বিএনপির ভোট বর্জনের তিক্ত ইতিহাস : দ্বাদশ নির্বাচন আদৌ বর্জন করবে কি দলটি?

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সন্ধ্যা ০৭:৪৮, সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০২৩, ১৩ চৈত্র ১৪২৯

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র বিরোধ চলছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগীরা মনে করে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। অন্যদিকে, বিএনপি ও এর সহযাত্রীদের মতে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন হতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে ভোট বর্জনেও দ্বিধা করবে না দলটি। তবে প্রশ্ন উঠছে, বিএনপি যদি ভোট  বর্জন করে তাহলে দলটির লাভ ক্ষতির হিসেবে কি দাঁড়াবে?

 

বিএনপির ভোট বর্জনের ইতিহাস নতুন নয়। ১৯৮৬ সালের ৭ই মে এরশাদ সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত নির্বাচন বয়কটে মাধ্যমে দলটি প্রথম ভোট বর্জনের চর্চা শুরু করে। এরপর ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে না চাইলেও জোটসঙ্গী জামায়াতের চাপে নির্বাচনে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের কাছে বিপুল ব্যবধানে পরাজিত হয়। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হলে আওয়ামীলীগ সরকারের অধীনে ২০১৪ সালের  ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় নির্বাচন বয়কট করে দলটি। তবে ১৪ সলের নির্বাচন বয়কট যে দলটির জন্য ভালো হয়নি তা স্বীকার করতে বাধ্য হন বিএনপি সমর্থিত সকল বুদ্ধিজীবী, এমনকি দলীয় ফোরামেও তা স্বীকৃত হয়। ফলে ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে 'জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে স্বতস্ফূর্তভাবে অংশ নেয় দলটি। তবে নির্বাচনে ঐতিহাসিক পরাজয় ঘটে বিএনপির। সরাসরি নির্বাচনে মাত্র ৫টি আসন পায় তারা।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপিকে চরম বৈরী পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছিলো রাজনীতির মাঠে। নেতাকর্মীরা একরকম ব্যাকফুটে চলে যান।নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়েও দলের অভ্যন্তরে চরম সঙ্কট তৈরি হয়। তবে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে দল চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও জাতীয় সংসদে কথা বলার সুযোগ পাওয়ায় হাতে গোনা কয়েকজন এমপির সক্রিয়তায় দলে কিছুটা চাঙ্গাভাব আসে। কিন্তু গত বছর আগষ্টে শুরু হওয়া আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় সংসদ থেকে তাদের সদস্যরা পদত্যাগ করে, যা নিয়ে দলের অভ্যন্তরে পুনরায় অসন্তোষের সৃস্টি হয়। সমালোচিত হয় সর্ব মহলে।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহন করবেনা বলে জানিয়েছে দলটি, যদিও রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। তবে নির্বাচন বয়কট করে তারা কি অর্জন করতে পারবে, সে বিষয়টি ২০১৪ এর নির্বাচনে আলোচনায় না এলেও বর্তমানে দলীয় ফোরামে জোরেশোরেই উচ্চারিত হচ্ছে বিষয়টি। নেতৃবৃন্দের বড়ো একটি অংশ মনে করছেন, অতীতে নির্বাচন বয়কট করে বিএনপির কোনো লাভ হয়নি,বরং সামগ্রিকভাবে দলটি ক্ষতিগ্রস্তই হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পরাজিত হলেও বিষয়টি নিয়ে ঘরে বাইরে ও আন্তর্জাতিকভাবে আলোচনা-সমালোচনা ও সংগ্রাম করার জন্য দৃঢ় নৈতিক ভিত্তি তৈরি হয়, যা দলটির জন্য একটি বড় সুযোগ তৈরি করে। কিন্তু নির্বাচনে অংশ না নিয়ে দল শুধু সেই সুযোগ থেকেই বঞ্চিত হয়না, দলীয়ভাবেও দুর্বল হয়ে পড়ে। ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করে বিএনপি সেটি হাড়ে হাড়ে বুঝতে সক্ষম হয়েছে। কাজেই বিএনপি মুখে যতই বলুক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবেনা, কিন্তু আদৌ তারা এবার নির্বাচন বর্জন করবে বলে মনে হয়না।

বিশ্লেষকরা আরও বলেন, বাইরের কেউ এসে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে না। জনগণের রায় নিয়েই ক্ষমতায় যেতে হবে। আর জনপ্রিয়তা যাচাই করতে হলে বিএনপিকে নির্বাচনে গিয়েই তা করতে হবে। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করছে, কিন্তু এর পক্ষে তো মানুষকে মাঠে নামাতে পারছে না। এর অর্থ তাদের দাবির প্রতি জনগণের সমর্থন নেই। এখন আওয়ামী লীগ না চাইলেও বিএনপির উচিত নির্বাচনে অংশ নিয়ে নিজেদের জনপ্রিয়তা প্রমাণ করা। জনগণ তাদের সঙ্গে থাকলে কেউ ভোটের ফল উল্টে দিতে পারবে না। এখন দ্বাদশ নির্বাচনে বিএনপি না গেলেও একতরফা নির্বাচন হবে। তখন জনসম্পৃক্ততা না পেয়ে কিছুই করার থাকবে না বিএনপির।

একই সাথে ভোট বর্জনের নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে বিএনপিকে। আর বর্জন দিয়ে যে কিছু অর্জন করা যায় না, ২০১৪ সালের নির্বাচনই তার প্রমাণ। ২০১৫ সালে বিএনপি আন্দোলনের নামে দেশব্যাপী সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য চালিয়েছে। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সে রকম পরিস্থিতি তৈরি হোক, তা কেউ চায় না। আর এটা মনে রাখতে হবে বিএপিকে।

সর্বোপরি জনগণ ভোট দিতে না পারলে আন্দোলন গড়ে উঠবে। মানুষ মাঠে নামবে। কিন্তু ভোট বর্জন করলে সেটি হবে না। দল আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তখন আরও সংকট তৈরি হবে। এখন পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিৎ বলেও জানান বিশ্লেষকরা।

বিষয়ঃ বিএনপি

Share This Article