মাগফিরাতের দশ দিন: তওবা করার এই তো সময়

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ১০:৩৫, বুধবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৩, ২২ চৈত্র ১৪৩০

মুফতি রেজাউল হক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ

দেখতে দেখতে রহমতের দিনগুলো তো ফুরিয়ে গেল। আজ মাগফিরাতের প্রথম দিন। মাগফিরাত বা ক্ষমা পেতে হলে তওবা করতে হবে। রমজান নিয়ে আসে তওবা করার সুবর্ণ সুযোগ। তওবার শাব্দিক অর্থ ফিরে আসা। উদ্দেশ্য গোনাহ থেকে ফিরে আসা। কুরআন ও সুন্নাহর পরিভাষায় তওবার অর্থ বিগত গোনাহের জন্য অনুতপ্ত হওয়া এবং ভবিষ্যতে তার ধারে-কাছে না যাওয়ার দৃঢ়সংকল্প করা।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মোমিনরা তোমরা আল্লাহতায়ালার কাছে তওবা কর, আন্তরিক তওবা। আশা করা যায় তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের মন্দ কাজ ক্ষমা করে দেবেন এবং তোমাদের দাখিল করবেন জান্নাতে, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। (সূরা আত তাহরিম : ৮)।’ এখানে ‘আন্তরিক তওবা’ বলতে এমন তওবাকে বোঝানো হয়েছে, যা রিয়া ও নাম-যশ থেকে খাঁটি, কেবল আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন ও আজাবের ভয়ে ভীত হয়ে এবং গোনাহের কারণে অনুতপ্ত হয়ে গোনাহ পরিত্যাগ করা।

হজরত হাসান বসরি (রহ.) বলেন, বিগত কর্মের জন্য অনুতপ্ত হওয়া এবং ভবিষ্যতে তার পুনরাবৃত্তি না করার পাকাপোক্ত ইচ্ছা করাই ‘আন্তরিক তওবা’। হজরত কলবি (রহ.) বলেন, ‘আন্তরিক তওবা’ হলো মুখে ক্ষমা প্রার্থনা করা, অন্তরে অনুশোচনা করা এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে ভবিষ্যতে সেই গোনাহ থেকে দূরে রাখা। হজরত আলী (রা.) কে জিজ্ঞেস করা হলো, তওবা কী? তিনি বললেন, ছয়টি বিষয়ের একত্র সমাবেশ হলে তওবা হবে ১. অতীত মন্দ কর্মের জন্য অনুতাপ; ২. যেসব ফরজ ও ওয়াজিব কর্ম তরক করা হয়েছে, সেগুলোর কাজা করা; ৩. কারও ধনসম্পদ ইত্যাদি অন্যায়ভাবে গ্রহণ করে থাকলে তা ফিরিয়ে দেওয়া; ৪. কাউকে হাতে অথবা মুখে কষ্ট দিয়ে থাকলে তার জন্য ক্ষমা নেওয়া; ৫. ভবিষ্যতে সেই গোনাহের কাছে না যাওয়ার ব্যাপারে দৃঢ়সংকল্প হওয়া এবং ৬. নিজেকে যেমন আল্লাহতায়ালার নাফরমানি করতে দেখেছিল, তেমনি এখন আনুগত্য করতে দেখা।

হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত তওবার উপরি উক্ত শর্তগুলো সবার কাছে স্বীকৃত। তবে কেউ সংক্ষেপে এবং কেউ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। রমজান মাসে, বিশেষ করে দ্বিতীয় দশক ও তৃতীয় দশকে তওবা করার বিশেষ সময়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, দয়ালু। অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন, যারা ভুলবশত মন্দ কাজ করে, অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে। এরাই হলো সেসব লোক, যাদের আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, রহস্যবিদ। আর এমন লোকদের জন্য কোনো ক্ষমা নেই, যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে, এমনকি যখন তাদের কারও মাথার ওপর মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন বলতে থাকে, আমি এখন তওবা করছি। আর তওবা নেই তাদের জন্য, যারা কুফরি অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। আমি তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। (সূরা আন নিসা : ১৬-১৮)।’

বান্দা কোনো পাপকর্ম করার পর যখন ‘আন্তরিক তওবা’ করে, তখন তার পাপকর্মগুলো এমনভাবে মিটে যায়, যেন সে কোনোদিন পাপকর্ম করেইনি। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, পাপকর্মের প্রকৃত তওবাকারীর অবস্থা এমন হয়, যেন তার কোনো পাপই নেই। বান্দার কাজই আল্লাহর কাছে তওবা করা। এ তওবা করতে হবে মৃত্যু আসার আগেই এবং সব ধরনের অন্যায় কাজ পরিত্যাগ করে। মৃতু্যু কখন আসবে আমরা কেউ জানি না। তাই যাবতীয় পাপের বোঝা নিয়ে এখনই তওবা করতে হবে। এমন সুযোগ হয়তো আর না-ও হতে পারে। নাজাতের এই দশকে মাবুদ যেন ক্ষমা করে দেন আমাদের সবাইকে।

লেখক : অধ্যক্ষ, দারুল উলুম ঢাকা, মিরপুর ১৩

Share This Article