তারাবি নামাজ পড়ার নিয়ম, নিয়ত, দোয়া-মোনাজাত

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ বিকাল ০৪:৫৮, শনিবার, ২৫ মার্চ, ২০২৩, ১১ চৈত্র ১৪২৯

তারাবির নামাজের নিয়ম জেনে না রাখলে, সঠিকভাবে তারাবির নামাজ আদায় করা সম্ভব নয়। তাই যথাযথভাবে তারাবির নামাজ আদায় করতে চাইলে, অবশ্যই আপনাকে তারাবির নামাজের নিয়ম সমূহ বিস্তারিতভাবে জেনে নিতে হবে।

 

তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন:

পবিত্র রমজান মাস মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং ফজিলত পূর্ণ মাস। এবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভের মাস। ধর্ম প্রাণ মুসলমানরা এই মাসকে ইবাদতের জন্য অনেক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন, দিনের বেলা রোজা এবং রাতে তারাবির নামাজ আদায় করেন। রমজান মাসে রাতের বেলা তারাবির নামাজ আদায় করা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। হাদিস শরীফে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, من قام رمضان إيمانا واحتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه

অর্থাৎ, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় তারাবির নামাজ আদায় করবে তার অতীতের গুনাহ সমূহ মাফ করে দেয়া হবে।

এছাড়াও তারাবি নামাজের ফজিলত সম্পর্কে আরও অনেক হাদিস রয়েছে। এক কথায় রমজান মাসে তারাবির নামাজ আদায় করা খুবই সাওয়াবের কাজ। তাই আপনার উচিত হবে দিনে সারাদিন রোজা রাখা এবং রাত্রিবেলা তারাবির নামাজ আদায় করা।

মূলত পবিত্র রমজান মাসে এশারের চার রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নতের পরে বেতেরের আগে এই নামাজ পড়তে হয়।

তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল?

এখন প্রশ্ন হলো, তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল? কোন ইবাদত করার উপর দিয়ে অবশ্যই সেই ইবাদত সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া উচিত। কেননা না জেনে ইবাদত করলে অনেক সময় ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে ফরজকে ফরজ, সুন্নতকে সুন্নত হিসেবে এবং নফল কে নফল হিসেবে হিসেবে পালন করতে হবে।

রমজানের রোজা যাদের ওপর ফরজ, তাদের ওপর তারাবির নামাজ সুন্নত। যেহেতু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জীবদ্দশায় এই নামাজ আদায় করেছেন এবং তারপরে সাহাবায়ে কেরামগণ তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করে প্রতিবছরের রমজান মাসে তারাবির নামাজ আদায় করতেন তাই এই নামাজটি সুন্নত হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এ ব্যাপারে পবিত্র হাদীসে বলা হয়েছে,

রাসূলুল্লাহ (সা:)ইরশাদ করেছেন যে, عليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين من بعدي عضوا عليها بالنواجذ "তোমরা আমার সুন্নাতকে আঁকড়ে ধর এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে আঁকড়ে ধর। তার ওপর তোমরা অটুট থাক।" (আবু দাউদ ৪৬০৭, তিরমিজী ২৬৭৬)

তারাবির নামাজ কত রাকাত?

তারাবির নামাজ কত রাকাত? রমজান আসলেই যেন এই বিতর্ক বহুলাংশে বেড়ে যায়। তারাবি নামাজের রাকাত সংখ্যা নিয়ে ওলামায়ে কেরামের মাঝে মতপার্থক্য বিদ্যমান। কোন কোন ওলামায়ে কেরাম মনে করেন যে তারাবির নামাজ ৮ রাকাত। আবার কোন কোন ওলামায়ে কেরামের মতে তারাবি নামাজ ২০ রাকাত। এখন কথা হলো প্রকৃতপক্ষে, তারাবির নামাজ কত রাকাত?

বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ হানাফি মাযহাবের অনুসারী। আর হানাফি মাযহাব অনুযায়ী, তারাবির নামাজ ২০ রাকাত। এর স্বপক্ষে অনেক দলিল রয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ২০ রাকাত তারাবি পড়া হতো। সেই সিলসিলা অনুযায়ী সাহাবায়ে কেরামগণ ২০ রাকাত তারাবি নামাজ পড়তেন। এবং সেই সুচনালগ্ন থেকেই মক্কা ও মদিনায় ২০ রাকাত তারাবির নামাজ পড়া হয়ে থাকে।

ইয়াজিদ ইবনে খুসাইফা (র) বলেন, সাহাবি সায়েব ইবনে ইয়াজিদ (রা:) বলেছেন, সাহাবায়ে কেরাম হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) এর যুগে রমজান মাসে বিশ রাকাত তারাবি পড়তেন। তিনি আরও বলেন, তারা নামাজে শতাধিক আয়াতবিশিষ্ট সুরাসমূহ পড়তেন এবং হজরত উসমান ইবনে আফফান (রা.)-এর যুগে দীর্ঘ নামাজের কারণে তাদের (কেউ কেউ) লাঠিসমূহে ভর দিয়ে দাঁড়াতেন। (আস সুনানুল কুবরা ও বাইহাকি)

দুই রাকাত করে ১০ সালামে ২০ রাকাত তারাবির নামাজ পড়তে হয়। এবং প্রতি চার রাকাত পর পর চার রাকাত নামাজের সমপরিমাণ সময় বিরতি দিতে হয়। কিন্তু যদি এই পরিমাণ বিরতির কারণে মানুষের কষ্ট হয় কিংবা তারাবির জামাতে লোক কম হওয়ার আশঙ্কা হয়, তাহলে এর চেয়ে কম সময় বিরতি নেয়া যাবে তাতে কোন সমস্যা নেই।

তারাবির নামাজের নিয়ত:

তারাবির নামাজ পড়ার পূর্বে যদি আপনি নিয়ত করতে চান সে ক্ষেত্রে নিম্ন বর্ণিত তারাবির নামাজের নিয়ত পাঠ করতে পারেন। যদিও যে কোন নামাজে নিয়ত পাঠ করা আবশ্যকীয় কোন বিষয় নয়। এর পরেও অনেকেই তা পাঠ করতে চান। তাই আপনি যদি, তারাবির নামাজের নিয়ত পাঠ করতে চান সেক্ষেত্রে নিম্ন বর্ণিত তারাবির নামাজের নিয়তটি মুখস্ত করে নিতে পারেন।

নিয়ত: نويت أن أصلي لله تعالى ركعتي صلوة التراويح سنة رسول الله متوجها إلى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر

তারাবির নামাজের নিয়ত বাংলা উচ্চারণ:

নাওইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকয়াতাই সালাতিত তারাবিহ সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি মুতাওয়াজ্জিহান ইলা কা‌বাতিস শারীফাহ।

তারাবির নামাজের নিয়ত বাংলা অর্থ:

আমি কিবলামুখী হয়ে (যদি জামাআ’তের সাথে হয় তবে- এই ইমামের ইমামতিতে জামাআ’তের সাথে)দুই রাকাআ’ত তারাবিহ সুন্নাত নামাজ আল্লাহর জন্য আদায়ের নিয়্যত করছি, আল্লাহু আকবার।

যদি কোন ব্যক্তি আরবিতে তারাবির নামাজের নিয়ত পাঠ করতে না পারে তাহলে সেই চাইলে বাংলাতেই তারাবির নামাজের নিয়ত পাঠ করতে পারবে, এতে কোন সমস্যা নেই। তারাবির নামাজের দোয়া:

তারাবির নামাজে চার রাকাত পর পর বিরতির সময় দোয়া পাঠ করতে হয়। তাই আপনি যদি, তারাবির নামাজের দোয়া না জেনে থাকেন তাহলে নিম্ন বর্ণিত তারাবির নামাজের দোয়া মুখস্ত করে নিতে পারেন। নিচে তারাবির নামাজের দোয়া আরবিতে উল্লেখ করার পাশাপাশি এর বাংলা উচ্চারণ তুলে ধরা হলো। সেই সাথে, তারাবির নামাজের দোয়ার অর্থ উল্লেখ করা হলো।

দোয়া:

سبحان ذي الملك والملاكوت سبحان العزت والعظمت الهيبة والقدرة و الكبرياء والجبروت سبحان الملك القدوس الحي الذي لا ينام ولا يموت سبوح قدوس ربنا ورب الملائكه والروح

তারাবির নামাজের দোয়া বাংলা উচ্চারণ:

সুবহানা যিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি সুবহানাল ইজ্জত ওয়াল আজমাতি ওয়াল হাই বাতি ওয়াল কুদরতি ওয়াল কিবরিয়াই ওয়াল জাবারুতি সুবহানাল মালিকিল কুদ্দুসিল হাইয়িল্লাযী লা ইয়ানামু ওয়ালা ইয়ামুতু ছুব্বুহুন কুদ্দুসুন রব্বুনা ওয়া রব্বুল মালাইকাতি ওয়াল রুহ।

তারাবির নামাজের দোয়া বাংলা অর্থ: আল্লাহ পবিত্রময় সাম্রাজ্য ও মহত্বের মালিক। তিনি পবিত্রময় সম্মান মহত্ব ও প্রতিপত্তিশালী সত্ত্বা। ক্ষমতাবান, গৌরবময় ও প্রতাপশালী তিনি পবিত্রময় ও রাজাধিরাজ যিনি চিরঞ্জীব, কখনো ঘুমায় না এবং চির মৃত্যুহীন সত্ত্বা। তিনি পবিত্রময় ও বরকতময় আমাদের প্রতিপালক, ফেরেশতাকুল এবং জিবরাইল (আ.) এর প্রতিপালক।

তারাবির নামাজের মোনাজাত:

তারাবির নামাজের মোনাজাত পাঠ করতে অবশ্যই আপনাকে, তারাবির নামাজের মোনাজাত মুখস্ত করে নিতে হবে।

মোনাজাত:

اللهم إنا نسألك الجنة ونعوذ بك من النارياخالق الجنة والنار برحمتك يا عزيز يا غفار يا كريم يا ستار يا رحيم يا جبار يا خالق يا بار اللهم اجرنا من النار يا مجير يا مجير يا مجير برحمتك يا أرحم الراحمين

বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না নাস আনুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনান্নার ইয়া খালিকাল জান্নাতি ওয়ান্নার বিরাহমাতিকা ইয়া আজিজু ইয়া গাফফারু ইয়া কারিমু ইয়া সাত্তার ইয়া রহীমু ইয়া জাব্বারু ইয়া খালিকু ইয়া বাররু আল্লাহুম্মা আজিরনা মিনান্নার ইয়া মুজীরু ইয়া মুজীরু ইয়া মুজীরু বিরহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমীন।

মোনাজাতের বাংলা অর্থ:

পবিত্রতা ঘোষণা করছি তাঁর, যিনি ইহজগৎ, ফেরেশতা ও জগতের প্রভু, সেই আল্লাহর মহিমা বর্ণনা করছি যিনি মহিমাময় বিরাট, ভীতিপূর্ণ, শক্তিময়, গৌরবময় এবং বৃহত্তর। আমি সেই প্রতিপালকের গুণগান করছি, যিনি চিরঞ্জীব, যিনি কখনও নিদ্রা যান না এবং যার কখনও মৃত্যু ঘটে না। পুত-পবিত্র তিনি। তিনি আমাদের পালনকর্তা, ফেরেশতাকূল এবং আত্মাসমূহের পালনকর্তা। আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, আমরা আপনার কাছে বেহেশত চাচ্ছি এবং দোযখ থেকে মুক্তি চাচ্ছি।

আমাদের মধ্যে অনেকের ভুল ধারণা বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে অনেকেই দোয়া ও মোনাজাত মুখস্ত না থাকার কারণে তারাবির নামাজ ছেড়ে দেয়। অথচ দোয়া এবং মোনাজাত মুখস্থ থাকা জরুরি নয় তারাবির নামাজে চার রাকাত পর পর যে বিরতি নেয়া হয় এ সময় যে কোন দোয়া পড়া যায়, সুবহানাল্লাহ পড়া যায়, আলহামদুলিল্লাহ পড়া যায়। এমন কি কোন ব্যক্তি যদি কোন কিছুই না পড়ে তাতেও কোন সমস্যা নেই তারাবির নামাজ হয়ে যাবে।

Share This Article