করোনার অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তনের বাজেট

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সন্ধ্যা ০৬:২৫, রবিবার, ১২ জুন, ২০২২, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯

জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেছেন। আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার প্রস্তাব করা হয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এ হার গত বাজেটে ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে এ ঘাটতি মেটানো হবে।

বৃহস্পতিবার (৯ জুন) জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্বে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে উপস্থিত ছিলেন। এটি আওয়ামী লীগ সরকারের ২৩তম, বাংলাদেশের ৫১তম ও বর্তমান অর্থমন্ত্রীর ৪র্থ বাজেট।

প্রস্তাবিত এ বাজেটে ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ১২ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা, যার মধ্য থেকে ১৭ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করা হবে। ফলে, প্রকৃত বৈদেশিক ঋণ দাঁড়াবে ৯৫ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা।

অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে যে ঋণ নেওয়া হবে তার মধ্যে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা নেওয়া হবে ব্যাংক থেকে। এর মধ্যে দীর্ঘ মেয়াদি ঋণ ৬৮ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। ল্প মেয়াদি ঋণ ৩৮ হাজার ১৪২ কোটি টাকা। এছাড়া, ব্যাংকবহির্ভূত ঋণ ধরা হচ্ছে ৪০ হাজার ১ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় সঞ্চয়পত্র প্রকল্প থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে নেওয়া হবে ৫ হাজার ১ কোটি টাকা।

নতুন অর্থবছরের বাজেটে পরিচালন ব্যয় ধরা হচ্ছে ৪ লাখ ১১ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে আবর্তক ব্যয় ২ লাখ ৭৩ হাজার ২৪২ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ৭৩ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণের সুদ ৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। মূলধন ব্যয় ধরা হচ্ছে ৩৮ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা। খাদ্য খাতে ব্যয় ৫৪০ কোটি টাকা এবং ঋণ ও অগ্রিম ব্যয় ছয় হাজার ৫০১ কোটি টাকা ধরা হয়েছে।

বাজেটে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং কৃষি, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ, কর্মসংস্থান ও শিক্ষা প্রভৃতি খাতকে।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, কোভিড-১৯ এর প্রভাব মোকাবিলা করে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং জনগণের অভিঘাত মোকাবিলার যে দৃঢ়তা রয়েছে তার ওপর ভিত্তি করেই অর্থনীতি তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে, অন্তত তিনটি কারণে আমরা অত্যন্ত সচেতনতার সাথে আগামী বছরের বাজেট কাঠামো প্রণয়ন করেছি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে সৃষ্ট ক্ষতি মোকাবিলা বিবেচনায় নিয়ে আমরা কাজ করেছি। রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের ফলে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ঝুঁকির আশঙ্কা বিবেচনা করে আগামী দিনের কৌশল নির্ধারণ করেছি। এছাড়া, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলসহ প্রধান প্রধান সকল আমদানি দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি এবং সরবরাহ ব্যাহত হয়ে সামগ্রিকভাবে আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতির যে সম্ভাবনা রয়েছে সেটিও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। জনগণের চাহিদা ও স্বাস্থ্য খাতে উদ্ভূত প্রয়োজন মেটানো এবং দেশের মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার বিষয়টি বিবেচনা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সার্বিকভাবে কোভিড-১৯ ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ উদ্ভূত অর্থনৈতিক সংকট হতে উত্তরণ, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত প্রণোদনা প্যাকেজসমূহের বাস্তবায়ন, অগ্রাধিকারভুক্ত প্রকল্পসমূহের কাজ সময়মতো সম্পন্ন করা, সামাজিক নিরাপত্তার আওতা সম্প্রসারণ, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, কৃষি খাতে প্রণোদনা প্রদানসহ সর্বোপরি অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষাকে বিবেচনায় নিয়ে মূলত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তুত করা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, রাজস্ব আহরণের সিংহভাগ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। সুতরাং, রাজস্ব আহরণে গতি সঞ্চারের লক্ষ্যে এ সরকারের বিগত ১৩ বছরে কর রাজস্ব ব্যবস্থায় বেশকিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে, সরকারের রাজস্ব আহরণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে যেখানে এনবিআর কর রাজস্ব আহরণ ছিল ৫২ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা, সেখানে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা। জুলাই ২০১৯ থেকে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা হলেও এর প্রাথমিক ধাক্কা ও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধিতে কিছুটা সময় লেগেছে। সে কারণে আমরা ভ্যাট আদায় বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস স্থাপন শুরু করেছি।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে মধ্যবিত্ত বা তদূর্ধ্ব শ্রেণির জনসংখ্যা প্রায় ৪ কোটির মতো, যার অধিকাংশই আয়কর দিচ্ছে না। ফলে, কর ফাঁকি রোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণসহ করযোগ্য আয়ধারী সকলকে কর-জালের আওতায় আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমরা টিআইএনধারীর সংখ্যা ১ কোটিতে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি এবং বিগত ৪ বছরে প্রতিবছর গড়ে ১০ লাখেরও বেশি হারে এ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এপ্রিল ২০২২ নাগাদ এ সংখ্যা ৭৫.১০ লাখে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। পাশাপাশি, মার্চ ২০২২ নাগাদ কর প্রদানকারীর সংখ্যা বেড়ে ২৯ লক্ষে দাঁড়িয়েছে। কর দাখিল সহজ করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। এটি হবে সহজবোধ্য এবং ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের জন্য এক পাতায়। এছাড়া, কিছু ক্ষেত্র ব্যতিত সকলের জন্য রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হবে।

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, দেশে ভারী শিল্পের বিকাশ ও আমদানি বিকল্প শিল্পোৎপাদনকে ত্বরান্বিত করার স্বার্থে বিগত বাজেটে আমরা ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছিলাম এবং এটি বাস্তবায়নে শুল্ক-কর খাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলাম। যেসব পণ্য দেশেই উৎপাদন সম্ভব, সেগুলোর অভ্যন্তরীণ উৎপাদনকে উৎসাহ প্রদান এবং আমদানিকে নিরুৎসাহিতকরণের লক্ষ্যে আগামী বাজেটেও আমরা পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব করেছি।

প্রস্তাবিত রাজস্ব আয়:
আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড উৎস থেকে ৩ লাখ ৭০ হাজার এবং অন্যান্য উৎস হতে ৬৩ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে।

প্রস্তাবিত ব্যয়:
আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বাজেটের আকার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৫.২ শতাংশ। পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৪ লাখ ৩১ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে।

বাজেট ঘাটতি ও অর্থায়ন:
প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫.৫ শতাংশ।

উল্লেখ্য, এ হার গত বাজেটে ছিল ৬.২ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস হতে এ ঘাটতি মেটানো হবে।

সামগ্রিক ব্যয় কাঠামো

প্রস্তাবিত বাজেটের সামগ্রিক ব্যয় কাঠামো (উন্নয়ন ও পরিচালন ব্যয়) তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সম্পাদিত কাজের শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী কাজগুলোকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়—সামাজিক অবকাঠামো, ভৌত অবকাঠামো ও সাধারণ সেবা খাত।

প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক অবকাঠামো খাতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২৭.০৫ শতাংশ। এর মধ্যে মানবসম্পদ খাতে (শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খাত) বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। ভৌত অবকাঠামো খাতে প্রস্তাব করা হয়েছে ২ লাখ ৮৬০ কোটি টাকা বা ২৯.৬২ শতাংশ। এর মধ্যে সার্বিক কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ৮৬ হাজার ৭৯৮ কোটি; যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে ৭৯ হাজার ২৬ কোটি এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ২৬ হাজার ৬৫ কোটি টাকা। সাধারণ সেবা খাতে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ২০৮ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২২.৫৯ শতাংশ।

সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি), বিভিন্ন শিল্পে আর্থিক সহায়তা, ভর্তুকি, রাষ্ট্রায়ত্ত, বাণিজ্যিক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের জন্য ব্যয় বাবদ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ৫৩ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৭.৮৪ শতাংশ। সুদ পরিশোধ বাবদ বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে ৮০ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১১.৮৫ শতাংশ। নিট ঋণদান ও অন্যান্য ব্যয় খাতে প্রস্তাব করা হয়েছে ৭ হাজার ৪১ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১.০৪ শতাংশ।

Share This Article

কোনো প্রার্থীর প্রচারে থাকলে এমপিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা: ইসি আলমগীর

‘প্রার্থিতা নিয়ে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা দলীয় নির্দেশনা না মানলে ব্যবস্থা’

মার্কিন হুমকি উপেক্ষা করে সম্পর্ক বাড়ানোর ঘোষণা ইরান-পাকিস্তানের

থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা

ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে পাকিস্তানকে সতর্ক করল যুক্তরাষ্ট্র

পাটশিল্পের উন্নয়নে জুট কাউন্সিল গঠন করা হবে : নানক

বাংলাদেশ ও মরিশাসের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা

উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী তিমুর ইভানভ

রাশিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগে উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রীকে গ্রেপ্তার

ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায় ভারত

উত্তপ্ত মধুখালী, পুলিশের ওপর হামলা, সংঘর্ষে প্রাণ নাশ!