যে কারণে সাফা-মারওয়া পাহাড়ে সাঈ করতে হয়

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ দুপুর ০১:০৪, শনিবার, ২ জুলাই, ২০২২, ১৮ আষাঢ় ১৪২৯

সাফা-মারওয়া মক্কায় অবস্থিত প্রসিদ্ধ দুটি পাহাড়ের নাম। সাফা-মারওয়া, হাজেরা, ইবরাহিম খলিল ও শিশু ইসমাঈল (আ.)—এই নামগুলো একই সুতায় গাঁথা। হজ ও ওমরাহর সঙ্গে এই পাহাড় দুটির আছে নিবিড় সম্পর্ক। হজ ও ওমরাহর অংশ হিসেবে এই দুই পাহাড়ের মাঝে সাতবার সাঈ বা আসা-যাওয়া করতে হয়।

আল্লাহ বলেন, ‘নিঃসন্দেহে সাফা ও মারওয়া আল্লাহ তাআলার নিদর্শনগুলোর অন্যতম। সুতরাং যারা কাবা ঘরে হজ বা ওমরাহ পালন করে, তাদের পক্ষে এ দুটিতে প্রদক্ষিণ করাতে কোনো দোষ নেই। বরং কেউ যদি স্বেচ্ছায় কিছু নেকির কাজ করে, তবে আল্লাহ তাআলার অবশ্যই তা অবগত হবেন এবং তার সে আমলের সঠিক মূল্য দেবেন। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১২৮)

যেভাবে শুরু হয় সাফা-মারওয়ায় সাঈ

মক্কা নগরীতে তখন কোনো বসতি ছিল না। চারপাশে শুধু মরুভূমি। বালুর এই বিশাল সাগরে কোথাও কোনো মানুষের আনাগোনা নেই। সে সময় আল্লাহ তাআলার হুকুমে ইবরাহিম (আ.) তাঁর স্ত্রী হাজেরা ও পুত্র ইসমাঈলকে সেখানে রেখে আসেন। তখন স্ত্রী ইবরাহিম (আ.)-কে বলেন, হে ইবরাহিম! আপনি আমাদের কার কাছে রেখে যাচ্ছেন? ইবরাহিম (আ.) বলেন, আল্লাহর কাছে। হাজেরা বলেন, আমি আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট।

হাজেরা (আ.)-এর কাছে অল্প কিছু খাবার ও পানি ছিল। যখন খাবার ও পানি শেষ হলো, কাঠফাটা রোদ, উত্তপ্ত বালুকণা আর তৃষ্ণার্ত ইসমাঈলকে দেখে হাজেরা ব্যাকুল হয়ে যান শিশুপুত্রের তৃষ্ণা নিবারণের জন্য। তিনি দিগ্বিদিক ছুটে বেড়ান। পিপাসায় কাতর ইসমাঈলের জন্য একফোঁটা পানি নেই। এমন পরিস্থিতিতে কী করবেন হাজেরা! অস্থির হয়ে তিনি ছুটে চলেন পাহাড়ের দিকে। একবার সাফা পাহাড়ে আরোহণ করেন, আবার সেখান থেকে নেমে আসেন। আর ফিরে দেখেন নিজের কলিজার টুকরা শিশু ইসমাঈল এখনো বেঁচে আছেন কি না? ঢালুতে এসে কলিজার টুকরা তাঁর চোখের আড়াল হয়ে যেত, তাই তিনি দৌড়ে পার হন, আর আরোহণ করেন মারওয়ায়। এভাবে তিনি সাতবার দৌড়ান। মহান আল্লাহর কাছে হাজেরা (আ.)-এর এই দৌড় এতটাই পছন্দ হয়েছে যে উম্মতে মুহাম্মদির জন্য তা অবধারিত করে দিয়েছেন।

আমাদের জন্য শিক্ষা

এক. আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রাখা। যখন হাজেরা (আ.)-কে ইবরাহিম (আ.) নির্জন মরু প্রান্তরে একাকী ছেড়ে যাচ্ছেন, তিনি ইবরাহিম (আ.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি আমাদের এভাবে একাকী কার কাছে রেখে যাচ্ছেন? তখন তিনি উত্তরে বললেন, আল্লাহর কাছে, আল্লাহর আদেশে। তখন হাজেরা বললেন, তাহলে আল্লাহ আমাদের ধ্বংস করবেন না। তাঁর পূর্ণ বিশ্বাস ছিল যে আল্লাহ তাআলা এই নির্জন এলাকায় আমাদের রক্ষা করবেন। (বুখারি, হাদিস : ৩৩৬৪)

হাজেরা (আ.)-এর আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করা যে অনুকূল-প্রতিকূল যেকোনো পরিস্থিতিতে আল্লাহ তাআলা মানুষকে সাহায্য করতে পারেন।

দুই. আল্লাহর ওপর ভরসা রাখার পাশাপাশি নিজে চেষ্টা করা এবং উপায় অবলম্বন করা। যখন হাজেরা (আ.)-এর পানি শেষ হয়ে যায়। তখন আপাতদৃষ্টিতে তাঁর কাছে কোনো উপায় ছিল না। তথাপি তিনি বসে না থেকে এ মরু প্রান্তরে চেষ্টা করে গেলেন।

তিন. ধারণাহীন জায়গা থেকে সাহায্য আসা। হাজেরা (আ.)-এর ঘটনা আমাদের এই শিক্ষা দিয়ে যায় যে বান্দাকে আল্লাহ তাআলা এমন উত্স থেকে রিজিক দান করেন, যা কল্পনাও করতে পারবে না। শিশু ইসমাঈলের পায়ের নিচ থেকে মাটি ফেটে পানির ফোয়ারা সৃষ্টি করে আল্লাহ তাআলা মুমিনকে শিক্ষা দিয়েছেন যে আল্লাহ তাআলা এভাবেই ধারণাতীত জায়গা থেকে রিজিক দান করতে সক্ষম।

আল্লাহ তাআলা আমাদের বোঝার  তাওফিক দান করুন।

 

Share This Article