খুলনার কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নে বাধা অপ্রশস্ত মহাসড়ক

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সন্ধ্যা ০৬:০৭, রবিবার, ১২ জুন, ২০২২, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯

পদ্মা সেতু চালুর পর খুলনা অঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়নের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তনে এ অঞ্চলে ছোট-বড় শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে। শ্রমবাজার প্রসারিত হবে। ঢাকাসহ উত্তরাঞ্চলের অন্য জেলার সঙ্গেও পণ্য আনা-নেওয়া সহজ হবে।

এ ছাড়া সুন্দরবন ও কুয়াকাটাসহ পর্যটন শিল্পেরও বিকাশ ঘটবে। এতে সড়ক-মহাসড়কে যানবাহনের ব্যাপক চাপ বাড়বে। কিন্তু খুলনা অঞ্চলের সড়ক বিশেষ করে মহাসড়ক অপ্রশস্ত হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া যাবে না। এজন্য বিশিষ্টজনরা এখনই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

আগামী ২৫ জুন স্বপ্নের পদ্মা সেতু খুলে দেওয়া হচ্ছে। এ সেতু ব্যবহারের সুযোগে ৮-১০ চাকার ভারী যানবাহন খুলনা অঞ্চলে যাতায়াত করবে। কিন্তু এ অঞ্চলের সড়ক-মহাসড়ক ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য সম্পূর্ণ উপযোগী নয়। যানবাহন চলাচলের হার দ্বিগুণ হবে। যানবাহনের চাপ সামলাতে সড়ক ও জনপথ (সওজ) কর্তৃপক্ষকে বেগ পেতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা বাড়বে। মানুষকেও ভোগান্তিতে পড়তে হবে।

সড়ক-মহাসড়ক সংস্কারের বিষয়ে সড়ক ও জনপথ খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ আসলাম আলী বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে পণ্য আনা নেওয়া বা গণপরিবহণ চলাচলে সড়ক-মহাসড়কের ওপর চাপ বাড়বে। তবে এ চাপ ব্যাপক হারে বাড়তে আট থেকে ১০ বছর সময় লাগবে। তিনি বলেন, ভাঙ্গা-নড়াইল হয়ে যশোর পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন করা হচ্ছে। এতে যাত্রী চলাচলে চাপ অনেকটা কমবে। এর পরও পরিবহণের বাড়তি চাপ মোকাবিলায় নানা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।

তবে ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন সুজনের খুলনা শাখার সম্পাদক অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ছয়-সাত মাসের মধ্যে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাবে। এখানে গ্যাস কোম্পানিগুলো কারখানা খুলেছে। ভোমরা, মোংলা ও পায়রা বন্দর সচল হয়েছে। ইতোমধ্যে পণ্য নিয়ে ভারী যানবাহনগুলো অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচল করছে। সড়ক-মহাড়ক প্রশস্ত ও মজবুত না হলে ব্যবসায়ীরা মোটেও আকৃষ্ট হবেন না। ফলে সুফল এ অঞ্চলের মানুষ পাবেন না। এ অঞ্চলকে সমৃদ্ধ করতে হলে মহাসড়কের পাশাপাশি সংযোগ সড়কগুলোও দ্রুত প্রশস্ত ও মজবুত করে নির্মাণ করতে হবে।

এদিকে, খুলনা অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বেশ কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকারি সংস্থা সওজ। তবে প্রকল্পগুলো এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সওজ সূত্রে জানা গেছে, কালনা-নড়াইল-যশোর সড়কের ৫০ কিলোমিটার সংস্কার এবং ১৪-১৮ ফুট প্রশস্ত থেকে ২৪ ফুটে উন্নীত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটি সংস্কার করা হবে। প্রকল্পটির টেন্ডার হয়েছে। এখন ওয়ার্ক অর্ডারের অপেক্ষা। তবে খুলনা-যশোর মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণের কাজ এখনো কাগজ কলমে। যশোর পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার সড়ক ছয় লেনে উন্নীত করার জন্য দাতা সংস্থা খুঁজছে কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানা গেছে। এ বছর চুক্তি স্বাক্ষর হলে আগামী বছর নাগাদ এর কাজ শুরু হতে পারে। সড়কটি নির্মাণে প্রায় আট হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

এদিকে, খুলনা-মোংলা মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে এটি পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে। সরকারি অর্থে ৩০ কিলোমিটার সড়কটির মেরামতে দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। খুলনা শহরের ডাকবাংলো থেকে আফিল গেট পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার সড়ক অপ্রশস্ত। এখানকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল সড়কটি প্রশস্ত করার। সার্ভের কাজ এখনো শেষ হয়নি। সড়কটি প্রশস্ত করতে ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। কাটাখালী-মোল্লাহাট-গোপালগঞ্জ-ভাঙ্গা ১০০ কিলোমিটার সড়কের ওপর সবচেয়ে বেশি চাপ পড়বে।

মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করা না হলে দুর্ঘটনা ও দুর্ভোগ বাড়বে। ছয় লেনে উন্নীত করতে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ এখনো চলছে। ভোমরা স্থলবন্দর ঘিরে খুলনাঞ্চলের অর্থনীতি আবর্তিত হয়। ভোমরা-যশোরের নাভারন পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ এখনো শেষ হয়নি। নড়াইল-ফুলতলা সড়কের মেরামত ও প্রশস্তকরণও জরুরি। এ সড়কের মাঝখানে সিকিরহাটে এক হাজার ৪০০ মিটার ব্রিজসহ ৩০ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের সম্ভাব্যতা যাচাই এখনো চলছে। এখানে শুধু সেতু নির্মাণে ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে।

Share This Article