যেভাবে তীব্র গরমে নিজেদের শীতল রাখে প্রাণীরা

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ বিকাল ০৪:২০, মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই, ২০২২, ৪ শ্রাবণ ১৪২৯

তীব্র গরম থেকে বাঁচার জন্য মানুষ কতই না বুদ্ধি বের করেছে। ফ্যান, এয়ার কন্ডিশনার, ছাতা, ঠান্ডা পানীয়; গরমে আরাম পাওয়ার জন্য মানুষ এসব কৃত্রিম উপায়ের আশ্রয় নেয়। বিজ্ঞান যত উন্নত হয়েছে, মানুষের এসব উপায়ও পাল্টে গেছে।

 

কোনো একসময় মাটির পাত্রে পানি রাখা হতো। বৈজ্ঞানিক কারণেই সে পানি ঠান্ডা হয়ে যেত। এরপর মানুষ রেফ্রিজারেটর আবিষ্কার করল, পানি আরও বেশি ঠান্ডা হলো। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাচ্ছে। সে উষ্ণতা থেকে বাঁচতে মানুষ নিজেদের আবিষ্কৃত প্রযুক্তি ব্যবহার করে সে জলবায়ুকে আরও খারাপের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মানুষের শরীরে ঘাম হয়। মস্তিষ্ক শরীরকে বার্তা পাঠায় শীতল হওয়ার জন্য। এরপর শরীরের বিভিন্নস্থানের ঘামগ্রন্থি কাজে লেগে পড়ে। শরীরের মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রা তখন ত্বকে লেগে থাকা ওই ঘামকে বাষ্পে পরিণত করে। আর এভাবেই আমাদের শরীর ঠান্ডা হয়।

তীব্র গরমে প্রাণীদেরও কষ্ট হয়। সে কষ্ট থেকে আরামের জন্য প্রাণীরা নিজস্ব কিছু উপায় অবলম্বন করে। কখনো প্রকৃতি থেকে সাহায্য নিয়ে, আবার কখনো নিজের শরীরকে ব্যবহার করে গরমে শীতল থাকার চেষ্টা করে বিভিন্ন প্রাণী। চলুন দেখে নেওয়া যাক কয়েকটি প্রাণীর এরকম শীতল থাকার পদ্ধতি।

শূকর
গরম লাগলে মানুষ ঠান্ডা পানিতে গা ধুয়ে নেয়। শহরবাসী 'শাওয়ার'র তলায় আশ্রয় নেন, গ্রামের মানুষ পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়েন। শূকরেরা কাদার মধ্যে একচোট গড়িয়ে নিয়ে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।


বেশি গরম পড়লে কাদায় গড়াগড়ি খায় শূকর। ছবি: লাইটপয়েট/প্যান্থারমিডিয়া/ইমাগো ইমেজেস
শূকর ঘামাতে পারে না। তাই তাদেরকে কাদার ওপর ভরসা করতে হয়। শূকরের ক্ষেত্রে 'শাওয়ার নেওয়া' বা পুকুরে গা ডোবানোতে খুব একটা কাজের হয় না। নরম কাদায় গড়াগড়ি খেলে শূকরের শরীর দীর্ঘক্ষণ ঠান্ডা থাকে।

ফেনেক খেঁকশিয়াল
ফেনেক ফক্সগুলো মরুভূমিতে বাস করে। খেঁকশিয়াল, কুকর, নেকড়ে, শিয়াল গোত্রের যেকোনো প্রাণীর তুলনায় ফেনেক ফক্সের কান শরীরের আকারের সাপেক্ষে সবচেয়ে বড় হয়।

বালুর তলায় শিকার খোঁজার জন্য নিজেদের কান ব্যবহার করে শিয়ালগুলো। এছাড়া দেহের তাপমাত্রা কমানোর ক্ষেত্রেও কানের আশ্রয় নেয় এ প্রাণীগুলো। মরুভূমিতে বাস করা যেকোনো প্রাণীর জন্যই পানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফেনেক ফক্সের বড় কানগুলো শরীর থেকে তাপ বাইরে বের করে দেয়। এর ফলে ঘামের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পানি আর বেরিয়ে যেতে পারে না। সাহারার মতো মরুভূমি, যেখানে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে, সেখানে এ কৌশলটি খুব কাজে দেয়।

হাতি
সাধারণত প্রাণীদের শরীরে থাকা পশমের মূল কাজ হচ্ছে শরীরকে উষ্ণ রাখা। কিন্তু হাতির ক্ষেত্রে পশম উল্টো কাজটি করে। এদের শরীরে গজে ওঠা ছোট ছোট পশম হাতির বিশাল দেহকে শীতল রাখে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের অনুসন্ধানে জানা গেছে, পশমগুলো শীতলকরণ পাখা হিসেবে কাজ করে। একটি তারের মধ্য দিয়ে যেভাবে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়, একইভাবে হাতির শরীর থেকে পশমগুলোও উষ্ণতা পরিবেশে সরিয়ে দেয়।

কাঠবিড়ালী
কাঠবিড়ালীর শরীরেও পশম রয়েছে। এ পশম শীতকালে প্রাণীটির দেহকে উষ্ণ রাখে। কিন্তু গ্রীষ্মকালে পশম দিয়ে বিশেষ উপকার হয় না গাছের বাসিন্দা এ প্রাণীর।

কিন্তু শীতল থাকার জন্য কাঠবিড়ালী নিজেদের শরীরকে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। কাঠবিড়ালীর থাবার কিছু অংশে শীতকালে পশম থাকে, অথচ গ্রীষ্মকালে সেসব পশম উধাও হয়ে যায়। আর থাবার এ অংশগুলো দিয়েই কাঠবিড়ালী নিজেদের শরীর থেকে অতিরিক্ত তাপের কিছু অংশ বাইরে বের করে দেয়। তবে এর পরিমাণটা খুব বেশি নয়। ফলে বেশি গরম পড়লে ছায়ার আশ্রয় নিতে হয়, জলাশয়ের আশেপাশে অবস্থান করতে হয় এ প্রাণীটিকে।

উট
লালমোহনবাবু ভেবেছিলেন, উট তার পাকস্থলী থেকে জলের ব্যবস্থা করে। ফেলুদা তার ভুল শুধরে দেন। লালু গাঙ্গুলির মতো অনেকে হয়তো মনে করেন, উঁটের কুঁজে পানি জমানো থাকে। কিন্তু উট আসলে তার কুঁজে সরাসরি পানি সঞ্চয় করে না। বরং চর্বি থাকে কুঁজগুলোতে, সে চর্বি থেকেই পানি তৈরি করে নেয় উট।


উট কুঁজে সরাসরি পানি সঞ্চয় করে না। ছবি: ইমেজব্রোকার/ইমাগো ইমেজেস
এ প্রক্রিয়ায় উটের দেহও শীতল থাকে। উট বাহ্যিক পানি ছাড়া কয়েক সপ্তাহ ও কয়েক মাসও চলতে পারে। এরকম প্রতি যাত্রায় ১০০ লিটার পর্যন্ত পানি পান করে প্রাণীটি।

কুকুর
অনেক জাতের কুকুর তাদের শরীরে ত্বকের মধ্য দিয়ে ঘামাতে পারে না। তাই এগুলো থাবা ও নাকের মধ্য দিয়ে তাপ নিঃসরণ করে। অনেক সময় কুকুরকে দেখা যায় জিভ বাইরে বের করে হাঁপাতে। এটিও তাদের দেহ শীতল রাখার একটি কৌশল।

তাপমাত্রা বাড়লে কুকুর প্রতি মিনিটে ৪০০ বারের মতো শ্বাসপ্রশ্বাস ফেলতে পারে। জিভের মধ্য দিয়ে অতিরিক্ত তাপ বাষ্পে পরিণত হয়ে বাইরে বেরিয়ে যায়। একই সময়ে ফুসফুসের গরম বাতাস বের করে দিয়ে বাইরের তুলনামূলক শীতল বাতাস গ্রহণ করে কুকুর।

অনেক প্রাণীই নিজেদের শরীরের তাপমাত্রা ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তাই তাপমাত্রা বেড়ে গেলে অনেক প্রাণীরই হিটস্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই পোষা প্রাণীর মালিকদের বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। প্রাণীর জন্য প্রয়োজনীয় ছায়া ও পানির ব্যবস্থা করতে হবে। বেশি গরম পড়লে পোষা প্রাণীকে ঘরের ভেতরেই রাখতে হবে এবং ঘরে পর্যাপ্ত পরিমাণে বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

সূত্র: ডয়েচে ভেলে

বিষয়ঃ গবেষণা

Share This Article