আন্দোলনের তহবিল আত্মসাৎ বিএনপি নেতাদের!
যে কোনো কর্মীসূচিতে বর্ধিত সভা, সমাবেশ বা মহাসমাবেশের জন্য দলীয়ভাবে অর্থ বরাদ্দ থাকলেও তা তৃণমূল ও জেলা-উপজেলার নেতা-কর্মীরা তেমন কোনো বরাদ্দ পাননি। তাই কর্মী সমাবেশে লোক সমাগম ঘটাতে পারেননি বলে আক্ষেপ করেন তারা।
গত বছরের ২৮ অক্টোবর থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত একযোগে আন্দোলন করে বিএনপি। আড়াই মাসের বেশি সময় ধরে চলা ওই আন্দোলন পরিচালিনায় গঠন করা হয় তহবিল। আর তহবিলের অর্থ খরচ হওয়ার কথা ছিল গ্রেফতারকৃত, আহত বা ক্ষতিগ্রস্ত নেতা-কর্মীদের দেখভালে। কিন্তু তহবিলের অর্থ খরচে বিরাট অঙ্গতি ধরা পড়ে দলের বিভিন্ন প্রতিবেদনে।
কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতাদের স্বীকারোক্তিতেও আন্দোলনকালীন তহবিলের অর্থ নয়-ছয়ের তথ্য পাওয়া গেছে, যা আত্মসাৎ করেছেন বিভাগীয় দায়িত্বশীল নেতারা।
সিনিয়র নেতারা জানান, সরকারবিরোধী আন্দোলন পরিচালনা, নেতা-কর্মীদের খাওয়া-দাওয়া, যাতায়ত ভাড়াসহ তাদের পাশে থাকার জন্যও তহবিল থেকে দায়িত্বশীল নেতাদের অর্থ দেয়া হয়। এর বাইরে আন্দোলনের নামে ধর্নাঢ্য নেতা কিংবা শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকেও চাঁদা সংগ্রহ করা হয়। তবে অসৎ লোভী দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কারণে তার ছিঁটেফোঁটাও পাননি কর্মীরা। এ কারণে অনেক এলাকায় আন্দোলন গড়ে ওঠেনি।
সূত্রমতে, আন্দোলনের তহবিলের সবচেয়ে বেশি অর্থ লোপাটের ঘটনা ঘটেছে রাজশাহীতে। রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। তবে তার অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব দেওয়া হয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকতকে। আন্দোলনের জন্য কেন্দ্র থেকে অর্ধ কোটি টাকা প্রেরণ করা হয় তার হাতে। কিন্তু টাকা হাতে পাওয়ার পরও নামকাওয়াস্তে তা কর্মীদের জন্য খরচ করেন শাহীন। রাজশাহীর মতো ভয়াবহ আর্থিক অনিয়ম হয়েছে বরিশাল, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগে। এসব বিভাগের কর্মীরা দুর্বিষহ জীবন অতিবাহিত করলেও ফুলে ফেপে উঠেছেন দলের বিভাগীয় দায়িত্বশীল নেতারা। কেউ কেউ এলাকায় গড়েছেন পরিবহণ ব্যবসা ও বহুতল ভবন।
কর্মীদের ভাষ্য, যে কোনো কর্মীসূচিতে বর্ধিত সভা, সমাবেশ বা মহাসমাবেশের জন্য দলীয়ভাবে অর্থ বরাদ্দ থাকলেও তা তৃণমূল ও জেলা-উপজেলার নেতা-কর্মীরা তেমন কোনো বরাদ্দ পাননি। তাই কর্মী সমাবেশে লোক সমাগম ঘটাতে পারেননি বলে আক্ষেপ করেন তারা।
দায়িত্বশীল নেতারা আসা-যাওয়া, খাওয়াসহ অন্যান্য কার্যক্রমে কর্মীদের কোনো ধরনের আর্থিক সহায়তা দেননি। উল্টো আত্মসাৎ করে নিজের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারিত করেছেন। এছাড়া আন্দোলন চলাকালে দলীয় আর্থিক তহবিলের সহায়তার বাইরেও বিভাগীয় অনেক ধর্নাঢ্য নেতা ও ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছেন দায়িত্বশীলরা। তা থেকেও বঞ্চিত করা হয় তৃণমূল নেতা-কর্মীরাদের।