নড়াইলের স্কুল, কলেজে মোবাইল ফোন আনায় নিষেধাজ্ঞা

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ বিকাল ০৫:০৪, শনিবার, ২ জুলাই, ২০২২, ১৮ আষাঢ় ১৪২৯
ফাইল ফটো
ফাইল ফটো

নড়াইল জেলার সব স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন আনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার নড়াইল জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম ছায়েদুর রহমান এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেন।

 

মোবাইল ফোন ব্যবহার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে না আনার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য আসন্ন ঈদের ছুটির পর নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিয়ে অভিভাবক সমাবেশ হবে।

নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের এক শিক্ষার্থীর ফেসবুক পোস্টের জের ধরে ব্যাপক সহিংসতা ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে হেনস্তার ঘটনার পর এ নির্দেশনা আসে।

এ ছাড়া, নির্দেশনাটি কঠোরভাবে বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষকদের তৎপর থাকতে এবং প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের ব্যাগ পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে।

একইসাথে, কোনো শিক্ষার্থীর কাছে মোবাইল পাওয়া গেলে তা নিয়ে নেওয়াসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন আনা নিষেধ থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীরা গোপনে মোবাইল আনছে এবং ভালো-মন্দ বিবেচনা না করে বিভিন্ন ধরনের বিতর্কিত পোস্ট, লাইক এবং শেয়ার নিয়ে বিব্রতকর ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে।

শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম ছায়েদুর রহমান বলেন, 'সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিতর্কিত পোষ্টের কারণে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোবাইল বন্ধের দাবি ওঠেছে। তাই এই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।'

ফেসবুকে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মার সমর্থনে কলেজের এক হিন্দু শিক্ষার্থীর পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে গত ১৮ জুন দিনভর নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ, সহিংসতা চলে।

গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয় ওই শিক্ষার্থীর পক্ষ নিয়েছেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস।

এরপর পুলিশ পাহারায় বিকেল ৪টার দিকে স্বপন কুমার বিশ্বাসকে ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে দাঁড় করিয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয় একদল ব্যক্তি।

শিক্ষক স্বপন কুমার হাত উঁচিয়ে ক্ষমা চাইতে থাকেন।

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সাথে কথা বলার সময় স্বপন কুমার জানান, তিনি সাহায্যের জন্য কয়েকজন শিক্ষকের কাছে গিয়েছিলেন, কিন্তু তারা নীরব ছিলেন।

"সকালে কয়েকজন ছাত্র আমাকে ঘটনাটি জানালে আমি তিনজন শিক্ষককে ডেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি। তাদের একজন পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এবং অন্যজন স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি আক্তার হোসেন টিংকু"

"কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার ক্ষেত্রে, আমি সাধারণত প্রথমে এই তিন শিক্ষককে জানাই। আমি বিষয়টি স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে জানানোর বিষয়ে আলোচনা করেছি, কিন্তু তারা কিছু বলেননি এবং নীরব ছিলেন," বলছিলেন তিনি।

তবে আক্তার হোসেন টিংকু এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি পুলিশের কাছে গিয়ে পোস্টদাতা ছাত্রের শাস্তি নিশ্চিত করতে রাজি হন।

কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই স্থানীয়, কলেজগামী ও আশেপাশের মাদ্রাসার ছাত্ররা স্কুল চত্বরে জড়ো হয়।

স্বপন জানান, ওই সময় তিনি কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান, সংসদ সদস্যসহ অন্যদের ফোন করলেও কেউ তাকে সাহায্য করেনি।

অধ্যক্ষ স্বপনের মোটরসাইকেলসহ মোট তিনটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয় হিতাহিৎ জ্ঞানশূন্য উপস্থিত জনতা।

পরে তাকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়। শতাধিক পুলিশ ঘিরে থাকা সত্ত্বেও তাকে উপস্থিত জনতা মারধর করে জুতার মালা পরতে বাধ্য করে।

মোবাইল ফোনে ধারণ করা এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পুলিশের সামনে শিক্ষকের এমন অপদস্ত হওয়ার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে সারাদেশে।

বিষয়ঃ ICT বাংলাদেশ

Share This Article