দক্ষিণ এশিয়ায় যেসব অবস্থানে ভারত-পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কার চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ১০:২৭, বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১০ ফাল্গুন ১৪২৯
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

করোনা মহামারির ধাক্কায় অনেকটাই টালমাটাল হয়ে পড়েছিল বিশ্ব । মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে আস্তে আস্তে ছন্দে ফিরছিলো অর্থনীতি, এর মধ্যেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে টালমাটাল বৈশ্বিক অর্থনীতি। অর্থনৈতিক মন্দায় অব্যাহতভাবে কমছে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের রিজার্ভ। বছরখানেক আগে দেউলিয়া হয়েছে শ্রীলঙ্কা। আর এমন প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও বাংলাদেশে রিজার্ভ বেড়েছে। ইতিবাচক ধারায় উর্ধ্বমুখী গতিতে ছুটছে বাংলাদেশের রিজার্ভ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩২ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে রিজার্ভের পরিমাণ আরও বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার কারণে কমছে আমদানিও। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে।

তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে  ৩০ বিলিয়ন ডলারে নামলেও আগামী অর্থবছর থেকে ধারাবাহিকভাবে তা বাড়বে।আর ২০২৬-২৭ অর্থবছর শেষে দেশের রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৫০ বিলিয়ন ডলার বা ৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। রপ্তানী আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় রিজার্ভ মূলত শক্তিশালী অবস্থানে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অপরদিকে দক্ষিণ এশিয়ার আরেকটি দেশ পাকিস্তান চরম আর্থিক দুর্গতির দিকে চলে যাচ্ছে। ৩ ফেব্রুয়ারি স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৯০ কোটি ডলার।

 সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সদস্যরা পাকিস্তানে গিয়েছিলেন। তাদের কাছে আর্থিক সাহায্যের জন্য হাত পেতেছে ইসলামাবাদ। তবে সে বিষয়ে কোনো সমাধান এখনো বের হয়নি। আর দুই পক্ষের সমঝোতা যে সঠিক হয়নি, তা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ ও অর্থমন্ত্রী ইশক দার। প্রতিরক্ষামন্ত্রীও মেনে নিয়েছেন ‘পাকিস্তান দেউলিয়া’। এমন এক পরিস্থিতিতে আরও চাঞ্চল্যকর খবর উঠে এসেছে।

আপাতত যা পরিস্থিতি তাতে ইসলাবাদ খাতায় কলমে টাকা জোগাড় করতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। এমন কিছু বিল্ডিং তাঁরা বিক্রি করে দিতে চাইছে যা ওয়াংশিংটনে তাঁদের দূতাবাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ওয়াশিংটনে যে বিল্ডিং পাকিস্তানের প্রতিরক্ষার একটি বড় স্তম্ভ ছিল, সেই অংশটিকে বিক্রি করতে চাইছে পাকিস্তান।

জানা গেছে, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত মার্কিন রাজধানীতে পাকিস্তানের দূতাবাসের ভবন বিক্রি নিয়ে দেশটি তিনটি অফার পেয়েছে। নিলামে একটি ইহুদি গোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি দাম হাঁকিয়েছে। তারা ৬ দশমিক ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিতে প্রস্তুত। এ ছাড়াও চমকের তালিকায় রয়েছে আরো এক নাম। এক ভারতীয় রিয়েল এস্টেট এজেন্টও সেই ভবন কিনতে চেয়েছেন। তিনি দাম হাঁকিয়েছেন পাঁচ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই তালিকার তৃতীয়জন হলেন এক পাকিস্তানি রিয়েল এস্টেট এজেন্ট, যিনি চার মিলিয়ন মার্কিন ডলার দাম হাঁকিয়েছেন।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজের এক প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে তেমনই প্রমাণ পাওয়া গেছে। ওই প্রতিবেদনের প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে একটি নির্দেশ পাঠিয়েছেন। সেই নির্দেশে অবিলম্বে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে থাকা পাকিস্তানি দূতাবাসের অফিস ও কর্মীদের সংখ্যা এবং বিভিন্ন খরচ ১৫ শতাংশ কমানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে পাকিস্তানের ঋণের পরিমান দেশটির জিডিপির ৮০ শতাংশ। আমদানির খরচ পাকিস্তান চোকাতে পারবে আর মাত্র তিন সপ্তাহ। পাকিস্তানভিত্তিক দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন অনুসারে, পাকিস্তানে আর মাত্র ২৯ দিনের মতো ডিজেল, আর ২১ দিনের মতো রয়েছে গ্যাসোলিন রয়েছে। আর্থিক পরিস্থিতি ফের স্বাভাবিক ছন্দে আনতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। দেশটিতে হু হু করে বাড়ছে ডিজেল, পেট্রোলের দাম। যাতে জ্বালানি বেশি লোকজন কিনতে না পারেন তার জন্যই দাম বাড়ানো হয়েছে।

এর আগে দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ শ্রীলঙ্কা বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়। দেশটির সরকার নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে।

এছাড়া গত এক মাসে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ অর্থনীতির দেশ  ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও পতন ঘটেছে। গেল সপ্তাহে দেশটির রিজার্ভে উল্লেখযোগ্য পতন ঘটেছে, যা গত ১১ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, রুপির মান স্থিতিশীল রাখতে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে ডলার বিক্রি করছে, সম্ভবত সে কারণেই এই বড় পতন হয়েছে। ১৭ ফেব্রুয়ারি রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার হালনাগাদ তথ্যমতে, ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশটির রিজার্ভ ৮ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার কমে ৫৬৬ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলারে ঠেকেছে, যা ২০২২ সালের এপ্রিলের পর সবচেয়ে কম।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হওয়ায় ভারত সহজে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে উঠতে পারলেও পার্শবর্তী দেশ পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংকট শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতিতে রূপ নিচ্ছে। গভীরভাবে ঋণগ্রস্ত আফ্রিকার দেশগুলোর মতো পাকিস্তানও সম্ভবত চীনের দেওয়া বিশাল ঋণের বোঝায় এই পরিস্থিতিতে পড়েছে। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশ এই অঞ্চলের দেশগুলোর কাছে অনুকরণীয় হতে পারে। সকল সঙ্কট মোকাবেলা করে দেশটির সরকার আস্তে আস্তে দক্ষিণ এশিয়ায় নেতৃত্বদানে উদীয়মান দেশ হিসেবে আর্বিভূত হচ্ছে।

বিষয়ঃ বাংলাদেশ

Share This Article