বাড়তি যানের চাপ
ঢাকায় উড়াল ও বৃত্তাকার সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ

পদ্মা সেতু চালুর পর বাড়তি যানবাহনের চাপ সামাল দিতে ঢাকায় উড়ালসড়ক ও বৃত্তাকার সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করছে সরকার।
পদ্মা সেতু ধরে প্রতিদিন প্রায় ২৪ হাজারের বেশি যানবাহন চলাচল করবে।
ঢাকা এড়িয়ে পদ্মা সেতুতে যেতে ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ বিকল্প উড়ালসড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা।
ঢাকায় ইনার ও আউটার বৃত্তাকার সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা।
পদ্মা সেতু ঘিরে রাজধানী ঢাকায় বাড়তি যানবাহনের চাপ সামাল দিতে সরকার নানামুখী পরিকল্পনা করছে। এরই অংশ হিসেবে সাভারের হেমায়েতপুর থেকে কেরানীগঞ্জ হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর পর্যন্ত উড়াল সড়ক করা হবে। ঢাকা ঘিরে নির্মাণ করা হবে বৃত্তাকার সড়ক।
২০০৫ সালে পদ্মা সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, পদ্মা সেতু দিয়ে ২০২২ সালে দিনে ২৩ হাজার ৯৫৪টি যানবাহন চলাচল করবে। ২০৩০ সালে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৩৬ হাজার ৭৮৫টি। চার লেনের এই সেতুতে দিনে সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার যানবাহন চলাচলের সক্ষমতা আছে।
পদ্মা সেতুকে ঘিরে সরকার ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক (এন-৮) ছয় লেনে উন্নীত করে। এর মধ্যে দ্রুতগামী যানবাহনের জন্য চার লেন এবং স্থানীয় যানবাহনের জন্য বাকি দুই লেন রাখা হয়েছে। পদ্মা সেতু পার হয়ে ফরিদপুর, বরিশাল, খুলনামুখী যানবাহনের জন্য ভাঙ্গায় তৈরি করা হয়েছে বহুমুখী উড়ালপথ (ক্লোভারলিফ ইন্টারচেঞ্জ)।
পদ্মা সেতু দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২৪ হাজার যানবাহন চলাচল করলে এর সবই রাজধানীকে স্পর্শ করবে। পদ্মা সেতু থেকে কেরানীগঞ্জ এসে রাজধানীতে প্রবেশের দুটি পথ তৈরি হয়েছে। এগুলো হচ্ছে পোস্তগোলা ও বাবুবাজার সেতু। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-উত্তরবঙ্গের যানবাহন পদ্মা সেতু হয়ে যাতায়াত করতে হলে ঢাকার ওপর দিয়ে যেতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০ বছরের পরিবহন পরিকল্পনায় (এসটিপি) ঢাকায় ইনার ও আউটার—দুই ধরনের বৃত্তাকার সড়ক গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে।
আউটার সার্কুলার রোড
উত্তরবঙ্গ ও ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা-সিলেট রুটের যানবাহন যাতে ঢাকা এড়িয়ে পদ্মা সেতুতে যেতে পারে, সে জন্য বিকল্প উড়ালসড়ক নির্মাণের প্রকল্প নিয়েছে সরকার। ২০১৭ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা হয়। পরিকল্পনা অনুসারে, ২০২৪ সালে এই উড়ালসড়ক চালু হওয়ার কথা। এতে জাপান অর্থায়ন করতে চেয়েছে। তবে এখনো ঋণ চুক্তি হয়নি।
প্রস্তাবিত উড়ালসড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০ কিলোমিটার। সাভারের হেমায়েতপুর থেকে এটি কেরানীগঞ্জের কলাতিয়া, ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ সদরে যাওয়ার কথা।
নারায়ণগঞ্জ শহর ও বন্দরকে যুক্ত করতে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর নির্মাণকাজ চলছে। এই সেতু চালু হলে উড়ালসড়কটি নারায়ণগঞ্জের মদনের কাছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে যুক্ত করবে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ না হলেও বাইপাসের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে যুক্ত হয়ে যাবে। ঢাকা-পাটুরিয়া হয়ে খুলনা মহাসড়ক এবং নবীনগর হয়ে ঢাকা-উত্তরবঙ্গের সব মহাসড়ক যুক্ত হবে হেমায়েতপুরে।
ইনার সার্কুলার রোড
ঢাকা ঘিরে প্রায় ৮৯ কিলোমিটার দীর্ঘ আরেকটি বৃত্তাকার সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এটি দুই ভাগে বিভক্ত। একটি আবদুল্লাহপুর রেলগেট থেকে তেরমুখ, পূর্বাচল, বেরাইদ হয়ে ডেমরা পর্যন্ত প্রায় ২৬ কিলোমিটার। এর নাম ইস্টার্ন বাইপাস।
অন্য সড়কটি আবদুল্লাহপুর রেলগেট থেকে ধউর, বিরুলিয়া, গাবতলী, বছিলা, হাজারীবাগ, সোয়ারীঘাট, কদমতলী, তেঘরিয়া, পোস্তগোলা, ফতুল্লা, চাষাঢ়া, শিমরাইল হয়ে ডেমরা পর্যন্ত ৬৩ কিলোমিটার। এর মধ্যে আবদুল্লাহপুর থেকে সদরঘাট পর্যন্ত সরু একটি সড়ক আছে। বাকি ৪৭ কিলোমিটার সড়ক নতুন করে নির্মাণ করতে হবে। এ জন্য ১২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। তবে এখনো অর্থ বরাদ্দ হয়নি।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের সূত্র বলছে, ঢাকা ঘিরে বিকল্প সড়কগুলো পাঁচ বছরের মধ্যে চালুর সম্ভাবনা নেই।
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল
ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে খুলনা ও বরিশাল বিভাগ এবং গোপালগঞ্জ, ফরিদপুরসহ অন্যান্য জেলায় যাওয়ার সব পথই দুই লেনের।
ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটা ও পায়রা বন্দরের দূরত্ব প্রায় ২৩৫ কিলোমিটার। এই সড়ক বরিশাল বিভাগের প্রায় সব জেলাকেই যুক্ত করবে। ভাঙ্গা থেকে কুয়াকাটা সড়ক চার লেনে উন্নীত করতে ২০১৮ সালের শেষের দিকে একনেকে একটি প্রকল্প পাস হয়। সড়কের পথ পরিবর্তনের কারণে নির্মাণকাজ শুরু হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে।