আমরা অতীতও মনে রাখি না, বিশ্বের দিকেও তাকাই না

একটি দেশের রাজধানীতে দৈনিক ৮/১০ ঘন্টা লোডশেডিং দেখা শেষ প্রজন্ম ছিলো নব্বই দশকে জন্ম নেয়া প্রজন্ম। সন্ধ্যার পর কারেন্ট থাকবে না, এটা এতোটাই নিশ্চিত ছিলো যে মোমবাতি হারিকেন পাশে নিয়ে পড়তে বসতো তারা। হাত পাখা ছিলো নিত্যসঙ্গী।
তখন চার্জার লাইট, মোমবাতি আর হারিকেনের ব্যবসা ছিলো জমজমাট। জেনারেটরের লাইনের ব্যবসা বলে যে একটা ব্যপার ছিল, সেটা এখন অনেকেই জানে না। সে সময় প্রবাসীরা দেশে ফিরে উন্নত দেশের গল্প করতেন। বলতেন সেসব দেশে কিভাবে ২৪ ঘন্টাই বিদ্যুৎ থাকে।
তারপর ধীরে ধীরে অবস্থার উন্নতি হয়েছে। এই দেশের মানুষও ২৪ ঘন্টা বিদুৎ পেয়ে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। দেশবাসী লোডশেডিং দেখেনি বহু বছর।
১২ বছর আগেও দেশের শতকরা ৪৩ শতাংশ লোক বিদ্যুৎ পেত দিনের অর্ধেক সময়। অথচ ২০২২ সালে শতভাগ মানুষ ২৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ পেয়েছে কয়েক সপ্তাহ আগেও। এই মুহুর্তে গ্যাস ও কয়লা সংকটের কারণে শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বে বহু উন্নত দেশও বিদ্যুতের জন্য হাহাকার করছে। এটি বাংলাদেশের একার সমস্যা নয়। এর জন্য বাংলাদেশের কোন দায় নেই।
তারপরও কিছু মানুষ এই লোডশেডিং এর জন্য সরকারকে দায়ী করছেন। কেননা ২৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ পাওয়ার অভ্যাস হয়েছে এই সরকারের হাত ধরেই।
শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই আরেকটি বিষয় ভুলে গেছে মানুষ। সেটির নাম হলো মঙ্গা। এটি ছিলো এক ভয়াবহ ব্যাপার। বছরের ৬ মাস কাজের অভাবে উত্তরাঞ্চলের মানুষ তখন না খেয়ে থাকতো। পরের মৌসুমে কাজ করে পুষিয়ে দেবে এই শর্তে তারা মহাজনদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সংসার চালাতো। কিন্তু যখন কাজ মিলতো তখন সেই কাজের মূল্য তারা পেত না পূর্বের ঋণই শোধ করতে হতো। এভাবে সারা বছরই অভাব আর ক্ষুধায় দিন কাটাতো তারা। তবে বিগত এক যুগ ধরে মানুষ মঙ্গা নামটির সঙ্গে পরিচিতই নয়।
যে লোডশেডিং এর কথা মানুষ ভুলে গিয়েছিলো সেই লোডশেডিং ফিরে এলো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের হাত ধরে। সেই সঙ্গে মনে করিয়ে দিলো আমাদের সেই পুরনো ভয়ঙ্কর অতীত। তাই তো এখন আধাঘন্টা বিদ্যুৎ না থাকলেই সবার ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা হয়। ফেসবুকে আক্ষেপের বন্যা। কিন্তু তারা অতীতও ভুলে গেছে, আর বর্তমান বিশ্বে যে বিদ্যুতের সংকট চলছে সেটিও দেখার সময় নেই অনেকের।
কাজেই আমাদের উচিত, অযথা অযৌক্তিক অভিযোগ না করে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থাকে বোঝা। কেন লোডশেডিং হচ্ছে সেই তথ্যটি অনুধাবন করা এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে দেশের পাশে দাঁড়ানো।