বিধবা বোনকে বিয়ে না করায় শ্রমিককে কুপিয়ে দ্বিখণ্ডিত করেন তিনি

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সন্ধ্যা ০৬:০৪, রবিবার, ১২ জুন, ২০২২, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে প্রতিশ্রুতি দিয়েও বিধবা বোনকে বিয়ে না করা ও ধারের এক লাখ টাকা ফেরত না পাওয়ার ক্ষোভে কোমল পানীয়র সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে মতিউর রহমান (৫৫) নামে এক হোটেল শ্রমিককে দ্বিখণ্ডিত হত্যা করা করেছেন হোটেল ব্যবসায়ী মো. হারিছ মিয়া (৫০)।

এ ঘটনায় তাকে নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে আদালতে নেওয়া হলে তিনি হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

গ্রেপ্তার হারিছ মিয়া করিমগঞ্জ উপজেলার গুনধর ইউনিয়নের সুলতাননগর গ্রামের মৃত আব্দুল হাফিজের ছেলে। নিহত মতিউর রহমান একই গ্রামের মৃত তাহের উদ্দিনের ছেলে। তিনি স্থানীয় মরিচখালী বাজারে হারিছ মিয়ার খাবার হোটেলে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন।

শুক্রবার (১০ জুন) কিশোরগঞ্জ পিবিআই’র পুলিশ সুপার মো. শাহাদাত হোসেন সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, হোটেল শ্রমিক মতিউর রহমান ও হোটেল মালিক হারিছ মিয়ার মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল। ৫-৬ বছর আগে মতিউরের স্ত্রী মারা যান। তাই মতি হোটেলের কাজ শেষে মালিক হারিছের সঙ্গে হোটেলেই রাত্রিযাপন করতেন। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি মতিউর তার ছোট মেয়ের সংসারে ফার্ণিচার কিনে দিতে মালিক হারিছের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার নেন।

এদিকে মালিক হারিছ মিয়ার এক বিধবা বোন রেজিয়াকে বিয়ে করার আশ্বাস দিয়েও তা না করে মতিউর উল্টো প্রায় ২০ দিন আগে পার্শ্ববর্তী দড়ি গাঙ্গাটিয়া গ্রামের মৃত কাছুম আলীর মেয়ে দোলেনাকে বিয়ে করেন। এ ঘটনায় ক্ষোভ জমে হারিছের মনে। হত্যাকাণ্ডের ৩-৪ দিন আগে তার বড় মেয়ের জামাইকে বিদেশ পাঠানোর কথা বলে আবারও হারিছের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়ে মতিউর সিলেট চলে যান। ফিরে এসে হারিছকে তিনি ওই টাকা হারিয়ে ফেলেছেন বলে জানান। হারিছ মিয়া এসব কারণে মতিউরের ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

গত ২৪ মে দুপুরে মতিউর মরিচখালী বাজারে গিয়ে হারিছ মিয়ার সঙ্গে বসে চা-পান খান। ওইদিন রাতে হারিছ মিয়ার হোটেলে গেলে তাকে পরিকল্পিতভাবে কোকের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ান মালিক হারিছ। মতিউর ঘুমিয়ে গেলে গভীর রাতে ধারালো দা দিয়ে কুপিয়ে মতিউরের দেহ দ্বিখণ্ডিত করে মরদেহের ওপরের অংশ সুলতাননগর গ্রামের গোরস্থানে বোন ছলেমন্নেছার কবরের পাশে রেখে দেন এবং নিচের অংশটি কাঁথা দিয়া মুড়িয়ে বস্তাবন্দী করে এলাকার নরসুন্দার নদীতে ফেলে দেন।

গত ২৭ মে দুপুরে মরদেহের ওপরের অংশ ওই গোরস্থানে পাওয়া যায়। এদিনই মতিউর রহমানের ছেলে মো. রমজান আলী বাদী হয়ে করিমগঞ্জ থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

মামলাটি পিবিআই’র সিডিউলভুক্ত হওয়ায় তাদের ক্রাইমসিন ইউনিট ছায়া তদন্তে নামে। অবশেষে পিবিআই বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে নেত্রকোণার মোহনগঞ্জের জিমটি বাজার এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে হারিছ মিয়াকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। পরে তাকে কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেনের আদালতে হাজির করলে তিনি ১৬৪ ধারায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন মর্মে জবানবন্দি দেন। এরপর বিজ্ঞ আদালত হারিছ মিয়কে কারাগারে প্রেরণ করেন।

কিশোরগঞ্জ পিবিআই’র পুলিশ সুপার মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ময়মনসিংহ সিআইডির ফরেনসিক ইউনিট নমুনা সংগ্রহ করেছে। প্রাথমিকভাবে হারিছ মিয়া একাই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আলামতের ফরেনসিক পরীক্ষার পর জানা যাবে এ হত্যাকাণ্ডে অন্য কেউ জড়িত আছে কি-না।

Share This Article