পাকিস্তানের ফর্মুলা বাংলাদেশে কাজে লাগাতে পারবে না যুক্তরাষ্ট্র!

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ১০:৩৪, রবিবার, ২০ আগস্ট, ২০২৩, ৫ ভাদ্র ১৪৩০

প্রকাশ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দিয়েছিল ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করবে। আর এর কারীগর ছিলেন ডোনাল্ড লু। শেষ পর্যন্ত ইমরান খানকে সরিয়েই ছাড়লো দেশটি, ক্ষমতার শেষভাগে যদিও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন তিনি। কিন্তু এই জনপ্রিয়তার মাঝেও যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রের বলি হতে হয়েছিল তাকে।

দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত ছিল। নানান কারণেই পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীলও হয়ে পড়েছিল। বিশেষ করে সেখানকার সেনাবাহিনী, বিচার বিভাগ এবং রাজনীতিবিদদের একটি বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রের পুতুল হিসেবেই কাজ করতেন। কিন্তু ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে আস্তে আস্তে যুক্তরাষ্ট্রের দাদাগিরি থেকে মুক্ত হয়ে নিজেদের স্বাতন্ত্র অবস্থা তৈরি করার চেষ্টা করেন। আর তখনই ইমরান খান থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেয় যুক্তরাষ্ট্র।

তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপরই ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে উঠে পড়ে লাগে যুক্তরাষ্ট্র। কেননা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে রাশিয়া সফরে গিয়ে দেশটিকে সমর্থন দিয়েছিলেন তিনি। আর এটিই কাল হয়েছিল তার।

এই সমর্থনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’য়ের সাথে একাধিকবার কথা হয় ইমরানের। সেখানে বেশ কয়েকবার হুমকি-ধামকির শিকারও হয়েছিলেন তিনি।

এ কথা প্রকাশ্যে এনে ইমরান খান বলেছিলেন, এইসব বিষয়ে 'লু' খুবই চতুর। কারণ টার্গেটেড ব্যক্তির দেশের রাজনীতিবিদ এমনকি তার বিশ্বস্ত সহকর্মীদের তারই বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে ডোনাল্ড লু সিদ্ধহস্ত। এরই অংশ হিসেবে তাকে ফাঁদে ফেলে অভ্যন্তরীন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাকে ক্ষমতাচ্যূত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া সেনাবাহিনী ও বিচারবিভাগসহ পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ইমরানের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র  যা বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে আদৌ সহজ নয় বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

ডোনাল্ড লু পরপর দুইবার বাংলাদেশ সফর করেছেন। রাজনৈতিক সমসাময়িক বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমেও কথা বলেছেন। তিনি পাকিস্তানের মতো ফর্মুলা বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও প্রয়োগের অপচেষ্টা করছেন এবং শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যূত করতে তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা হচ্ছে,যা প্রধানমন্ত্রী নিজেও স্বীকার করেছেন।

যেসব কারণে পাকিস্তানের ফর্মুলা কাজে আসবে না:

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের প্রেক্ষাপট একদমই ভিন্ন। এখানে এই ফর্মুলা কোনো কাজেই আসবে না।

প্রথমত: পাকিস্তানে ইমরান খানের দল পিটিআই ক্ষমতাচ্যুত হবার পূর্বে খুব বেশি জনপ্রিয় ছিল না,যতটা না এখন। সেনাসমর্থিত বা সোজা কথায় সেনাবাহিনীই তাকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের নতুন করে জনসমর্থন বা আওয়ামী লীগের নতুন কোনো কিছু অর্জন করার নেই। কারণ আওয়ামী লীগ স্বাধীনতাযুদ্ধের অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশের ভিত্তিমূল গ্রথিত একটি দল এবং সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত, কারো ওপর ভর করে নয়।

দ্বিতীয়ত: বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ আরও অনেক বেশি সুসংহত ও সুসংগঠিত এবং শক্তিশালী।

তৃতীয়ত: যুক্তরাষ্ট্র ইমরান খানের দলকে নিয়ে যেভাবে খেলছে ও ভাঙছে, নিজ দলের লোকদের যেভাবে বিরুদ্ধে নিয়ে যেতে পেরেছে সেটা আওয়ামী লীগে কখনোই সম্ভব নয়। কারণ ঐতিহ্য এবং রাজনৈতিক ইতিহাস এটা বলে না। যারা সত্যিকার অর্থে আওমী লীগার তারা কখনোই বিশ্বাসঘাতক হবেননা।

চতুর্থত: শেখ হাসিনা চারবারের প্রধানমন্ত্রী। তিনি ষড়যন্ত্র মোকাবেলা ও পরিপক্কতার দিক থেকে ইমরান খানের চেয়ে অনেক বেশি অগ্রসর। কেননা ষড়যন্ত্র মোকাবেলার শক্তি তিনি প্রথমত ১৫ আগস্ট  ও পরবর্তীতে ২১ আগস্ট থেকে নিয়েছেন। এ দুটি ঘটনা তাঁকে অনেক বেশি সাহসী ও যোগ্যতাসম্পন্ন করে তুলেছে।

পঞ্চমত: বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনী পাকিস্তানের ধারা অনুসরণ করে না। কদাচিৎ তারা সেপথে অগ্রসর হয়েছিল। এছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশের স্বশস্ত্র বাহিনী আগের চেয়ে অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ এবং রাজনীতিকে অযাচিত হস্তক্ষেপ বিরোধী। ফলে আন্তর্জাতিক কুচক্রী মহলের পক্ষে তাদের ব্যবহার করা সহজ হবেনা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ বা ইমরানের পিটিআই ও আওয়ামী লীগ এক নয়। দেশের অর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতেও রয়েছে অনেক পার্থক্য। এছাড়া আওয়ামী লীগের বিপক্ষ শক্তি নয় স্বশস্ত্রবাহিনীও। জনগণকেও সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলা সহজসাধ্য নয় বর্তমান পরিস্থিতিতে। মূলত আওয়ামী লীগের বিপক্ষে জনগণ বা রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে শেখ হাসিনাকে সরানো বিদেশিদের জন্য খুব একটা সহজ হবে না।

Share This Article