মাহে রমজানকে স্বাগত জানিয়ে মহানবীর ভাষণ

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ বিকাল ০৩:২১, মঙ্গলবার, ১২ মার্চ, ২০২৪, ২৭ ফাল্গুন ১৪৩০

আহলান সাহলান মাহে রমজান। নেক আমল অর্জনের মাস পবিত্র মাহে রমজান। এই মাস রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতে পরিপূর্ণ। রমজানের চাঁদের আগমনে এক মাস সিয়াম সাধনা শুরু হলো। এ মাস ২৯ দিন হতে পারে, ৩০ দিনও হতে পারে। এ মাসে রোজা পালন করা প্রত্যেক জ্ঞানসম্পন্ন ইমানদার নর-নারীর ওপর আল্লাহতায়ালা ফরজ তথা অত্যাবশ্যক করে দিয়েছেন। আল্লাহ  পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর সিয়াম (রোজা) ফরজ করা হয়েছে। যেমনিভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার। (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৩)।’

 

‘সিয়াম নির্দিষ্ট কয়েকদিনের। তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে অথবা সফরে থাকলে অন্য সময় এই (রোজার) সংখ্যা পূর্ণ করবে। যাদের জন্য অতিশয় কষ্টদায়ক হয় তাদের কর্তব্য রমজানের রোজার পরিবর্তে ফিদইয়া-একজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করা। (সাহরি ইফতার রাতের খাবার দেবে)। যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎ কাজ করে তবে তা তার পক্ষে অধিক কল্যাণকর। আর সিয়াম পালন করাই তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণকর যদি তোমরা তা জানতে।’ (সুরা বাকারা-১৮৪)

‘রমজান মাস, এ মাসেই মানুষের জন্য আলোর দিশা এবং সৎ পথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্য অসত্যের পার্থক্যকারীরূপে (বিশ্ববাসীর ওপর) কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে তারা যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে এবং কেউ অসুস্থ থাকলে কিংবা সফরে থাকলে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য যা সহজ তাই চান এবং যা তোমাদের জন্য কষ্টকর তা চান না, এজন্য যে তোমাদের (রোজার) সংখ্যা পূর্ণ করবে এবং তোমাদের সৎ পথে পরিচালিত করার কারণে তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করবে এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার।’ (সুরা বাকারা-১৮৫)

রমজানের রোজা সম্পর্কে প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি বলেছেন, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পরিপূর্ণ বিশ্বাস ও সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসের সিয়াম (রোজা) পালন করবে, তার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী গুণাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)

রমজান মাসের প্রস্তুতি ও আমল সম্পর্কে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিশ্ববাসীর উদ্দেশ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ভাষণে পবিত্র রমজান মাসের দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। যা আমাদের সবার জানা একান্ত প্রয়োজন। প্রখ্যাত সাহাবি হজরত সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার শাবান মাসের শেষ দিন রসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের উদ্দেশে ভাষণ প্রদান করলেন, ‘হে লোক সকল! তোমাদের ওপরে এক মহান মাস, এক কল্যাণময় মাস, ছায়া বিস্তার করেছে। এটা এমন মাস, যাতে এমন একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম। আল্লাহতায়ালা এ মাসের রোজাকে ফরজ করেছেন এবং রাতে নামাজ পড়াকে নফল করেছেন। যে ব্যক্তি এ মাসে আল্লাহর নৈকট্য চেয়ে একটি নেক কাজ করবে, সে ওই ব্যক্তির সমান হবে, যে অন্য মাসে ৭০টি ফরজ আদায় করেছে। এ মাস ধৈর্যের মাস। আর ধৈর্য এমন একটি গুণ, যার প্রতিদান হলো জান্নাত। এটা পারস্পরিক সহানুভূতির মাস। এটা ওই মাস, যাতে মুমিন ব্যক্তির রিজিক বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এ মাসে যে ব্যক্তি একজন রোজাদারকে ইফতার করাবে, এটা তার পক্ষে তার গুনাহগুলোর জন্য ক্ষমাস্বরূপ হবে এবং তার নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির কারণ হবে। আর তাকে রোজাদারের সমান সওয়াব প্রদান করা হবে, এতে তার সওয়াব থেকে কিছুই কমানো হবে না। হাদিস শরিফ বর্ণনাকারী সাহাবি বলেন, আমরা বললাম, ইয়া রসুলুল্লাহ (সা.)! আমাদের প্রত্যেক ব্যক্তি এমন সামর্থ্য রাখে না যা দ্বারা রোজাদারকে ইফতার করাতে পারে। তখন রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আল্লাহতায়ালা এ সওয়াব ওই ব্যক্তিকেও প্রদান করেন যে কোনো রোজাদারকে এক ঢোক দুধ দ্বারা, একটি খেজুর দ্বারা অথবা এক ঢোক পানি দ্বারা ইফতার করায়। যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে পরিতৃপ্তির সঙ্গে ভোজন করায়, আল্লাহতায়ালা তাকে আমার হাউসে কাউসার থেকে পানীয় পান করাবেন। ফলে জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত সে কখনো তৃষ্ণার্ত হবে না। এটা এমন একটি মাস, যার প্রথম অংশ রহমত, মধ্য অংশ ক্ষমা এবং শেষ অংশ জাহান্নাম থেকে মুক্তি। যে ব্যক্তি এ মাসে নিজের দাস-দাসীদের কর্মভার হালকা করে দেবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করবেন। (বায়হাকি, মিশকাতুল মাছাবিহ, কিতাবুস সাওম, হাদিস ১৮৬৮)।

আল্লাহতায়ালা প্রিয় নবীজি (সা.)-এর উসিলায় মুসলিম বিশ্বের সবাইকে পবিত্র এ রমজান মাসে সুস্থ শরীরে বেশি বেশি নেক আমল করে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হিসেবে জান্নাতের মেহমান হওয়ার  তৌফিক দান করুন। আমিন।

Share This Article