রমজান শেষে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির মূল্যায়ন

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ০৯:৪৮, সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৪, ২৫ চৈত্র ১৪৩১

দেখতে দেখতে চলে গেল পুণ্যের মাস পবিত্র রমজান। মুসলমানদের জীবনে রমজান আসে পরিবর্তনের বার্তা নিয়ে, জীবনকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর তাগিদ নিয়ে। রমজান এলো, রমজান গেল, কিন্তু আমাদের প্রাপ্তি কতটুকুু—এ নিয়ে হিসাব-নিকাশ করার সময় হয়েছে। রমজান হলো মুমিনের জন্য বার্ষিক সুযোগ, যেন সে অন্ধকার থেকে আলোর পথে, গোমরাহি থেকে হিদায়াতের পথে আসতে পারে।

 

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘রমজান মাসই হলো সেই মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হিদায়াত এবং সত্যপথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য বিধানকারী।’
(সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৫)

মাহে রমজানের রোজা মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজজীবনে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে চলার শিক্ষা দেয়। হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি ও আত্ম-অহংবোধ ভুলে গিয়ে সুখী, সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী সমাজ প্রতিষ্ঠার মাসই হলো রমজান। রোজা মানুষকে পার্থিব লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, পরচর্চা, পরনিন্দা, মিথ্যাচার, প্রতারণা, অতিরিক্ত সম্পদ অর্জনের আকাঙ্ক্ষা প্রভৃতি থেকে দূরে সরিয়ে রেখে আত্মসংযমের শিক্ষা দেয়।
রোজা মানুষকে আত্মনিয়ন্ত্রণ, মিতাচার, মিতব্যয়িতা ও পারস্পরিক ভালোবাসার শিক্ষা দেয়। রমজানে বিশেষ বিশেষ ইবাদতের বিধান দেওয়া হয়েছে। যেমন—সিয়াম সাধনা, তারাবি, রোজাদারকে ইফতার করানো, ইতিকাফ, কোরআন তিলাওয়াত, দান-সদকা, সহমর্মিতা প্রকাশ, শবেকদর অন্বেষণ, ওমরাহ পালনসহ বহু ইবাদতের বিধান রয়েছে। ভাবার বিষয় হলো, আমরা কতটুকু আমল করতে পেরেছি, কতটুকু নিজেকে আলোকিত মানুষরূপে গড়ে তুলতে পেরেছি, আত্মশুদ্ধির এই মাসে আমরা নিজেদের কতটা শুধরে নিতে পেরেছি, ইবাদতের বসন্ত মৌসুমে কী পরিমাণ পুণ্যের ফসল ঘরে তুলতে পেরেছি, কোরআন নাজিলের মাসে আমাদের জীবনকে কতটা কোরআনময় করতে পেরেছি, তাকওয়া অর্জনের মাসে আমরা কতটা খোদাভীতি অর্জন করতে পেরেছি, রমজানের দাবি আমাদের জীবনে কী পরিমাণ বাস্তবায়িত হয়েছে—এসবের যোগ-বিয়োগ করার সময় এখনই।

সুফিবাদের পরিভাষায় এ হিসাব-নিকাশ করাকে ‘মুহাসাবা’ বলা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষের হিসাব-নিকাশের সময় ঘনিয়ে এসেছে, অথচ তারা এখনো উদাসীনতার মধ্যে বিমুখ হয়ে আছে।’
(সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ১)

ইসলামে আত্মপর্যালোচনার ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কোরআন-সুন্নাহে এ বিষয়ে সবিশেষ তাগিদ এসেছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো।

এবং প্রত্যেকের উচিত আগামীর জন্য সে কী করেছে তা খতিয়ে দেখা...।’
(সুরা : হাশর, আয়াত : ১৮)

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, বুদ্ধিমান ওই ব্যক্তি, যে নিজের পর্যালোচনা করে এবং মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেয়। আর নির্বোধ ও অক্ষম সেই ব্যক্তি, যে মনোবৃত্তির অনুসরণ করে এবং অলীক কল্পনায় ডুবে থাকে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৫৯)

আত্মপর্যালোচনার বহু উপকারিতা আছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—

নিজের অপরাধ সম্পর্কে অবগত হওয়া। একজন মানুষ সফল হতে চাইলে নিজের দোষ চিহ্নিত করে সেগুলো সংশোধন করার বিকল্প নেই। পাশাপাশি মুহাসাবার মাধ্যমে যখন একজন মুমিন স্বীয় অপরাধ সম্পর্কে অবগত হয়, তখন তার মধ্যে আত্মশুদ্ধির প্রেরণা জাগ্রত হয়। আর নিশ্চয়ই আত্মশুদ্ধি মুমিনের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যারা আত্মশুদ্ধি করে তাদের ব্যাপারে কোরআনে বলা হচ্ছে, ‘যে আত্মশুদ্ধি করে সে সফল হয়।’

(সুরা : শামস, আয়াত : ৯)

আর মুহাসাবার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামত সম্পর্কে অবগত হয়। ফলে সে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে আর আল্লাহ তাআলাও তার নিয়ামত বাড়িয়ে দেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘...তোমরা যদি শুকরিয়া আদায় করো, আমি তোমাদের নিয়ামত বাড়িয়ে দেব।’

(সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৭)

তাই এখন সময় এসেছে হিসাব-নিকাশের। জীবনে অগ্রযাত্রার জন্য প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির মূল্যায়ন খুবই জরুরি। যদি প্রত্যাশিত প্রাপ্তি হয় তাহলে শুকরিয়া আদায় করতে হবে, অন্যথায় এখনো সুযোগ আছে তাওবা করার, নিজেকে শুধরে নেওয়ার এবং অনুতপ্ত হয়ে প্রভুর দরবারে ফিরে আসার।

Share This Article