ক্ষুদ্র ঋণের কথিত জনক ইউনূসের ‘ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনৈতিকতা’র খবর কি জানেন তারা?

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ দুপুর ০১:৫৫, শনিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৪, ১৬ চৈত্র ১৪৩০

অর্থনীতির অধ্যাপক ড. ইউনূসের শান্তিতে নোবেল জয়ে পৃথিবীব্যাপী একটি অবস্থান তৈরি হয়েছে। কথিত ক্ষুদ্র ঋণের জনকও তাকে বলা হয় তাকে। এমনকি ইউনূসের বিদেশি বন্ধু ও সমর্থকরা বলছেন, গ্রামীণ ব্যাংক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, যা অনেকটা এনজিও ঘরনার এবং প্রফেসর ইউনূসের সাথে যা হচ্ছে তা প্রতিহিংসামূলক। আসলেই কি ঘটনা তাই? তারা কি প্রকৃত ঘটনা জানেন যে, ইউনূসের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং, কর ফাঁকি ও দুর্নীতিসহ ১৯৮টি মামলা চলমান। এমনকি ক্ষুদ্র ঋণের এই কথিত জনকের রয়েছে ‘ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসংখ্য অনৈতিকতা’র পাহাড়।

সূত্র মতে, ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতি ও আর্থিক অনিয়মের তদন্ত প্রথম করে নরওয়ের রাষ্ট্রীয় টেলিভশন। তাদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থেকে ডেনমার্কের চলচ্চিত্র নির্মাতা টম হাইনম্যান তৈরী করেন ‘ক্ষুদ্র ঋণের ফাঁদে’ (Caught in Micro Debt) নামে এক প্রামাণ্য চলচিত্র, যার মাধ্যমে উন্মোচিত হয় ক্ষুদ্র ঋণের মুখোশ। প্রামাণ্য চিত্রটি তৈরির সময়ে এর নির্মাতা ৬ মাস ঘুরেও এই সম্পর্কে ড. ইউনূসের বক্তব্য নিতে পারেননি, উপরন্তু প্রতিবেদনটি না প্রচারের জন্যে চ্যানেল কর্তৃপক্ষকে চিঠি লেখেন প্রফেসর ইউনূস।

তথ্য মতে, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই অনুদান পাচ্ছে গ্রামীণ ব্যাংক। অনুদানের অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে গঠন করলেন সোশাল ভেনচার ক্যাপিটাল ফান্ড (এসভিসিএফ)। সেখান থেকে গ্রামীণ ফান্ডে ৪৯ কোটি টাকা স্থানান্তর করেন ইউনূস। এছাড়া ১৯৯৬ সালে দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য ভর্তুকি হিসেবে ইউরোপের কিছু দেশ থেকে দেয়া ১০ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থ গ্রামীণ ব্যাংক থেকে গ্রামীণ কল্যাণে সরিয়ে নেন ইউনূস, যা নিয়ম বহির্ভুত। সুতরাং গ্রামীণ ব্যাংক দেখিয়ে বিদেশ থেকে টাকা এনে তা সরিয়ে ফেলার চেষ্টা ছিলো শুরু থেকেই।

জানা যায়, গ্রামীণ কল্যাণ এবং গ্রামীণ ফান্ডের মাধ্যমে গঠিত ২৮ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গ্রামীণ টেলিকম ছাড়া সব প্রতিষ্ঠান লোকসানী। গ্রামীণ ফোনের ৩৪ শতাংশ শেয়ার থেকে তিনি নীট মুনাফা পান প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। এই টাকায় তিনি তৈরী করেছেন বিভিন্ন নাম সর্বস্ব কোম্পানি, যার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাঁচারের অভিযোগ আছে। এছাড়া গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানি আইনের ২৮ ধারায় ‘নট ফর প্রফিট' কোম্পানি। সুতরাং গ্রামীণ টেলিকম তার লভ্যাংশ কোথাও বিনোয়োগ করতে পারবে না, সামাজিক উন্নয়ন ছাড়া। তবুও আইন অমান্য করে অর্থায়ন করা হয়েছে ১২ টি প্রতিষ্ঠানে, যার পরিমাণ ৪৬১.৭৭ কোটি টাকা।

গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের মামলায় ড. ইউনুসের পক্ষে থেকে বলা হয়েছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী চুক্তিভিত্তিক। এ দাবিটি মিথ্যা ও আইনের দৃষ্টিতে শাস্তিমূলক। কেননা ২০২৩ সালেরর এক মামলার হাইকোর্ট নথিতে বলা আছে, মামলা দায়েরকৃত ব্যক্তিবর্গ কোম্পানির স্থায়ী কর্মচারী হিসেবেই মামলাটি দায়ের করেছে। অবস্থা বেগতিক দেখে আদালতের বাহিরে গ্রহণযোগ্য সমাধান করতে বাধ্য হন ইউনূস। এছাড়া তার বিরুদ্ধে কর ফাঁকির মামলা আদালতে প্রমাণিত হওয়ায় গত ৩১ মে আদালতের নির্দেশে ১২ কোটিরও বেশি টাকা তিনি পে-অর্ডারের মাধ্যমে এনবিআরে জমা দেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রফেসর ইউনূসের অনৈতিকতার যেন শেষ নেই। তার জন্যে যারা ব্যাথিত হচ্ছে তাদের উচিত সত্য ও আইন সম্পর্কে অবগত হওয়া। প্রয়োজনে জোবরা গ্রামে গিয়ে দেখা যে, ক্ষুদ্র ঋণ আসলেই কতটুকু দারিদ্র বিমোচন করেছে। ক্ষুদ্র ঋণের বলি হয়ে আত্মহত্যা করা মানুষরাই প্রমাণ করে প্রফেসর ইউনূস তার নিয়ন্ত্রণাধীন গ্রামীণ ব্যাংক কতটা ভয়ঙ্কর ছিল। এছাড়া ১৯৯৮ সালের ভয়ঙ্কর বন্যার পর সরকারের অনুরোধে দেশের প্রায় সব এনজিও কিস্তির টাকা প্রদানে শিথিলতা দেখিয়েছিলো। ব্যাতিক্রম ছিল শুধু প্রফেসর ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংক। সে সময়ে সংসদে পয়েন্ট অফ অর্ডার এই নিয়ে কথা বলেছিলেন সাংসদ মির্জা আজম। বিপুল সমালোচনা হওয়ার পরেও সিদ্ধান্ত থেকে সরেনি গ্রামীণ ব্যাংক।

এমনকি ১৯৯৮ এর আগস্ট থেকে ৯৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংক কিস্তি আদায়ের জন্য সারা দেশে প্রায় ১৩ হাজার সার্টিফিকেট মামলা করে। এসব মামলায় অন্তত দুই শতাধিক দরিদ্র কৃষককে গ্রেফতার করা হয়েছিল। মাত্র পাঁচটি কিস্তি বাকি থাকায় ও ঋণ পরিশোধের অব্যাহত চাপে আত্মহত্যা করে যশোরের কৃষক রুস্তম (দৈনিক সংবাদ ‘৯৮ )।  গণমাধ্যমে বিষয়টি আলোচিত হওয়ার পরে বিবৃতিতে গ্রামীণ ব্যাংক ও প্রফেসর ইউনূস বলেছিলেন, ‘আইন সবার জন্যে সমান। তাহলে সেই আইনে এখন কেন ভরসা রাখতে পারছেন না প্রফেসর ইউনূস’? এমন প্রশ্ন বিশ্লেষকদের।

Share This Article