রোজাদারের জন্য যেভাবে সাজানো হয় জান্নাত

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ০৯:৩৫, মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল, ২০২৪, ১৯ চৈত্র ১৪৩১

রোজা আল্লাহর একটি প্রিয় আমল। কোরআন ও হাদিসে রোজা ও রমজানের এমন কিছু পুরস্কারের বর্ণনা এসেছে, যা অন্য আমলগুলোর ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না। যেমন রমজানে রোজাদারের জন্য জান্নাত সুসজ্জিত করা, জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া ইত্যাদি। এসব বিষয় রোজা ও রমজানের বিশেষ মর্যাদা প্রমাণ করে।

 

মুমিনের আসল ঠিকানা জান্নাত

জান্নাতই মুমিনের আসল ঠিকানা। পৃথিবীতে মুমিন এসেছে তা উপার্জন করতে। তাই সে নিজের জীবন ও সম্পদ দিয়ে জান্নাত উপার্জনের চেষ্টা করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের জীবন ও সম্পদ কিনে নিয়েছেন, তাদের জন্য জান্নাত আছে এর বিনিময়ে।’
(সুরা : তাওবা, আয়াত : ১১১)

আল্লাহ ডাকছেন জান্নাতের পথে

আল্লাহ মুমিনদের জন্য জান্নাত সৃষ্টি করেছেন এবং প্রতিনিয়ত তাদের জান্নাতের পথেই আহ্বান করছেন। সুতরাং মুমিনের দায়িত্ব হলো সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে জান্নাতের পথে অগ্রসর হওয়া। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ শান্তির আবাসের দিকে আহ্বান করেন এবং যাকে ইচ্ছা সরল পথে পরিচালিত করেন।’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ২৫)

যেভাবে জান্নাত সাজানো হয়

রোজাদারের সম্মানে জান্নাতে নানা ধরনের আয়োজন হয়ে থাকে।

যার কয়েকটি হলো—
১. বছরজুড়ে সাজসজ্জা : আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রমজানের চাঁদ ওঠার পর একদিন নবীজি (সা.) বলেন, বান্দা যদি রমজানের মর্যাদা সম্পর্কে জানত তবে সে কামনা করত যেন পুরো বছরই রমজান হয়। তখন খুজাআ গোত্রের এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর নবী! আপনি আমাদের বর্ণনা করুন। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই রমজানের জন্য জান্নাতকে বছরের প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত সুসজ্জিত করা হয়। রমজানের প্রথম দিন আরশের নিচ থেকে বাতাস প্রবাহিত হয়। ফলে জান্নাতের পাতা ঝরে যায়।

জান্নাতের হুররা তা দেখে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন : হে আল্লাহ! এই মাসে আপনি আমাদের এমন স্বামী দান করুন, যাদের দেখে আমাদের চোখ শীতল হয় এবং আমাদের দেখে তাদের চোখ শীতল হয়। আল্লাহ তাঁদের দোয়ার উত্তরে বলেন, আমার যে বান্দা রমজানের একদিন রোজা রাখে সে জান্নাতের হুরদের স্ত্রী হিসেবে লাভ করবে। (সহিহ ইবনে খুজাইম, হাদিস : ১৮৮৬)
২. বিশেষ দরজা স্থাপন : আল্লাহ জান্নাতে রোজাদারের জন্য বিশেষ দরজা স্থাপন করবেন, যা দিয়ে কেবল মুমিনরাই প্রবেশ করবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, জান্নাতের রাইয়্যান নামক একটি দরজা আছে। এই দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন রোজাদাররাই প্রবেশ করবে। তাদের ব্যতীত আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।

(সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮৯৬)

৩. দরজা খুলে দেওয়া : রমজানে জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন রমজান মাস আসে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় আর শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখা হয়। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২১০২)

৪. বিশেষ ঘর স্থাপন : আল্লাহ রোজাদারের জন্য জান্নাতে বিশেষ ঘর দান করবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, জান্নাতের প্রাসাদগুলো এমন হবে যে এর ভেতর থেকে বাইরের সব কিছু দেখা যাবে এবং বাইরে থেকে ভেতরের সব কিছু দেখা যাবে। এক বেদুইন উঠে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসুল! এসব প্রাসাদ কাদের জন্য? তিনি বললেন, যারা উত্তম ও সুমিষ্ট ভাষায় বলে, ক্ষুধার্তকে খাবার দেয়, প্রায়ই রোজা রাখে এবং লোকেরা রাতে ঘুমিয়ে থাকাবস্থায় জাগ্রত থেকে আল্লাহ‌ তাআলার জন্য নামাজ আদায় করে তাদের জন্য।

(সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৫২৭)

৫. তৃষ্ণা থেকে চিরমুক্তি দান : আল্লাহ জান্নাতে রোজাদারদের তৃষ্ণা থেকে চিরমুক্তি দান করবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, নিশ্চয়ই জান্নাতে একটি দরজা আছে, যাকে রাইয়ান বলা হয়। কিয়ামতের দিন বলা হবে কোথায় রোজা পালনকারীরা? তোমরা কেন রাইয়ানের দিকে আসছ না? যে ব্যক্তি সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে সে কখনো তৃষ্ণার্ত হবে না।

(সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২২৩৭)

পুরস্কার যাদের জন্য

রোজাদারের জন্য আল্লাহ যে পুরস্কার ঘোষণা করেছেন তা লাভ করার প্রধান শর্ত দুটি :

১. নিষ্ঠার সঙ্গে রোজা রাখা : এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি বিশ্বাস ও নিষ্ঠার সঙ্গে কদরের রাতে নামাজ পড়ে (ইবাদত করে) তার পূর্ববর্তী সময়ের গুনাহ ক্ষমা করা হয়।

(সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯০১)

২. রোজার দাবি পূরণ করা : রোজার প্রধান দাবি হলো আল্লাহভীতি অর্জনকরত পাপ পরিহার করা। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, রোজা ঢালস্বরূপ। সুতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং মূর্খের মতো কাজ করবে না। যদি কেউ তার সঙ্গে ঝগড়া করতে চায়, তাকে গালি দেয়, তবে সে যেন দুইবার বলে, আমি রোজাদার।

(সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮৯৪)

আর যারা রোজার দাবি পূরণ করে না তাদের ব্যাপারে তিনি বলেছেন, কত রোজাদার আছে যাদের রোজার বিনিময়ে ক্ষুধা ছাড়া আর কিছুই জোটে না। কত নামাজ আদায়কারী আছে যাদের রাত জাগরণ ছাড়া আর কিছুই জোটে না। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬৯০)

জান্নাতের সব জানা যায় না

রোজাদার বা অন্য কোনো নেক আমলের প্রতিদানে আল্লাহ মুমিনের জন্য কী কী পুরস্কার রেখেছেন তা পুরোপুরি জানা সম্ভব নয়। কেননা জান্নাত অদৃশ্য জগতের অংশ। আর অদৃশ্য জগতের সামান্য অংশই আল্লাহ ওহির মাধ্যম মানুষকে অবগত করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘কেউই জানে না তাদের জন্য নয়নপ্রীতিকর কী লুকিয়ে রাখা হয়েছে তাদের কৃতকর্মের

পুরস্কারস্বরূপ।’ (সুরা : সাজদা, আয়াত : ১৭)

হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন, ‘আমি আমার নেককার বান্দাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি, যা কোনো চোখ দেখেনি, কোনো কান শোনেনি, কোনো মানুষের কল্পনায়ও আসেনি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৪৯৮)

Share This Article