নবীন প্রবীণে জমজমাট ছিল ঈদের নাট্যাঙ্গন

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ০৯:৫৬, বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই, ২০২২, ৬ শ্রাবণ ১৪২৯

ঈদ উপলক্ষ্যে দেশের অন্যান্য অঙ্গনের মতো দেশের শোবিজও ছিল বেশ সরব। বিশেষ করে নাট্যাঙ্গনের সঙ্গে যুক্তরা ঈদের অনেক আগে থেকেই কর্মব্যস্ত ছিলেন। নাটকের শুটিং, এডিটিং ও ডাবিংয়ে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন তারা। ঈদের দিন থেকে পরবর্তী ছয়দিন টিভি চ্যানেল ও অনলাইন প্লাটফরমে প্রচার হয়েছে নাটক ও টেলিফিল্ম। দর্শকও ব্যাপক আগ্রহ নিয়েই এসব দেখেছেন। তা ছাড়া গত কয়েক বছর ধরে করোনার প্রভাবে নাট্যাঙ্গনের লোকজন অনিয়মিত ছিলেন। সেই সমস্যাটি এবারের ঈদে ছিল না। অভিনয়শিল্পীদের প্রায় সবাই ঈদের নাটকে ব্যস্ত ছিলেন। কারণ, ঈদের সময় নাটকের দর্শক এমনিতেই বেশি থাকে। তাই সার্বিক বিবেচনায় এবারের ঈদের নাট্যাঙ্গন ছিল অন্য কয়েক বছরের তুলনায় ব্যাপক সক্রিয়।

 

এবারের ঈদে সিনিয়র অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নাটকে অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম। চরিত্র নির্বাচন থেকে শুরু করে অভিনয়শৈলী প্রদর্শনে তিনি এবারও বাজিমাত করেছেন। বিশেষ করে তার অভিনীত একখণ্ডের নাটকগুলো ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। এমনিতে গত দুবছর করোনার বিধিনিষেধের কারণে তিনিও মনোযোগ দিয়ে অভিনয় করতে পারেননি। দর্শকের আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল তাই মোশাররফ করিম অভিনীত নাটক। সিনিয়র অভিনেতা জাহিদ হাসানও ঈদের নাটক নিয়ে তুমুল ব্যস্ত ছিলেন। কমেডি ঘরানার গল্পের নাটকে বেশি দেখা গেলেও গত ঈদে সিরিয়াস গল্পের নাটকেও তিনি অভিনয় করেছেন। ভক্তরাও এবার তার অভিনীত নাটক দেখতে পেরে আনন্দিত। তবে প্রতি ঈদেই তিনি নাটক পরিচালনা করলেও গত ঈদে তা করেননি।

আরেক অভিনেতা ও নির্মাতা মীর সাব্বির গত রোজার ঈদে সবচেয়ে বেশি নাটকে অভিনয় করলেও আমেরিকায় অবস্থানের কারণে কুরবানি ঈদে অল্প কয়েকটি নাটকে দেখা গেছে তাকে। চলতি সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব এবারের ঈদেও অনবদ্য অভিনয় করেছেন। বিটিভি ছাড়া প্রায় প্রতিটি টিভি চ্যানেলেই তার অভিনীত নাটক প্রচার হয়েছে। তা ছাড়া ডিজিটাল প্লাটফরমগুলোতেও ছিল তার অভিনীত নাটকের আধিক্য। চলতি বছরের রোজার ঈদের তুলনায় কুরবানির ঈদে তিনি বেশি সক্রিয় ছিলেন।

অপূর্বের কাছাকাছি অবস্থানেই ছিলেন সময়ের আরেক জনপ্রিয় অভিনেতা আফরান নিশো। চরিত্রের দিকে খুব বেশি বৈচিত্র্য না থাকলেও নিশোকে প্রচুর নাটকে অভিনয়ে দেখা গেছে। তার মধ্যে কয়েকটি নাটক ছিল চোখে পড়ার মতো। আরেক জনপ্রিয় অভিনেতা আবদুন নূর সজলকেও এবারের ঈদে সপ্রতিভ দেখা গেছে। যদিও তিনি খুব বেশি নাটকে অভিনয় করেননি। তবু যে কটি নাটকে অভিনয় করেছেন তার সবই ছিল মানসম্মত। ঈদে জনপ্রিয় অভিনেতা হাসান জাহাঙ্গীর অভিনীত নাটকগুলোও ছিল উপভোগ্য। তিনি মূলত কমেডি ঘরানার নাটকেই বেশি অভিনয় করেছেন। তরুণ অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে তৌসিফ মাহবুব ছিলেন অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি ব্যস্ত। রোজার ঈদের পর থেকে কুরবানির আগের দিন পর্যন্ত ছিলেন শুটিংয়ে ব্যস্ত। তিনি স্বভাবসুলভ অভিনয় করে দর্শকের আগ্রহের কেন্দ্রে জায়গা করে নিয়েছেন। তার অভিনীত একাধিক নাটক দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। চলতি সময়ের আরেক তরুণ অভিনেতা ফারহান আহমেদ জোভান সারা বছরের মতো ঈদেও ব্যাপক ব্যস্ত ছিলেন। চরিত্র নির্বাচনে মুনশিয়ানা দেখানোর কারণে তার প্রতিও দর্শকের আগ্রহ ছিল উল্লেখ করার মতো।

সময়ের পরিক্রমায় গুরুত্বপূর্ণ অভিনেতায় পরিণত হতে থাকা মনোজ প্রামাণিক প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালো পারফরম করেছেন ঈদ নাটকে। তার অভিনয়ের আলাদা দর্শক তৈরি হয়েছে নাট্যাঙ্গনে। একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি নিয়মিত অভিনয় করে যাচ্ছেন এ অভিনেতা। ক্রমেই ব্যস্ততা বাড়ছে তার। গত ঈদের নাটকেও তিনি ছিলেন সপ্রতিভ। প্রশংসিত হয়েছেন ঈদের নাটকের কাজ নিয়ে।

অভিনেত্রীদের মধ্যে মেহজাবিন চৌধুরী বরাবরই ছিলেন অনবদ্য। যে কয়েকটি নাটকে তিনি অভিনয় করেছিলেন, প্রায় প্রতিটি নাটকেই তার সাবলীল অভিনয় দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। নানামুখী চরিত্রে তার অভিনয় রসায়ন ছিল উপভোগ্য। তানজিন তিশা রোজার ঈদে খুব বেশি আলোচনায় না থাকলেও কুরবানির ঈদে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। বিশেষ করে কয়েকটি নাটকে তার ব্যতিক্রমী চরিত্রে অভিনয় দর্শকের মনে দাগ কেটেছে। প্রতিনিয়ত নিজেকে শুধু এগিয়েই নিচ্ছেন এ অভিনেত্রী। আরেক অভিনেত্রী সাবিলা নূর গত ঈদে অনেক দর্শকপ্রিয় নাটকের অভিনেত্রী ছিলেন। ঈদের সময়টায় প্রাণবন্ত অভিনয় দর্শকের কাছে আকাঙ্ক্ষিত অভিনয়শিল্পীতে পরিণত হয়েছেন তিনি। গত ঈদে তরুণ অভিনেত্রীদের মধ্যে কেয়া পায়েল ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রে। অপূর্ব, তৌসিফদের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করে লাইমলাইটে ছিলেন এ অভিনেত্রী। এ ছাড়া সাফা কবির, জাকিয়া বারী মম, সামিরা খান মাহীসহ আরও কিছু অভিনয়শিল্পী নিজেদের সাবলীল অভিনয় দিয়ে এবারের ঈদে দর্শকদের মন কেড়েছেন। অন্যদিকে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও ভালো-মন্দ মিলিয়ে করোনাপরবর্তী ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। যদিও কিছু চ্যানেলে অনুষ্ঠান কিংবা নাটকের মান নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়, তবুও মন্দা অর্থনীতিতে নিজেদের টিকিয়ে রাখার চেষ্টায় এবারের ঈদে কিছুটা মানসম্মত নাটক প্রচারের চেষ্টা ছিল তাদের মধ্যে। সব মিলিয়ে ঈদের নাটক টেলিফিল্ম ছিল উপভোগ্য।

Share This Article