যাদের নিঃস্ব বলেছিলেন প্রিয় মহানবী (সা.)

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ দুপুর ১২:৩৪, শনিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২ ফাল্গুন ১৪২৯

যার জীবনধারণের কোনো অবলম্বন থাকে না, সাধারণত নিঃস্ব বলতে সহায় ও সম্বলহীন দরিদ্র মানুষকে বোঝায়। অথবা মানুষের ঋণ শোধ করতে গিয়ে যিনি তার সব কিছু হারিয়ে ফেলেছে। কিন্তু কিছু মানুষ কিয়ামতের দিনও নিঃস্ব হয়ে যাবে। মানুষের দায় পরিশোধের পর তাদের সামনে পরকালের আর কোনো পাথেয় থাকবে না। কালের কণ্ঠ

 

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা কি বলতে পারো অভাবী লোক কে? তারা বললেন, আমাদের মধ্যে যার দিরহাম (টাকা-কড়ি) ও ধন-সম্পদ নেই সে তো অভাবী লোক। তখন নবীজি (সা.) বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে সে প্রকৃত অভাবী লোক, যে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন নামাজ, রোজা ও জাকাত নিয়ে আসবে; অথচ সে এ অবস্থায় আসবে যে সে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে অপবাদ দিয়েছে, অমুকের সম্পদ ভোগ করেছে, অমুককে হত্যা করেছে ও আরেকজনকে প্রহার করেছে। এরপর সে ব্যক্তিকে তার নেক আমলগুলো থেকে দেওয়া হবে, অমুককে নেক আমল থেকে দেওয়া হবে। এরপর যদি পাওনাদারের হক তার নেক আমল থেকে পূরণ করা না যায় সে ঋণের পরিবর্তে তাদের পাপের একাংশ তার প্রতি নিক্ষেপ করা হবে। এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৪৭৩)

হাদিসের শিক্ষা: উল্লিখিত হাদিসে মহানবী (সা.) মানুষকে কয়েকটি বিষয়ে সতর্ক করেছেন। আর তা হলো-

১. যারা নেক কাজ করলেও পাপ পরিহার করতে পারে না। বিশেষত তারা নামাজ ও রোজার মতো ইবাদতকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে; কিন্তু মানুষের অধিকার রক্ষায় সতর্ক না। কিয়ামতের দিন এসব জুলুম ও অবিচার তার নেক আমলকে নিষ্ফল করে দেবে।

২. এই হাদিস দ্বারা এটাও বোঝা যায় যে সাধারণত বান্দার অধিকার নষ্টকারী ক্ষমা পাবে না, যতক্ষণ না মজলুম ব্যক্তি তাকে ক্ষমা করে বা তার প্রতি করা অবিচারের প্রতিবিধান হয়।

৩. পৃথিবীতে যারা জুলুমের শিকার হবে এবং তা প্রতিহত করতে অক্ষম হবে, পরকালে আল্লাহ তাদের পার্থিব ক্ষতি, কষ্ট ও ব্যথার প্রতিবিধান করবেন। (দুরার ডটনেট)

প্রতিবিধান কেন হবে: এতো নেকি বা পুণ্য নিয়ে উপস্থিত হওয়ার পরও ব্যক্তি নিঃস্ব হয়ে যাবে। কেননা আল্লাহ ন্যায় প্রতিষ্ঠা ও জুলুমের অবসান ঘটানোর ঘোষণা দিয়েছেন। আর কিয়ামতের দিনই চূড়ান্ত ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হবে। আল্লাহ বলেন, ‘আজ প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের ফল দেওয়া হবে। আজ কোনো জুলুম করা হবে না। আল্লাহ হিসাব গ্রহণে তৎপর।’ (সুরা : মুমিন, আয়াত : ১৭)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে অবিশ্বাসীরা, আজ তোমরা দায়মুক্তির চেষ্টা কোরো না। তোমরা যা করতে তোমাদের তারই প্রতিফল দেওয়া হবে।’ (সুরা : তাহরিম, আয়াত : ৭)

দায়মুক্তির উপায় : রাসুলুল্লাহ (সা.) যেমন মানুষের প্রতি অবিচার ও জুলুম করার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন, তেমনি তিনি জুলুম থেকে দায়মুক্তির উপায়ও বলে দিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি বা অন্য কোনো বিষয়ে জুলুমের জন্য দায়ী থাকে, সে যেন আজই তার কাছ থেকে মাফ করিয়ে নেয়, সে দিন আসার পূর্বে, যে দিন তার কোনো দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) বা দিরহাম (রৌপ্যমুদ্রা) থাকবে না। সে দিন তার কোনো সৎকর্ম না থাকলে তার জুলুমের পরিমাণ তা তার কাছ থেকে নেওয়া হবে আর তার কোনো সৎকর্ম না থাকলে তার প্রতিপক্ষের পাপ হতে নিয়ে তা তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৪৪৯)

আল্লাহ সবাইকে পরিপূর্ণ পাপ পরিহারের তাওফিক দিন। আমিন

Share This Article