রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদরের সন্ধান

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ দুপুর ০২:৪০, রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০২৪, ১৭ চৈত্র ১৪৩০

লাইলাতুল কদর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত। এ রাতের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে কোরআনে স্বতন্ত্র একটি সুরা নাজিল করা হয়েছে। সুরা দুখানে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। রমজানের পূর্ব থেকেই রাসুলুল্লাহ (সা.) লাইলাতুল কদরের কথা গুরুত্বের সঙ্গে বয়ান করেছেন।

 

এখানে নির্বাচিত কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করা হলো—
লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান

লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ দশকের মধ্যে লুকানো আছে। বিশেষ করে বিজোড় রাতগুলোতে হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। বিভিন্ন ইবাদতের মাধ্যমে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধানের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন এবং বলতেন তোমরা রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর তালাশ করো।
(বুখারি, হাদিস : ১৮৯৩; মুসলিম, হাদিস : ২৬৪৭)
লাইলাতুল কদরের সম্ভাব্য তারিখ

একাধিক হাদিসের ভাষ্য মতে, শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদর হয়ে থাকে। এ জন্য রমজানের ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তারিখে গুরুত্বের সঙ্গে ইবাদত করতে হয়। তবে ২৭ রমজানে হওয়ার বিষয়টি

সমাজে প্রসিদ্ধ। উবাই ইবনে কাব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে বলেন, আল্লাহর কসম! আমি তা অবশ্যই জানি এবং আমার অধিক ধারণা হলো, যে রাত জেগে ইবাদত করার জন্য আল্লাহর রাসুল আদেশ দিয়েছিলেন সেটি ২৭ এর রাত।

(মুসলিম, হাদিস : ১৬৫৯)
লাইলাতুল কদর গোপন কেন?

লাইলাতুল কদর গোপন রাখার প্রকৃত রহস্য আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন। যদিও মুহাদ্দিস আলেমরা যুক্তিসংগত বিভিন্ন অভিমত পেশ করেছেন। এর সারাংশ হলো, মানুষ যেন লাইলাতুল কদরের আশায় রমজানের শেষ ১০ দিন পুরোপুরি ইবাদতে কাটায় এ জন্য গোপন করে রাখা হয়েছে। উবাদা ইবনে সামিত (রা.) বলেন, একবার রাসুল (সা.) আমাদের লাইলাতুল কদরের নির্দিষ্ট তারিখের সম্পর্কে অবহিত করার জন্য বের হয়েছিলেন। তখন দুজন মুসলমান ঝগড়া করছিল।

তা দেখে তিনি বলেন, আমি তোমাদের লাইলাতুল কদরের সংবাদ দেওয়ার জন্য বের হয়েছিলাম, তখন অমুক অমুক ঝগড়া করছিল। ফলে তার নির্দিষ্ট তারিখের পরিচয় হারিয়ে যায়। সম্ভবত এর মধ্যে তোমাদের জন্য কল্যাণ নিহিত আছে। তোমরা নবম ,সপ্তম ও পঞ্চম রাতে তা তালাশ করো। (বুখারি, হাদিস : ১৮৯৬ )
লাইলাতুল কদরের আলামত

লাইলাতুল কদর সন্ধ্যা থেকে ফজর পর্যন্ত পুরোটাই গুরুত্বপূর্ণ। এ রাতে চাঁদ হবে উজ্জ্বল। জোছনায় আলোকিত থাকবে চারদিক। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, লাইলাতুল কদরের আলামত হচ্ছে, স্বচ্ছ রাত যে রাতে চাঁদ উজ্জ্বল হবে। আবহাওয়ায় প্রশান্তি থাকবে। না ঠাণ্ডা না গরম। সকাল পর্যন্ত আকাশে কোনো উল্কাপিণ্ড দেখা যাবে না। ওই রাতের চাঁদের মতো সূর্য উঠবে (তীব্র) আলোকরশ্মি ছাড়া। শয়তান সেই সময় বের হয় না। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২২৭৬৫)

উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, আর ওই রাতের আলামত এই যে দিনের সূর্য উদিত হয় উজ্জ্বল হয়ে তাতে (কিরণের) তীব্রতা থাকে না। (মুসলিম, হাদিস : ১৬৫৮)

লাইলাতুল কদরের ফজিলত

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদত করে তার পেছনের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করা হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানসহ সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা পালন করবে তারও অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করা হবে। (বুখারি, হাদিস : ১৭৮০, মুসলিম, হাদিস : ১৬৫৪)

লাইলাতুল কদরের দোয়া

রমজান দোয়া কবুলের মৌসুম। এ মাসে একাগ্রচিত্তে বারবার দোয়া করতে হয়। দুনিয়ার শান্তি ও আখিরাতের মুক্তির জন্য বেশি বেশি দোয়া করতে হয়। লাইলাতুল কদরে আরো বেশি পরিমাণে দোয়া পাঠ করতে হয়।

আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! কোন রাতটি লাইলাতুল কদর—এ কথা যদি আমি জানতে পারি তবে সে রাতে কী দোয়া করব? তিনি বলেন, বলবে—‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন কারিম তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি।’

অর্থ হে আল্লাহ! তুমি তো খুবই ক্ষমাশীল, ক্ষমা করাই তুমি ভালোবাসো। সুতরাং ক্ষমা করে দাও আমাকে। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫১৩)

Share This Article