একুশে বইমেলা শেষ হচ্ছে আজ

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ০৯:৩৫, শনিবার, ২ মার্চ, ২০২৪, ১৭ ফাল্গুন ১৪৩০

দূরত্ব ও যানজট বিবেচনায় আগে যারা বইমেলায় আসতে নিরুৎসাহ বোধ করতেন এবার মেট্রো ট্রেন তাদেরকেও নিয়ে এসেছে বইমেলায়। ফলে বিগত বছরগুলোর তুলনায় দর্শনার্থীর ভিড় এবং ভালো বেচাবিক্রি হওয়ায় প্রকাশকদের মুখেও ছিল সন্তুষ্টির ছাপ।

অমর একুশে বইমেলা শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল দুদিন আগে বৃহস্পতিবারই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ অনুমোদনক্রমে মেলার সময় বাড়ানো হয়েছে দুদিন। বর্ধিত সেই সময় শেষ হচ্ছে আজ।

তবে যে প্রত্যাশা নিয়ে মেলার সময় বাড়ানোর দাবি জানানো হয়েছিল সে অনুযায়ী বই বিক্রি হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীরা। তাদের ভাষ্য, বেইলি রোডের মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ড ও প্রাণহানির ঘটনা পাঠকদের আলোড়িত করেছে। এ অবস্থায় মেলা শেষ হওয়ার আগের দিন শুক্রবার হওয়া সত্ত্বেও ভিড় ও বিক্রি ছিল কম।

আবার অনেকে বলছেন, মেলার সময় বাড়ানোর তথ্যটা যে পরিমাণে প্রচার হওয়া দরকার ছিল সেই পরিমাণে হয়নি। তাই অনেকে জানেনই না যে মেলার সময় বেড়েছে।

সাধারণত প্রাণের অমর একুশে বইমেলা হয় ২৮ দিনে। তবে এ বছর অধিবর্ষ হওয়ায় মেলা একদিন বেশি পেয়ে দাঁড়ায় ২৯ দিনে। তার ওপর ২৯তম দিনটি বৃহস্পতিবার হওয়ায় প্রকাশকদের দাবি ছিল মেলার সময় বাড়িয়ে শনিবার পর্যন্ত নেয়ার। তাদের দাবি মেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ অনুমোদনক্রমে ২৭ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা দিয়ে বইমেলার সময় দুদিন বাড়ানো হয়।

এবারের বইমেলা শুরু থেকেই ছিল জাঁকজমকপূর্ণ। প্রথম সপ্তাহের পর থেকে মেলা পুরোদমে জমে ওঠে। এর মধ্যে আবার মেট্রো ট্রেন বইমেলায় যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা। দূরত্ব ও যানজট বিবেচনায় আগে যারা বইমেলায় আসতে নিরুৎসাহ বোধ করতেন এবার মেট্রো ট্রেন তাদেরকেও নিয়ে এসেছে বইমেলায়। ফলে বিগত বছরগুলোর তুলনায় দর্শনার্থীর ভিড় এবং ভালো বেচাবিক্রি হওয়ায় প্রকাশকদের মুখেও ছিল সন্তুষ্টির ছাপ।

এ ছাড়া আবহাওয়া ভালো থাকায় প্রকৃতির বিরূপ প্রভাবও পড়েনি মেলায়। ২২ ফেব্রুয়ারি অল্প সময়ের বৃষ্টি মেলার বেচা-বিক্রিতে কিছুটা বিঘ্ন সৃষ্টি করলেও তা প্রকাশক ও পাঠকদের বড় ভোগান্তির কারণ হয়নি। তবে পাঠকের অত্যধিক সমাগমের দিন মেলার ধুলোবালি কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলেছে দর্শনার্থীদের।

এদিকে বেশি ভালো বিক্রির প্রত্যাশায় মেলা দুদিন বাড়ানোর দাবি তোলা হলেও বইয়ের বিক্রি আশানুরূপ হয়নি। পাঠক সমাগমও ততোটা বাড়েনি। প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীরা এজন্য ভিন্ন ভিন্ন কারণ তুলে ধরেছেন।

শুক্রবার মেলায় কথা হয় তাম্রলিপি প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি কাউসার হোসেনের সঙ্গে। বেচাবিক্রি কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বেচাবিক্রি শুক্র-শনিবারের মতো তো হচ্ছেই না, নরমাল দিনের মতোও বলা যাচ্ছে না। অনেকে হয়তো জানেনই না যে মেলা দুদিন বেড়েছে। আবার এটাও হতে পারে- যারা বই কেনার তারা ২৯ তারিখের মধ্যেই কিনে ফেলেছেন।’

মাওলা ব্রাদার্সের বিক্রয়কর্মী তামিম হোসেন বলেন, ‘বিক্রি বা ভিড় অনেক কম। নগণ্যই বলা যায়। হতে পারে মেলার সময় বাড়ার খবরটা মানুষের মাঝে পৌঁছাতে যত প্রচার করা দরকার ছিল ততোটা প্রচার হয়নি। ফেসবুক থেকে মানুষ আর কতটাই বা নিউজ জানতে পারে।’

ঐতিহ্য প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি হাসেম আলী বলেন, ‘বেচা বিক্রি নেই বললেই চলে। মালিক পক্ষ যে প্রত্যাশা নিয়ে মেলা দুদিন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিল তার ধারেকাছেও নেই বেচাবিক্রি। অর্ধেকেরও কম হবে বলে মনে হচ্ছে।’

তবে অন্বেষা প্রকাশনীর প্রকাশক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘শুক্রবার হিসেবে আজ পাঠক ও ক্রেতা সমাগম বেশি হওয়ার কথা ছিল। আমরাও সেরকম প্রত্যাশা করে মেলা দুদিন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিলাম। আমাদের দাবি পূরণ হয়েছে। কিন্তু বেইলি রোডের মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ড অনেকের মনে প্রভাব বিস্তার করেছে। মেলায় হয়তো তার প্রভাবটা পড়েছে। আশা করি আজ ভালো বিক্রি হবে।’

এদিকে মেলার শেষ সময়েও নতুন বই নিয়ে আসছেন প্রকাশকরা। শুক্রবার বইমেলার ৩০তম দিনেও নতুন বই এসেছে ২১৯টি।

শুক্রবার হওয়ায় এদিন মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায় আর শেষ হয় রাত ৯টায়। তবে এদিন ছিল না কোনো শিশুপ্রহর। শনিবারও থাকবে না কোনো শিশুপ্রহর।

মেলার শুরু থেকে মূল মঞ্চে প্রতিদিনই থেকেছে আলোচনা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। লেখক বলছি মঞ্চে থাকতো বই নিয়ে কথোপকথন। বর্ধিত দুই দিনে তা-ও থাকছে না। এই সময়টাতে মূলত বই বিক্রিই মুখ্য বিষয় থাকবে প্রকাশকদের।

সমাপনী দিনের অনুষ্ঠান

শনিবার সমাপনী দিনে মেলা শুরু হবে সকাল ১১টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৫টায় সমাপনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৪’-এর সদস্য সচিব ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম। প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।

অনুষ্ঠানে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার এবং শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার দেয়া হবে।

বিষয়ঃ বাংলাদেশ

Share This Article