গ্রামীণ ফোন নিয়ে যে আবেগী প্রতারণা করেছিলেন ইউনুস

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সন্ধ্যা ০৬:৫৭, বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ, ২০২৪, ৭ চৈত্র ১৪৩০

গ্রামীণ ফোনের টাকা গরিবের ব্যাংক 'গ্রামীণ ব্যাংকে' যাবে, কিন্তু সেই টাকা গ্রামীণ ব্যাংকে যায়নি। রাষ্ট্রপ্রধানকে আবেগতাড়িত করে রেলের নেটওয়ার্কও গ্রামীন ফোনে ব্যবহার করেন ড. ইউনুস।

গ্রামীণ ফোনের পুরনো সেই বিলবোর্ডগুলোর কথা মনে পড়ে কি?  গ্রাম্য নারীদের হাতে সাধারণ মানের কিছু মোবাইল ফোন দেখা যেত, তারা ঘরে, বাইরে ফসলের খেতে কথা বলছেন। প্রবাসী স্বামীর সাথে কথা বলছেন ভাঙা কুঁড়ে ঘরে বসে।এভাবে মানুষের আবেগ অনুভূতির শতভাগ লুফে নেয় গ্রামীণ ফোন। আর এভাবে আবেগতাড়িত করেই ড. মুহাম্মদ ইউনুস গ্রামীণ ফোনের অনুমোদনটিও নিয়েছিলেন।    

লাইসেন্স পেতে ড. ইউনূসের দৌঁড়ঝাপ

সে সময় লাইসেন্স পেতে ব্যক্তিগত সুনাম ও প্রভাব ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন ড. ইউনূস। প্রধানমন্ত্রীর সামনে তিনি যুক্তি তুলে ধরেন, অন্য সবাই ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক লাভের জন্য ব্যবসা করতে চায়। কিন্তু গ্রামীণফোন দরিদ্র ও ভূমিহীন নারীদের জন্য। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে নাড়া দেয়। লাইসেন্স দেয়ার বিষয়ে তিনি ড. ইউনূসকে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রীকে ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। ১৯৯৭ সালের ২৬ মার্চ গ্রামীণ যাত্রা শুরু করে, যে দিনটির সাথে আমাদের আবেগ জড়িত ষোল আনা।তবে যাত্রার প্রথম বছরে  লোকসানে পড়ে  গ্রামীণ ফোন। শুরু হয় অর্থ জোগাড়ের দৌড়ঝাঁপ।  সিদ্ধান্ত হয় মূল প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের সুনাম ব্যবহার করে আইএফসি, এডিবি ও কমনওয়েলথ ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের কাছ থেকে সাড়ে ৫ কোটি ডলার ঋণ নেয়ার।

গোড়ার কথা:আইডিয়া চুরি ইউনূসের!

১৯৯৩ সালের শুরুর দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ারটন থেকে স্নাতক করা ইকবাল কাদীর; যিনি সে সময় একজন ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার।  ড. মুহাম্মদ ইউনূস যখন ওহাইওতে সম্মানসূচক ডিগ্রি নিতে গিয়েছিলেন, তখন ইকবাল কাদীর ড. ইউনূসের কাছে কীভাবে তারবিহীন ফোন দেশের উন্নয়নে বিপ্লব ঘটাতে পারে, সে চিন্তা বিস্তারিত তুলে ধরেন। তার আইডিয়া ছিল, সেলফোন হতে পারে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বড় হাতিয়ার।

শুরুতে ইউনূস বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা না করলেও ১৯৯৪ সালে লিখিত পরিকল্পনা পাওয়ার পর নড়েচড়ে বসেন। কিন্তু প্রাথমিক লগ্নি করার জন্য তেমন আগ্রহ দেখাননি তিনি।কিন্তু মার্কিন এক ধনী ব্যক্তিকে বুঝিয়ে বিনিয়োগে রাজি করিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন 'গণফোন'। কিছু অর্থ হাতে আসার পর তিনি ফিনল্যান্ডের টেলিকন কোম্পানিকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেন। উদ্দেশ্য ছিল এ পরামর্শক কোম্পানির মাধ্যমে স্ক্যান্ডেনেভিয়ান দেশগুলোর সেলফোন অপারেটরদের সঙ্গে নেটওয়ার্ক স্থাপন। অবশেষে ১৯৯৪ সালের শেষ দিকে তিনি সুইডিশ কোম্পানি টেলিয়া, গণফোন ও গ্রামীণ ব্যাংকের একটি কনসোর্টিয়াম স্থাপনে সফল হন। পরিকল্পনা ছিল বাংলাদেশ সরকার নতুন লাইসেন্সের জন্য দরপত্র আহ্বান করলেই তাতে অংশ নেয়া।

এরপর প্রাথমিকভাবে একটি লাভজনক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটি সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়ে টেলিফোন অপারেটর হিসেবে ব্যবসা পরিচালনা করবে। পাশাপাশি আরেক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান খোলা হবে, যারা এ কোম্পানির কাছ থেকে পাইকারি দামে কথা বলার সময় কিনে তা গ্রামের দরিদ্র নারী উদ্যোক্তাদের কাছে বিক্রি করবে। অলাভজনক এ প্রতিষ্ঠানের নাম হবে 'গ্রামীণ টেলিকম'।

কিন্তু ছয় মাস পর টেলিয়া এ কনসোর্টিয়াম থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়। ইকবাল কাদীর এতে কিছুটা মুষড়ে পড়েন; কিন্তু হাল না ছেড়ে আবার দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন নরডিক অঞ্চলে। তার বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতায় এ প্রকল্পে যোগ দিতে রাজি হয় 'টেলিনর'। কিন্তু পুঁজি জোগানোর লড়াইয়ে টেলিনরের কাছে হার মানে সবাই। প্রাথমিকভাবে কনসোর্টিয়ামে চার অংশীদার ১ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের বিনিয়োগে একমত হয়। এতে সিংহভাগ ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিক হয় টেলিনর, ৩৫ শতাংশ গ্রামীণ টেলিকম, সাড়ে ৯ শতাংশ জাপানের মারুবিনি আর মাত্র সাড়ে ৪ শতাংশ শেয়ারের মালিক হয় ইকবাল কাদীরের 'গণফোন'।

এতো অল্প শেয়ারে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে জায়গা হয় না তার। তবু দরপত্রের কাগজপত্র জমা দেয়া থেকে শুরু করে সবকিছুই করতে হয়েছে তাকে। ১৯৯৫ সালের ৬ নভেম্বর তিনি সশরীরে দরপত্র জমা দেন। যদিও সেদিন তার সঙ্গে টেলিনরের কয়েকজন কর্মকর্তা দলিলপত্র জমাদানের সময় উপস্থিত ছিলেন। এরপর ছিয়ানব্বইয়ের পট পরিবর্তনে তাদের সব উদ্যোগই ভেস্তে যেতে বসেছিল। যদিও নতুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরনো দরপত্র বাতিল না করে যথাযথ দলিল যাচাই করে যোগ্য তিনটি কোম্পানিকে লাইসেন্স দেয়ার জন্য টেলিকমমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।  

সৃষ্টিকর্তার সাথে ইউনূসের বিশ্বাসঘাতকতা:

ড. ইউনূসের আত্মবিশ্বাস ছিল, কোম্পানিগুলোর মধ্যে যে সমঝোতা চুক্তি রয়েছে, তাতে পরবর্তী সময়ে গ্রামীণ টেলিকম ও এর দরিদ্র নারী সদস্যরাই লাভবান হবে। প্রতিষ্ঠানটি ২০০০ সালের পর থেকে সাফল্যের মুখ দেখতে থাকে। সে বছর গ্রামীণফোন ৩০ লাখ ডলার মুনাফা করে।

২০০১ সালে দেশের সেলফোন গ্রাহকের ৬৯ শতাংশই চলে আসে গ্রামীণফোনের দখলে। ২০০২ থেকে ২০০৪— এ সময় একদিকে গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে অর্থ জোগাড়ের লড়াই, অন্যদিকে শুরু হয় টেলিনর ও গ্রামীণ টেলিকমের নিয়ন্ত্রণ লড়াই। উভয় লড়াইয়ে ইকবাল কাদীর ও মারুবিনি তাদের অংশের শেয়ার ড. ইউনুসের কাছে বেচে দিয়ে কোম্পানি থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য হন।

২০০২ থেকে ২০০৪— এ পুরো সময়ে চলে গ্রামীণফোন নিয়ন্ত্রণে অভ্যন্তরীণ লড়াই। কিন্তু বিনিয়োগ সক্ষমতা ও দক্ষতার জোরে টেলিনরের কাছে ইউনূসকেও হার মানতে হয়। যেভাবে তার কাছে হার মেনেছিল ইকবাল কাদীর ও মারুবিনি।

প্ৰতিশ্রুতি ভঙ্গ:

গ্রামীণ ব্যাংকের সবচেয়ে গৌরবজনক বিনিয়োগ ছিল গ্রামীণ ফোন। আর এর জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ ছিলো গ্রামীন নারী। গ্রামীন টেলিকমের লাইসেন্স নেয়ার সময় ধারণা দেয়া হয়েছিল যে গ্রামে গ্রামে নারীদের পরিচালিত কল সেন্টার করে প্রবাসীদের সাথে গ্রামে বসবাসরত তাদের পরিবারের কথা বলার সুযোগ দেয়ার জন্যই গ্রামীণ ফোনের সৃষ্টি।সেসময় তাদের বিজ্ঞাপনগুলোতেও এমন আবেগী সব উপাত্তের দৃশ্যায়ন ঘটিয়েছিল তারা।কিন্তু  সেই নারীরা আজ গ্রামীণ ফোনের মালিক নয়।বর্তমানে টেলিনরত গ্রামীণ ফোনের প্রায় ৫৬% শেয়ারের মালিক।

এছাড়া লাইসেন্স নেওয়ার সময় ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন-গ্রামীণ ফোনের টাকা গরিবের ব্যাংক 'গ্রামীণ ব্যাংকে' যাবে, কিন্তু সেই টাকা গ্রামীণ ব্যাংকে যায়নি। রাষ্ট্রপ্রধানকে আবেগতাড়িত করে রেলের নেটওয়ার্কও গ্রামীন ফোনে ব্যবহার করেন ড. ইউনুস। এভাবে পদে পদে গ্রামীন নারী, উদ্যোক্তা ও দারিদ্রতাকে পুঁজি করে আবেগতাড়িত করেছেন রাষ্ট্র ও দেশের আপামর জনসাধারণকে। কিন্তু দিনশেষে নিজ স্বার্থ হাসিল করে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন ড, ইউনুস। কেননা গ্রামীণ ফোন গ্রামীণ মানুষের প্রতিষ্ঠান হওয়ার কথা থাকলেও তা করেননি ইউনুস। গ্রামীণ মানুষের কোনো কল্যাণেই আসেনি প্রতিষ্ঠানটি।

বিষয়ঃ বাংলাদেশ

Share This Article

শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

ভারতীয় তিন কোম্পানির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা

শেরে বাংলার মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা

হালা রাহারিত

গাজা নীতির বিরোধিতা করে মার্কিন পররাষ্ট্র মুখপাত্রের পদত্যাগ

আওয়ামী লীগ নয়, ক্ষমতায় যেতে বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করে বিএনপি: কাদের

দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে হবে: নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী

বিএনপি গণতন্ত্রে অকার্যকর ডামি রাজনৈতিক দল: ওবায়দুল কাদের

ট্রাম্পের বিচার নিয়ে মার্কিন সুপ্রিমকোর্টে বিভক্তি

বছরে একটি বিসিএস সম্পন্ন করার পরিকল্পনা পিএসসির

আ.লীগ নেতাকর্মীদের দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করার আহ্বান


দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি

বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা জোরদারের সুযোগ রয়েছে

বাংলাদেশে চিকিৎসা সুবিধায় থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী

দুপুরের মধ্যে সিলেট বিভাগে ঝড়-বৃষ্টির আভাস

থাইল্যান্ডের রাজা-রানির রাজকীয় অতিথি শেখ হাসিনা

৪৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা আজ, মানতে হবে যেসব নির্দেশনা

বাল্যবিবাহ রোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান

ওমরাহ পালনে সৌদির উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন পাটমন্ত্রী

‘বাংলাদেশ অনেক পণ্যে এখন স্বাবলম্বী’

বিশ্বব্যাপী সব যুদ্ধ বন্ধের উদাত্ত আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

পাট শিল্পের উন্নয়নে জুট কাউন্সিল গঠন করা হবে

ফসলের মাঠে সোনারঙ, তীব্র গরমেও কৃষকের মুখে হাসি