আত্মশুদ্ধি

যে কারণে অন্তরে বহু রোগের সৃষ্টি হয়

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ১০:০৩, শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২২, ২৯ আশ্বিন ১৪২৯

মুফতি মুহাম্মদ শফি (রহ.)

অন্তরের সব রোগ ও দোষের মূল হলো প্রবৃত্তির খেয়াল-খুশি ও কামনা-বাসনা চরিতার্থ করার চেষ্টা। কোরআনের ভাষায় এটাকে ‘ইত্তিবাউল হাওয়া’ বা প্রবৃত্তি ও কামনার অনুসরণ। মানব অন্তরের যেকোনো রোগ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করলেই আপনি দেখবেন মানুষ তার প্রবৃত্তি ও কামনা-বাসনার কাছে আত্মসমর্পণ করে বসে আছে। যখন কোনো ব্যক্তি তার প্রবৃত্তির ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারে, তখন তার দ্বারা কোনো পাপ কাজ হয় না, তার অন্তরে কোনো ব্যধিও জন্ম নেয় না।

 

এ জন্যই আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) বারবার প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বেঁচে থাকার তাগিদ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি খেয়াল-খুশির অনুসরণ কোরো না। কেননা তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে। ’ (সুরা সোয়াদ, আয়াত : ২৬)

সুতরাং কোনো ব্যক্তি যদি চায় তার অন্তর বাতেনি রোগ থেকে মুক্ত হোক এবং সে সব আধ্যাত্মিক ব্যধি থেকে সুস্থ হয়ে যাক, তবে তার প্রথম দায়িত্ব হলো নিজের নফসের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। এসংক্রান্ত পবিত্র কোরআনের আয়াতগুলো পর্যালোচনা করলে নফসের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার তিনটি পদ্ধতি জানা যায়। যার একটি সংক্ষিপ্ত ও দুটি বিস্তারিত। এখানে সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি নিয়েই আলোচনা করা হলো।

নিজের নফসের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সহজ ও সাধারণ পদ্ধতি হলো অন্তরে পরকালের চিন্তা ও আল্লাহর কাছে জবাবদিহির কথা সব সময় জাগ্রত রাখা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তবে যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সামনে দণ্ডায়মান হওয়াকে ভয় করেছে এবং খেয়াল খুশির অনুসরণ থেকে নিজেকে বিরত রেখেছে, তার ঠিকানা হবে জান্নাত। ’ (সুরা নাজিয়াত, আয়াত : ৪০-৪১)

উল্লিখিত আয়াতে প্রবৃত্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি হিসেবে ‘অন্তরে আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর ভয় সৃষ্টি করা’কে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রত্যেক মুসলমানই জানে যে মৃত্যুর পর আমাকে একদিন আল্লাহর মুখোমুখি হতে হবে। নফস ও প্রবৃত্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার জন্য আবশ্যক হলো, অন্তরের এই সত্য বিশ্বাসটি এমনভাবে গেঁথে রাখা, যেন কখনোই তা বিস্মৃত না হয়।

আল্লাহর সামনে জবাবদিহির জন্য দাঁড়ানোর ভয় অন্তরে সৃষ্টি হয় মৃত্যুর স্মরণ ও ধ্যানের মাধ্যমে। প্রত্যেক মানুষের উচিত প্রতিদিন অন্তত একবার পাঁচ থেকে ১০ মিনিট নিজের মৃত্যু ও তার পরবর্তী পরিণতি নিয়ে গভীরভাবে ধ্যান করা। সঙ্গে সঙ্গে প্রতিদিনের আলাপ-আলোচনায় মৃত্যুকে স্মরণ করা। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘সব স্বাদ বিনাশকারী তথা মৃত্যুর আলোচনা অধিক পরিমাণ কোরো। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২০২)

মৃত্যুর আলোচনা অন্তরে আল্লাহর ভয় এবং আখিরাতের চিন্তা জাগ্রত করে। ফলস্বরূপ ব্যক্তি নিজের নফস ও প্রবৃত্তির ওপর আত্মনিয়ন্ত্রণের শক্তি ও সামর্থ্য লাভ করে। এটা নফসের অনুসরণ থেকে মুক্তি পাওয়ার সাধারণ চিকিৎসা।

‘দিল কি দুনিয়া’ থেকে

মো. আবদুল মজিদ মোল্লার ভাষান্তর

Share This Article