বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত কয়লার বিল কেন বাকি পড়ে
শুধুমাত্র একজন গ্রাহকের জন্যই প্রতি বছর ১২ হাজার ৮৪৬ টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। তাহলে সারাদেশের মোট গ্রাহকের হিসাবে পরিমাণটা কত হয় ভেবে দেখেছেন কি?
এক দশকের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার সুবাদে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের সব এলাকাকে বিদ্যুতের আওতায় আনার মাইলফলক অর্জন করে সরকার। কিন্তু এই অর্জন উদযাপনের কিছুদিন পরই শুরু হলো ইউক্রেন যুদ্ধ। এ যুদ্ধের প্রভাবে দেখা দিল জ্বালানি সরবরাহে বিঘ্ন। যার প্রভাব পড়েছে বিদ্যুৎ-সাফল্যের ওপর। বৈশ্বিক সংকটে সাময়িকভাবে উৎপাদন বন্ধ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের বৃহত্তম পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের। কয়লার বকেয়া বিল পরিশোধ করতে না পারায় নতুন করে কয়লা আমদানি বন্ধ হওয়ায় এই সংকট তৈরি হয়। এতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ‘বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রাখিনি, তাহলে কয়লার বিল কেনো বাকি থাকবে’ এমন একটি কথা সয়লাব হয়েছে। তাহলে আসুন জেনে নেই-
কেন কয়লার বিল বাকি পড়ল?
কোনো গ্রাহক মাসে ১০০ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে এনার্জি বিল বাবদ প্রথম ৭৫ ইউনিটে ৪ টাকা ৮৫ পয়সা হারে দিতে হয় ৩৬৩ টাকা ৭৫ পয়সা। পরবর্তী ২৫ ইউনিটে ৬ টাকা ৬৩ পয়সা করে ১৬৫.৭৫ টাকা গুনতে হয়। ফলে ১০০ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহারে দিতে হচ্ছে ৫২৯.৫০ টাকা।
কিন্তু ১০০ ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় খরচ হয় ১৬০০ টাকা। অথচ গ্রাহকদের পরিশোধ করতে হচ্ছে ৫২৯.৫০ টাকা। এতে সরকারকে লোকসান বাবদ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে ১০৭০.৫০ টাকা।
সে হিসাবে শুধুমাত্র একজন গ্রাহকের জন্যই প্রতি বছর ১২ হাজার ৮৪৬ টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। তাহলে সারাদেশের মোট গ্রাহকের হিসাবে পরিমাণটা কত হয় ভেবে দেখেছেন কি?
আর এজন্যই বাকি পড়েছে কয়লার বিল।
এছাড়া সারা দেশের সেচ- গ্রাহকদের জন্য আলাদা সুবিধা দিচ্ছে সরকার। সেচ গ্রাহককে বিলের শতকরা ২০ টাকা রেয়াত দেয়। তাহলে পাঁচ হাজার টাকা বিল হলে এক হাজার টাকা বিল মওকুফ আসে। একই সঙ্গে দেশের সব মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডাকে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। যুদ্ধাহত ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিনা মূল্যে বিদ্যুৎ দিচ্ছে সরকার। এ নিয়ে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ বহুবার চাপ সৃষ্টি করলেও দেশের জনগণের স্বার্থে সরকার ভর্তুকি তুলে নেয়নি। বৈশ্বিক সংকটেও বিশাল ভর্তুকি দিয়ে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবারহে চেষ্টা করে চলেছে সরকার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার অঙ্গীকার পূরণ করেছে সরকার। এজন্য বিগত ১২ বছর ধরে বিদ্যুৎ খাতে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিচ্ছে। বৈশ্বিক সংকটে ভর্তুকি দিলেও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের ফলে কয়লার দাম বেড়ে গেছে। এমনকি বেশি দামেও কয়লা পাওয়া যাচ্ছে না। তাই পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ হতে যাচ্ছে। তবে শিগগিরই নতুন উৎস থেকে কয়লা আমদানি করবে সরকার।