশোরে নির্মিত হয়েছে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইটি পার্ক। যেখানে প্রায় দেড় দুই হাজার ছেলেমেয়ের কর্মসংস্থান হয়েছে। এখানে বিদেশ থেকে অনেক বিনিয়োগ আসছে। আমরা এখানে বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা করেছি। সব উন্নয়নে কাজ করেছি। সব প্রাইমারি স্কুলে নতুন ভবন করেছি। প্রত্যেক উপজেলায় সরকারি কলেজ করেছি। বিএনপির আমলে সাক্ষরতা হার ছিল ৪৫ শতাংশ, আজকে তা ৭৫ শতাংশে উঠ গেছে। বিনা পয়সায় বই দিচ্ছি। দুই কোটি ২০ লাখ ছেলেমেয়েকে বৃত্তি ও উপবৃত্তি দিচ্ছি। বাবা-মার খরচ কমানোর জন্য আমরা সহযোগিতা করছি।’

যশোর-৭আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের জয়যুক্ত করতে সবার কাছে ওয়াদা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন জিডিপি ছিল ৩০০ ডলার। আর এখন আমাদের জিডিপি দুই হাজার ৮২৪ ডলার। আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ক্ষমতা নিয়েছিলাম, তখন রিজার্ভ ছিল মাত্র পাঁচ বিলিয়ন ডলার, আমরা পাঁচ বিলিয়ন ডলার থেকে ৪৮ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ করেছি। রিজার্ভ কমা নিয়ে যারা প্রশ্ন করেন, তাদের বলি সরকার বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ খাতে জনগণের উন্নতির জন্য রিজার্ভ থেকে আট বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। জনগণের অর্থ জনকল্যাণে বিনিয়োগ হয়েছে।’

ডিজিটাল উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বেনাপোলকে আমরা উন্নত করে অটোমেশন করে দিয়েছি। ডিজিটাল পদ্ধতিতে যাতে সেখানে মাল আসা-যাওয়া করতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি। আমরা করেছি মধুমতি সেতু। যশোর ও নড়াইলের যোগাযোগের জন্য ৯৬ সালেই রাস্তা করে দিয়েছি। প্রত্যেক এলাকায় আমরা আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলছি। পদ্মা সেতু হওয়ায় আপনারা কত সহজে যাতায়াত করতে পারেন। দ্রুত ঢাকা চলে যেতে পারেন। এখানে উৎপাদিত সব পণ্য দ্রুত ঢাকা চলে যেতে পারে। যশোর এয়ারপোর্ট আরও উন্নত করে দেওয়া হচ্ছে। যশোর থেকে শুধু ঢাকা নয়, কক্সবাজারের রুটও আমরা চালু করেছি। পদ্মা সেতু হওয়ায় এখানে যোগাযোগ বেড়েছে। ঢাকা থেকে মালামাল এখন আর চট্টগ্রাম যেতে চায় না, মোংলা বন্দরে যেতে চায়। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়া মোংলা বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা এসে চালু করেছি। রামপালে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে। সেটি হলে এখানে আর কোনও কষ্ট থাকবে না। খুলনায় প্রথম বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র করেছি; যার সুবিধা যশোরবাসী পেয়েছেন। অভয়নগরে আমরা একটা ইপিজেড করে দিচ্ছি। সেখানে ৪০০টি শিল্প প্লট হবে। বহু মানুষের কর্মসংস্থান হবে।’

আমরা যুব সমাজের অনেক সুযোগ সৃষ্টি করেছি জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘শুধু লেখাপড়া করে কাজের পেছনে ছুটিও না, নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। নিজে কাজ করতে হবে। কর্মসংস্থান ব্যাংক করে দিয়েছি, যেই ব্যাংকের মাধ্যমে বিনা জামানতে দুই লাখ টাকা পাওয়া যায়। এককভাবে যৌথভাবে এই ঋণ নেওয়া যাবে। ইয়াং বাংলাকে আইটি বিষয়ে ট্রেনিং দিচ্ছি। ফ্রিল্যান্সারদের জন্যও রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এই যুগে কেউ বেকার থাকতে পারবে না, কিছু না কিছু করতে হবে। সেই সুযোগটা আমরা করে দিয়েছি।’

এর আগে সকাল থেকে জনসভার মাঠ ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। সকাল থেকে চলে সাংস্কৃতিক নানা পরিবেশনা। দুপুর ১২টার পর জনসভার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এতে যশোর ও আশপাশের জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের সঞ্চালনায় জনসভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য্য, আবদুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমুখ। 

জনসভার প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জনসভা মঞ্চে আসেন দুপুর আড়াইটার পর। বঙ্গবন্ধুকন্যাকে স্বাগত জানিয়ে স্লোগান দেন নেতাকর্মীরা। তিনি হাত নেড়ে অভিবাদন জানান। পরে তার সম্মানে যশোরের শিল্পীরা নৃত্য পরিবেশ করেন।

যশোর-১৪নেতাকর্মীরা নানা রঙের গেঞ্জি ও ক্যাপ পরে এবং বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র সাজিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে জনসভায় আসেন

২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে যশোরে জনসভা করেছিলেন শেখ হাসিনা। পাঁচ বছর পর হওয়া জনসভা ঘিরে যশোরে ছিল সাজ সাজ রব। সকাল থেকে জেলা ও বিভিন্ন উপজেলাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে জড়ো হতে থাকেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে জনসমাগম স্টেডিয়াম ছাড়িয়ে পুরো শহরে ছড়িয়ে পড়ে।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নানা রঙের গেঞ্জি ও ক্যাপ পরে এবং বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র সাজিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে জনসভায় আসেন। তাদের অনেকের হাতে ছিল জাতীয় ও দলীয় পতাকা। স্থানীয় নেতা এবং এমপিদের অনুসারীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জনসভায় যোগ দেন। নেতাকর্মী ছাড়াও স্থানীয় নানা শ্রেণিপেশার মানুষ জনসভায় অংশ নেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতির পরবর্তী জনসভা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর শহর চট্টগ্রামে। আগামী ৪ ডিসেম্বর নগরীর পলোগ্রাউন্ড অনুষ্ঠিত হবে। তারপরে ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজারে জনসভা করবেন তিনি। উভয় জনসভায় আগামী নির্বাচনে নৌকার পক্ষে শেখ হাসিনা ভোট চাইতে পারেন।

Share This Article


বিশ্বব্যাপী সব যুদ্ধ বন্ধের উদাত্ত আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

পাট শিল্পের উন্নয়নে জুট কাউন্সিল গঠন করা হবে

২০২৮-এ বাংলাদেশ হবে ১৯তম অর্থনীতি

যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দ্বিমুখী নীতির অভিযোগ তুরস্কের

মধুখালীর ঘটনায় নিহতদের বাড়িতে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী

চলবে তাপপ্রবাহ, আরও ৩ দিনের হিট অ্যালার্ট

মিয়ানমারের ২৮৮ সেনা ও বিজিপি সদস্যদের হস্তান্তর

উত্তপ্ত মধুখালী, পুলিশের ওপর হামলা, সংঘর্ষে প্রাণ নাশ!

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিকে সাংবাদিকদের ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

ছয়দিনের সফরে ব্যাংককে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী

মার্কিন সিনেটে ইউক্রেন-ইসরায়েল সহায়তা বিল পাস

প্রচণ্ড গরমে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সতর্ক থাকার পরামর্শ