পাহাড়ে এখনও জিয়ার ‘নিরাপত্তার চশমা নীতি’ রয়ে গেছে

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সন্ধ্যা ০৬:৩২, শুক্রবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২২, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪২৯

দেশের বিশিষ্ট কয়েকজন নাগরিক বলেছেন, ২৫ বছর হলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বাস্তবায়ন হয়নি। উপরন্তু পাহাড়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যা করতে চেয়েছিলেন, তা-ই সেখানে বাস্তবায়িত হয়েছে। নাগরিকদের দাবি, জিয়াউর রহমান নিরাপত্তার যে চশমা দিয়ে সমাধান দেখেছেন, সেই নীতি এখনও রয়ে গেছে।

তারা মনে করেন, যতক্ষণ চুক্তির বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিকভাবে সমাধান না করা হবে ততক্ষণ এর সমাধান হবে না। এ কারণে নাগরিকরা জাতীয় সংসদে আলোচনার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় দেশের একাধিক রাজনীতিক, শিক্ষক, সাংবাদিকদের বক্তব্যে এসব প্রসঙ্গে উঠে আসে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা বলেন, ‘পাকিস্তান আমল থেকে আজ পর্যন্ত অমুসলিম অধ্যুষিত পার্বত্যাঞ্চলকে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় পরিণত করার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। চলছে সামরিক শাসন। পাকিস্তান সরকারের মতোই চালানো হচ্ছে শাসন ও শোষণ।’

১৯৪৭ সালে দেশভাগ হয়েছিল দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে উল্লেখ করে সন্তু লারমা বলেন, ‘পার্বত্যাঞ্চল কখনও মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা ছিল না। কিন্তু দ্বিজাতিতত্ত্ব লঙ্ঘন করে সেটাকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করা হলো।’

সন্তু লারমা অভিযোগ করেন, ‘পার্বত্যাঞ্চল বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী শাসিত হচ্ছে না। পার্বত্যাঞ্চলে আজকে সাম্প্রদায়িক উগ্র জাতীয়তাবাদ উসকে দেওয়া হচ্ছে। দুর্নীতি, দমন-পীড়ন চলছে।’

আজকের অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ কী হবে জানিয়ে জনসংহতি সমিতির সভাপতি বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন করা। এটা জনগণ ভুলতে পারে না। যতদিন এটা বাস্তবায়ন হবে না, ততদিন আন্দোলন চলবে। আমি জানি না, আগামীর বৃহত্তর আন্দোলন কোন দিকে যাবে। চুক্তি হয়েছিল রাজনৈতিকভাবে শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যা সমাধানের জন্য।’

বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আজকে এ চুক্তির রজতজয়ন্তী উদযাপন করার কথা ছিল। কিন্তু আজকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বৃহত্তর আন্দোলনে শামিল হবার জন্য আলোচনা সভা করতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান পাহাড়ে যেটা করতে চেয়েছিলেন সেটাই আজ সেখানে বাস্তবায়িত হয়েছে। জিয়াউর রহমান যে নিরাপত্তার চশমা দিয়ে সমাধান দেখেছেন, সেই নীতি এখনও বিদ্যমান। যতক্ষণ এটা রাজনৈতিকভাবে সমাধান না করা হবে ততক্ষণ এর সমাধান হবে না। আগামী ২০ ডিসেম্বরের গণমিছিলের মাধ্যমে পাহাড়ি-বাঙালির সম্মিলিত বৃহত্তর আন্দোলন শুরু হবে। সবার স্বার্থেই এ চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে।’

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশনের সদস্য ও মানবাধিকার কর্মী খুশি কবির বলেন, ‘চুক্তির ২৫ বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু বাস্তবায়নের দিকে না এগিয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে। আদিবাসী দিবসে কেন আমরা এটা বলতে পারবো না। স্বাধীনতার ৫১ বছর হয়ে গেছে। অথচ আমরা পিছনের দিকে হাঁটছি।’

অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল বলেন, ‘পাহাড়িদের সশস্ত্র লড়াই ছিল ন্যায়সঙ্গত। এটা একটা রাজনৈতিক ও জাতিগত সমস্যা। তাই রাজনৈতিকভাবেই এর সমাধান করতে হবে।’

কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, ‘মূল সমস্যা গণতন্ত্রহীনতা। এ কারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন হয়নি। ২৫ বছর পর আজ পাহাড়িদের অস্তিত্ব বিপন্ন।’ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সরকার লঙ্ঘন করেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘জাতীয় সংসদে একদিন এ নিয়ে আলোচনা হতে পারে, আলোচনা হোক। নানাভাবে পাহাড়িদের দুর্বল করা হচ্ছে। যারা সেখানে দখল করছে তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’ জনসংহতি সমিতিকে জাতীয় দল হিসেবে নিবন্ধন দেওয়ার দাবি জানান সোহরাব হাসান।

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স আগামী ২০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

এছাড়াও আরও বক্তব্য রাখেন ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুল্লাহ তারেক, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবিন্দ্রনাথ সরেন প্রমুখ।

বিষয়ঃ দিবস

Share This Article