স্বাগত মাহে রমজান

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ০৯:৪২, মঙ্গলবার, ১২ মার্চ, ২০২৪, ২৭ ফাল্গুন ১৪৩০

আদতে মানুষের জীবনে রহমতের ছায়া, রহমতের কোমল পরশ একান্ত জরুরি। রহমত দিয়েই শুরু পবিত্র রমজান। রহমতের আবহাওয়ার শক্তিও অনেক বেশি। রহমতের বারিতে যেন ধুয়ে নেয় আমাদের গাঁ-গেরাম। শহর-বন্দর। রহমতবর্ষণের ঢলে হারিয়ে যায় সমগ্র বিশ্বের প্রতিটি মুমিন। কী অনাবিল সুখ এসে তাকে আপন করে নেয়।

রহমত, মাগফিরাত ও মুক্তির বার্তা নিয়ে আবার আমাদের দোয়ারে পবিত্র মাস রমজানুল মোবারক। বিশ্বের মুমিন বান্দারা রমজানকে স্বাগত জানিয়েছেন। মহান আল্লাহতায়ালাও তার অবারিত রহমতের দোয়ার খুলে দিয়েছেন। রমজানের আবহ শুরু হয়ে যায় মূলত আরবি রজব ও শাবান মাস থেকেই। আল্লাহর রাসুল (সা.) মানুষকে রমজানের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। অভিশপ্ত শয়তান বন্দি থাকে এ মাসে, তেমনি বরকতের ফল্গুধারা বইতে থাকে। রমজান আরবি মাসের নবম মাস। 

এটিকে পবিত্র মাস হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। রমজান সব মানুষের জন্যই রহমতস্বরূপ। মানবিক উন্নতি ও সমৃদ্ধির অপার সম্ভাবনা থাকে এ মাসে। মানুষ চাইলে নিজেকে রাঙিয়ে নিতে পারে। অফুরন্ত রহমতের বারিধারায় নিজেকে ধুয়ে মুছে পবিত্র করে তুলতে পারে। ইবাদতের ফল্গুধারায় যেন আমরা হারিয়ে যেতে পারি- এ জন্যই আমলের তাৎপর্য বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে রমজান মাসের। মূলত বান্দার আল্লাহর দিকে ফেরা ছাড়া আর কোনো পথ নেই। মহান আল্লাহ বলেছেন, ফাফিররু ইলাল্লাহ। আল্লাহর দিকেই ফিরে এসো।

পেছন থেকে কোনো বাঘ তাড়া করলে মানুষ যেমন নিজেকে বাঁচাতে চায়, তেমনি আল্লাহর দিকে ভেগে ভেগে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। আল্লাহর দিকে ফেরার গুরুত্বপূর্ণ সময় এই রমজান মাস। একবার কেউ যদি আল্লাহর পরিচয় পেয়ে যায়, আল্লাহর ভালোবাসায় আত্মনিমগ্ন হয় তাকে আর কেউ ফেরাতে পারে না।

আদতে মানুষের জীবনে রহমতের ছায়া, রহমতের কোমল পরশ একান্ত জরুরি। রহমত দিয়েই শুরু পবিত্র রমজান। রহমতের আবহাওয়ার শক্তিও অনেক বেশি। রহমতের বারিতে যেন ধুয়ে নেয় আমাদের গাঁ-গেরাম। শহর-বন্দর। রহমতবর্ষণের ঢলে হারিয়ে যায় সমগ্র বিশ্বের প্রতিটি মুমিন। কী অনাবিল সুখ এসে তাকে আপন করে নেয়। এই রকমের সুখ-তৃপ্তি আর কোথাও পায় না সে। পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম রহমতের ১০ দিন। বান্দাকে রহমতের বৃষ্টিতে স্নাত করতেই আল্লাহর এই আয়োজন। রহমতের বৃষ্টি জীবন আলোকময় করার জন্য বড় প্রয়োজন। জীবন রাঙাবার জন্য বড় প্রয়োজন। জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে অনাবিল সুখ ও সমৃদ্ধি এনে দিতে পারে রহমতের এই রূপালি আবাহন।

রোজার প্রশিক্ষণ এমন সুচারুরূপে গ্রহণ করে বান্দা—কোনো কিছুই তাকে এ বিধিবিধান পালনে বাধা দিতে পারে না। সে ইচ্ছে করলেই পারে খেয়ে ফেলতে কিন্তু খায় না। লুকিয়ে খেয়ে ফেলতে পারে লুকিয়ে খেতে গেলেও সে আল্লাহর কথা স্মরণ করে। ফিরে আসে। এটা একজন অনুগত মানুষের খণ্ডচিত্রই বটে। এই প্রশিক্ষণ আর কোথাও নেই। রহমতের বারিধারায় স্নাত বলেই আল্লাহর এই বান্দার আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধনে সচেষ্ট হয়।

রহমতের ১০ দিন শুরু না হতেই সমাজে রহমতের প্রভাব চোখে পড়ে। সচক্ষে দেখা যায়। কী পরিমাণ পরিবর্তন হয়েছে রহমতের আবহে। মানুষ সবকিছুতে সংযত হয়। সংযমী হয়। বেচাকেনায়, কথা বলায়, চলায়—ফলে গোটা সমাজেই রহমতের ধারা প্রবাহিত হয়। রহমতের অনন্য বরকত ছড়িয়ে পড়ে।

রোজার প্রতিদান সরাসরি মহান আল্লাহ দেবেন বলে মানুষের আগ্রহও এর প্রতি অনেক। এক হাদিসে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আস-সাওমু লি ওয়া আনা আজজি বিহ। অর্থাৎ রোজা আমার জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দেব। আল্লাহর পক্ষ থেকে অনেক বড় রহমতস্বরূপ এই ঘোষণা। বান্দার অনেক কাছের হয়ে ঘোষণাটি দিয়েছেন তিনি।

মিনকুম মারিজা বাক্য উল্লেখ করে মহান আল্লাহ রুগ্ণ ব্যক্তির রোজাকে বাধ্য করে দেননি। পরে রোজা পালনের ভিত্তিতে সুযোগ করে দিয়েছেন। রোজা রাখতে যার কঠিন কষ্ট হয় অথবা রোগ মারাত্মকভাবে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে তার জন্যই রোজা কাজা করার পদ্ধতি। পরে একসময় রোজা আদায় করে নিতে পারবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে রোগীর প্রতি রহমতের ছায়াই বলা চলে।

শরিয়তের দৃষ্টিতে যে মুসাফির, সে ইচ্ছা করলেই রোজা কাজা করতে পারে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতাআলা ‘আও আলা সাফারিন’ বলে মুসাফিরকে রোজা কাজা করার সুযোগ দিয়েছেন। এটা অবশ্যই শুধু বাড়ি থেকে বের হলেই চলবে না। কেউ পাঁচ দশ মাইল দূরে গিয়েই সফরের রুখসত তথা রোজা থেকে অব্যাহতি গ্রহণ করতে পারবে না। মাইলের হিসাবে ৪৮ মাইল দূরত্বে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ১৫ দিনের চেয়ে কম সময়ের জন্য যিনি রওনা দেবেন, তিনি মুসাফির বলে গণ্য হবেন। যেহেতু মুসাফিরের রাস্তায় প্রচুর কষ্ট সহ্য করেই পথ চলতে হয়। তাই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মুসাফিরের প্রতি রহমতস্বরূপ রোজার রুখসতের বিধান করে দিয়েছেন। শুধু তাই না, নামাজেও রুখসত দিয়েছেন। বিপদে পড়লে সে জাকাতও গ্রহণ করতে পারবে।

রোজায় প্রতিটি পরিবারে শান্তি ফিরে আসে। কলহ কম হয়। ঝগড়াও কম হয়। মানুষ আগের চেয়ে অনেক বেশি সহনশীল হয়। পরিবারের সব সদস্যের মধ্যেই আলাদা একটা সহনীয় মানসিকতার সৃষ্টি হয়। তাই বিবাদ কমে যায়। পরিবারে শান্তি ফিরে আসে। একে অন্যের প্রতি টানও বহু গুণে বেড়ে যায়। রোজার এই রহমতের ছায়া একান্তই পারিবারিক জীবনের প্রশান্তির পাঠশালা।

রোজার প্রথম দশক রহমতের। দ্বিতীয় দশক মাগফেরাতের। তৃতীয় দশক নাজাতের। রহমত কেবল এই ১০ দিনেই আমাদের জন্য থাকে না। সারা জীবনই রহমতের এই আভা মন রাঙিয়ে রাখে। রহমতের বৃষ্টিতে মনের ময়লা ধুয়ে যাক। ফিরে আসুক পরিচ্ছন্ন সুন্দর স্বনির্ভর একটি জীবন। এটাই প্রত্যাশা করি। আমীন।

Share This Article