স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাল্টে যেভাবে নিজের নামে চালিয়েছেন মেজর জিয়া
১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ দেয়া সেই ঘোষণায় জাতির জনকের নাম না থাকায় চারিদিক থেকে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। মূলত এই দিনেই স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। ২০২১ সালে মুক্তি পাওয়া প্রযোজক কাওসার মাহমুদ পরিচালিত ৭১ মিনিটের ‘শব্দসেনা’ প্রামাণ্য চিত্রেও তথ্যটি তুলে ধরা হয়েছে।
একাত্তরের ৭ মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধুর আদেশ-নির্দেশে চলতে শুরু করে পূর্ব বাংলা। পাকিস্তানি কোনো শাসনই মানতে চাননি স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত বাঙালিরা। এসবে দিশেহারা হয়ে ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যা চালায় পাকসেনারা। সেই কালরাতের ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অথচ সেই ঘোষণাপত্রটি পাল্টে নিজের নামে চালিয়ে দেন জিয়াউর রহমান।
চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে সম্প্রচার শুরু হওয়ার দ্বিতীয় দিন প্রথমবার বঙ্গবন্ধুর সেই ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন মেজর জিয়া। ঠিক এর পরদিনই তা পাল্টে নিজেকে 'প্রভিশনাল হেড অব বাংলাদেশ' আর 'চিফ অব লিবারেশন ফ্রন্ট' বলে দাবি করেন তিনি। ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ দেয়া সেই ঘোষণায় জাতির জনকের নাম না থাকায় চারিদিক থেকে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
মূলত এই দিনেই স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। ২০২১ সালে মুক্তি পাওয়া প্রযোজক কাওসার মাহমুদ পরিচালিত ৭১ মিনিটের ‘শব্দসেনা’ প্রামাণ্য চিত্রেও তথ্যটি তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া মেজর জিয়ার অধীনে থাকা তৎকালীন সেনা কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা শমসের মবিন চৌধুরীর সাক্ষাৎকারও নিয়েছেন তিনি। সাক্ষাৎকারে শমসের মবিন বীরবিক্রম বলেছেন, ‘২৮ মার্চ আমার হাতে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাপত্রটি তুলে দেন জিয়াউর রহমান। আর বলেন ‘এটা তুমি রেডিও স্টেশনে গিয়ে বারবার পড়তে থাকবে’।
ঘোষণাপত্রে বঙ্গবন্ধুর নাম না দিয়ে জিয়া বলেছিলেন, ‘আই হেয়ার বাই ডিক্লেয়ার্ড মাইসেলফ প্রভিশনাল হেড অব দ্য গভর্মেন্ট অব বাংলাদেশ।’ বিতর্কিত ঘোষণাপত্রটিই বেশ কয়েকবার পাঠ করেন শমসের মবিন। সেদিনই স্টেশনে এসে 'স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র' থেকে 'বিপ্লবী' শব্দটি বাদ দিয়েছেন মেজর জিয়া।
স্মৃতিচারণে সাবেক কূটনীতিক শমসের চৌধুরী বলেন, ‘ওই দিন আওয়ামী লীগ নেতা এমএ হান্নান আমাকে ফোন দেন। উনি সাধুবাদ জানালেন। এরপর বললেন- ‘এই ঘোষণায় কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নাম আসেনি। সবাই তো বঙ্গবন্ধুকেই চেনে, তাই না। লড়াই তো তার জন্যই।’ আমি তার সঙ্গে একমত হলাম। বললাম- ‘দিস ওয়ার অব ইন্ডিপেন্ডেন্স ইজ বিন ফট আন্ডার দ্য গাইডেন্স অব শেখ মুজিবুর রহমান- এটা যোগ করা উচিত।’
পরে সেই রাতে বিষয়টি মেজর জিয়াকে বোঝালাম।তিনি কিছু একটা ভেবে বললেন- ‘অফকোর্স বঙ্গবন্ধুর নাম থাকতে হবে।’ এরপর ২৯ মার্চের ঘোষণায় ভুল শুধরে আবারও বঙ্গবন্ধুর নাম নিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেছিলেন জিয়াউর রহমান।