সিলেটে ঝড়-বৃষ্টিতে দুশ্চিন্তায় কৃষক

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ০৯:২০, বুধবার, ২৭ মার্চ, ২০২৪, ১৩ চৈত্র ১৪৩০

কৃষকের শ্রমে-ঘামে হাওরে ফলানো ধান গোলায় ওঠার কথা সামনের বৈশাখে। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাস শুরু। এ সময় হাওরে  বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও আগাম বন্যার আশঙ্কা থাকে। বড় ধরনের  প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে কৃষকের সর্বনাশ।  জামালগঞ্জ উপজেলার পাগনার হাওরপাড়ের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পরিস্থিতি ভালো মনে হচ্ছে না। ধানের শিষ আসছে মাত্র—এ অবস্থায় ভারি বৃষ্টি হলে সর্বনাশ। 

সিলেটের চার জেলার অন্তত ১০ লাখ কৃষি পরিবারের সারা বছরের স্বপ্ন বোরো ফসল। গত সপ্তাহে বৃষ্টির অভাবে ফুল আসা ধানগাছ ও হাওর রক্ষা বাঁধে লাগানো দূর্বাঘাস মরার উপক্রম হয়। এখন দুদিনের বৃষ্টি ও ঝড়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। কৃষিবিদ বিমল চন্দ্র সোম বলেন, এখন ভারী বৃষ্টি ফসলের জন্য ক্ষতিকর।


কৃষকের শ্রমে-ঘামে হাওরে ফলানো ধান গোলায় ওঠার কথা সামনের বৈশাখে। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাস শুরু। এ সময় হাওরে  বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও আগাম বন্যার আশঙ্কা থাকে। বড় ধরনের  প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে কৃষকের সর্বনাশ।  জামালগঞ্জ উপজেলার পাগনার হাওরপাড়ের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পরিস্থিতি ভালো মনে হচ্ছে না। ধানের শিষ আসছে মাত্র—এ অবস্থায় ভারি বৃষ্টি হলে সর্বনাশ। 

বুঝতে পারছি না এবার কী হবে।’ অন্য এক কৃষক বলেন, ‘সোমবার রাতের পরিস্থিতিতে কৃষকদের মনে ভয়ের সৃষ্টি হয়েছে। ভরা বর্ষার মতো বৃষ্টি হয়েছে। এখনো সব স্থানে ধানে পুরোপুরি শিষ আসেনি। তার আগেই যদি হাওরে পানি আসে, তাহলে কপাল পুড়বে কৃষকের।’

ধানগাছে ফুল আসার সময় হালকা বৃষ্টি উপকারী। এতে পুষ্ট হয় চাল। এই সময়ে ভারি বৃষ্টি ধানের ক্ষতি করে থাকে। ফসল রক্ষা বাঁধগুলোকেও দুর্বল করে। এতে হাওরের ফসল ঝুঁকিতে পড়বে। এদিকে সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঝড় ও ব্যাপক শিলাবৃষ্টি হয়। সুনামগঞ্জের  এক জন কৃষক জানালেন, রাতে যেভাবে ঝড়বৃষ্টি ও শিলা পড়েছে, তাতে ফসলের বেশ ক্ষতি হবে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালক মো. মতিউজ্জামান বলেন, ‘তবে খরা ভাব দূর হয়েছে।  আশা করি ঈদের পরই বোরো ধান কাটা সম্ভব হবে। তাছাড়া প্রকৃতির ওপর তো কারো হাত নেই, কখন কী হয়।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের দিরাই উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী এটিএম মোনায়েম হোসেন জানান, দিরাই উপজেলার ফসল অকাল বন্যার কবল থেকে রক্ষার জন্য ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১১০টি ‘হাওর রক্ষা’ বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শেষ।  ‘এখন বাঁধগুলো রক্ষা করে বন্যা থেকে ফসল বাঁচাতে হবে,’ বলেন এই প্রকৌশলী ।

সিলেট বিভাগের চার জেলায় এবার  ৪ লক্ষ ৯২ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। শেষ খবর পর্যন্ত অবাদ হয়েছে ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৪৩ হেক্টর। আশা করা হচ্ছে এতে ২০ লাখ টন চাল উত্পন্ন হবে। প্রতি বছর অকাল বন্যা ও পাহাড়ি ঢল থেকে ‘প্রজেক্ট ইমপ্লিমেশন’ কমিটির (পিআইসির) মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ড  সিলেটের চার জেলার ছোট-বড় হাওর রক্ষার জন্য ‘হাওর রক্ষা’ প্রকল্প গ্রহণ করে থাকে। এবার এ বিভাগে ‘হাওর রক্ষা’ প্রকল্পে মোট ১৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়। অনেক স্থানে প্রকল্প কাজ শেষ হলেও পিআইসিকে অবশিষ্ট নির্ধারিত টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে না। সুনামগঞ্জ জেলায় হাওর রক্ষা প্রকল্পের মোট ৭৩৪টি প্রকল্প এবং ১৫৯টি ‘ক্লোজার’য়ের কাজ শেষ হয়েছে পিআইসির (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) মাধ্যমে। জেলার ৩৮টি ছোট-বড় হাওরের ১ হাজার ৭০০ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে ৫৯১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়। এজন্য  ২০২৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট সময় সব কাজ শেষ না হওয়ায় ৭ মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার ইত্তেফাককে বলেন, ‘হাওর রক্ষা প্রকল্প কাজ শেষ। পিআইসি গঠন নিয়ে জটিলতায় বাঁধের কাজ শুরু হতে এক সপ্তাহ দেরি হয়। আবার শেষ দিকের কিছু বৃষ্টি বাধা হয়। অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের কাজ শতভাগ শেষ হয়নি দাবি করে সুনামগঞ্জে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ‘হাওর বাঁচাও আন্দোলন কমিটি’র নেতৃবৃন্দ। তারা বাঁধ নির্মাণে নানা অনিয়মের কথা তুলে ধরে বলেন, বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়ে গেলে এর দায় নিতে হবে সংশ্লিষ্ট পিআইসিকে। নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘এখন বাঁধগুলোর যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, আমরা সেদিকে লক্ষ রাখছি। যেখানেই কোনো সমস্যা দেখা দিচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

Share This Article