মানুষকে শান্তিতে থাকতে দিন, লড়াই আমার সঙ্গে করুন: মাশরাফি

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ১০:১৮, সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০২২, ৩ শ্রাবণ ১৪২৯

নড়াইলে সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার ও নড়াইল-২ (লোহাগড়া-নড়াইল সদরের একাংশ) আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেন, ‘আমাকে ভোগানোর জন্য দয়া করে সাধারণ ও অসহায় মানুষদের আর ক্ষতি করবেন না। মানুষকে শান্তিতে থাকতে দিন, লড়াই আমার সঙ্গে করুন।’

গতকাল রোববার রাত ১০টার দিকে ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেন, ‘আপনারা সব তো করলেন। এবার আপনাদের কাছে একটা অনুরোধ, পেছন থেকে আঘাত করতে করতে আপনারা ক্লান্ত হয়ে যাবেন। তো আসুন, সামনে থেকে আঘাত করুন। আমার সঙ্গে সরাসরি লড়াই করুন। আমি সাধুবাদ জানাব।’

লোহাগড়ার দিঘলিয়া এলাকার এক তরুণ গত শুক্রবার বিকেলে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে কটূক্তি করে তাঁর ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। কিছু লোক দিঘলিয়া বাজারে সংখ্যালঘুদের দোকানপাট ও আশপাশের বাড়িঘরে হামলা চালান। একটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। হামলা চালানো হয় মন্দিরে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লাঠিপেটা করে ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এর আগে গত ১৮ জুন নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে অপদস্থ করা হয়।

এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মাশরাফি তাঁর ফেসবুক পেজে বলেন, ‘একটু বোঝার চেষ্টা করছি, আর কত দিক থেকে আক্রমণ হতে পারে। কিছুদিন আগে মির্জপুরে সম্মানিত একজন শিক্ষককে অপমানের ঘটনায়ও আমাকে জড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। অথচ ওটা আমার নির্বাচনী আসনের ভেতরেই নয়। আমি জানি, নড়াইলে রাজনীতি যাঁদের কাছে পেশা, তাঁদের কাছে আমি এখন নেশা।’

মাশরাফি আগের একটি ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘তাঁরা প্রথম ঝামেলা করল মাওলানা মামুনুল হককে নিয়ে। তাঁকে যখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিষেধাজ্ঞা দিল, ঠিক সেই সময় ওয়াজ করার জন্য নড়াইলে আমন্ত্রণ জানানো হলো। আমাকে বিন্দুমাত্র না জানিয়ে ওয়াজ মাহফিল দেওয়া হলো নোয়াগ্রামে, যেখানে আমার শ্বশুরবাড়ি। বক্তাকে কালনা ঘাট পর্যন্ত আনার পর তবেই কেবল জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে জানোনো হলো।’

তখন মামুনুল হককে কালনা ঘাট পার হতে পুলিশ বাধা দেয়। এরপর মাহফিল কর্তৃপক্ষ জানায় মাশরাফিকে। মামুনুল হককে ওয়াজ মাহফিলে আনার ব্যবস্থা করতে মাশরাফিকে অনুরোধ করে মাহফিল কর্তৃপক্ষ। এ প্রসঙ্গ টেনে মাশরাফি বলেন, ‘তখন এই সমস্যার সমাধান করা কীভাবে সম্ভব? এটা তো পুরোটাই একটা প্রক্রিয়া, যা আরও সাত দিন আগে থেকে করতে হয়।’

মাশরাফি বলেন, ‘তখন ওই লোকগুলো বলা শুরু করে দিল, আমি নাকি ওয়াজ মাহফিল হতে দিচ্ছি না। পুরো খেলাটা খেলেছে এমনভাবে, তাঁকে আমার নির্বাচনী এলাকায়, আমার শ্বশুরবাড়ির এলাকায় এনে সরকারের কাছে প্রমাণ করতে চেয়েছে যে আমি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মানছি না। আর যদি না আসতে পারে, তাহলে প্রচার করা হবে, মাশরাফি ওয়াজ মাহফিল করতে দেয় না। দুই দিক থেকেই তাঁদের জয়। আর দুই পক্ষের কাছেই আমাকে খারাপ বানাবে। তবে সত্য চাপা থাকেনি। সবাই কমবেশি জেনেছে সত্যটা।’

গত শুক্রবার দিঘলিয়ায় সাম্প্রদায়িক হামলার বিষয় উল্লেখ করে মাশরাফি বলেন, ‘এবার উল্টো খেলা খেলল তারা—সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষদের ওপর আক্রমণ করে তাঁদেরকে বিপদে ফেলা, পাশাপাশি আমাকেও বিপদে ঠেলে দেওয়া।’

দিঘলিয়ায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে গত শনিবার বিকেলে আসেন মাশরাফি। সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের বাড়িতে যান। তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। শনিবার রাতেই ঢাকায় ফিরে যান তিনি।

Share This Article