বাস্তবতার নাম পদ্মা সেতু

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ০৯:৫০, শুক্রবার, ২৪ জুন, ২০২২, ১০ আষাঢ় ১৪২৯

পদ্মা সেতু এখন বাস্তবতার নাম। ১৯৯৮ সালে বপিত হয়েছিল স্বপ্নের বীজ। সেই স্বপ্ন এখন বাস্তবে ধরা দিয়ে সৌরভ ছড়াচ্ছে। 

আগামীকাল সকালে উদ্বোধনের মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে আরেকবার উচ্চারিত হবে বাংলাদেশের নাম। বিজয়ের বেশে শির দাঁড়া করে গোটা দুনিয়াকে জানিয়ে দেওয়া হলো, আমরাই পারি। নিজেদের টাকায় নিজেদের সেতু করার এ সাহসিকতার প্রতীক পদ্মা সেতু। আর এ অসম্ভব সম্ভব হয় যার কারণে, তার নাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দেশের যোগাযোগ অবকাঠামোয় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসছে এ পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে। কিন্তু ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন, তখন নানা শঙ্কার বুলি আউড়িয়েছিলেন অনেক সমালোচক। তাদের শঙ্কাকে মিথ্যা প্রমাণ করেছেন বর্তমান সরকারপ্রধান। যেমন মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে কানাডার আদালতে বিশ্বব্যাংকের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ।

২০১২ সালের ৩০ জুন বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে ১২০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তার চুক্তি বাতিল করে। দেখাদেখি সরে যায় অর্থায়নকারী জাইকা, এডিবি ও আইডিবি। ঋণদাতাদের চাপে সেই সময়কার যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনকে মন্ত্রিত্ব হারাতে হয়। অভিযোগ ওঠে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে। এটি কিন্তু রাজনৈতিক চাপে পরিণত হয়। সরিয়ে দেওয়া হয় প্রকল্পের পরিচালক রফিকুল ইসলামকে। দুর্নীতির মামলায় জেলে যান সেই সময়কার সেতু সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্যসচিব কাজী মোহাম্মদ ফেরদৌস। দুর্নীতি তদন্তে দুদক মাঠে নামলেও ছিল বিশ^ব্যাংকেরও চাপ। তাদের প্রতিনিধিরাও এসেছিল তদন্তে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে কথিত দুর্নীতির অভিযোগে প্রবল চাপের মুখে পড়তে হয় রাজনীতিতে। তখনো অভিমত এসেছিল, পদ্মা সেতু আর হবে না। বিরোধী দল, বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদদের প্রবল সমালোচনায় তখন জেরবার দশা ছিল সরকারের। এ উভয় সংকট কাটাতে নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের চাপ নিতে হয়। শুরুতে অসম্ভব মনে হলেও, ধীরে ধীরে স্বপ্নের সেতুর নির্মাণকাজ যত এগিয়েছে, সমালোচনার বদলে প্রশংসা পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একে তো বৈরী নদী, তার ওপর দুর্র্নীতির অভিযোগ পরিণত হয় প্রবল রাজনৈতিক চাপে। দাতাসংস্থা

মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পর শুরু হয় টাকার টানাটানি। প্রশ্ন ছিল, কীভাবে নির্মাণ হবে পদ্মা সেতু? সবচেয়ে বড় সংশয় ছিল পদ্মার মতো বিশাল সেতু বাংলাদেশ নির্মাণ করতে পারবে কিনা। যমুনার বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে হালের লেবুখালীর পায়রা সেতু- সব বড় অবকাঠামো নির্মাণে ছিল বিদেশি ঋণ, অনুদান এবং পরামর্শ। ঋণের শর্ত মেনে বিদেশি প্রকৌশলী ও পরামর্শকদের তত্ত্বাবধায়নে নির্মিত হয়েছে এসব সেতু। পানি প্রবাহে বিশ্বের ™ি^তীয় বৃহত্তম নদী পদ্মা। পদ্মায় গত দুই যুগে যত পানি গড়িয়েছে, সেতু নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা বিতর্ক তার চেয়ে কম হয়নি। রাজনীতিতে বারবার ঝড় উঠেছে। সব ঝড়ঝাপ্টা দলিত করে খরস্রোতা পদ্মায় বাংলাদেশের সক্ষমতা গর্বের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেতু।

নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের দুঃসাহসিক চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশ নিলেও তার চেয়েও বড় বাধা ছিল পদ্মা নদী নিজেই। পদ্মাকে বশ মানিয়ে সেতু বানাতে প্রায় সাত বছর লেগেছে। কখনো তীব্র স্রোত, কখনো ভাঙনের মতো পদ্মার খামখেয়ালি বারবার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পদ্মা সেতু প্রকল্পের যাত্রা হয়েছিল মাত্র পাঁচ হাজার কোটি টাকা নির্মাণ ব্যয় প্রাক্কলন করে। প্রকল্পের অনুমোদনের সময় ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। সেই টাকা জোগাড়েই দাতাদের কাছে ঋণ চাইতে হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজ টাকায় এর তিনগুণ ব্যয়ে সেতু নির্মাণ করে সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে বাংলাদেশ। পদ্মা সেতুর মোট ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে মূল সেতুর ব্যয় ১২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা (৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন টাওয়ার ও গ্যাস লাইনের ব্যয় বাবদ ১ হাজার কোটি টাকাসহ)। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কারণে ছিল বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ ঠিক রাখার বিশাল চাপ। এ কারণেই রব ওঠে ছিল নিজের টাকায় সেতু নির্মাণ সম্ভব নয়। প™§া সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, বৈদেশিক মুদ্রার জোগান ঠিক রাখা সবচেয়ে বড় চাপ ছিল। কিন্তু সরকারের সর্বোচ্চ সহায়তার কারণে কখনই সংকটে পড়তে হয়নি।

করোনা মহামারীর কারণে বিদেশ থেকে মালামাল আনা এবং বিদেশি জনবলের আসা-যাওয়া মারাত্মকভাবে বিঘিœত হয়। ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে আকস্মিক ভাঙনে সেতুর কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডসংলগ্ন এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। ১২৬টি রোডওয়ে ডেক সø্যাব এবং ১৯২টি রেলওয়ে স্ট্রিঞ্জারসহ কয়েক কোটি টাকার মালামাল নদীগর্ভে চলে যায়। প্রকল্পের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চোখের পলকে মালামাল টেনে নিয়ে যায় পদ্মা নদী। মালামাল উদ্ধারে ক্রেন দিয়ে চেষ্টা করা হয়েছিল। বরং ক্রেন বাঁচাতে মালামাল বাঁচানোর আশা বাদ দেওয়া হয়। এমন দানবীয় নদীর সঙ্গে লড়াই করে নির্মিত পদ্মা সেতু অসম্ভবকে জয় করার এক রূপকথা। নিজের টাকায় সেতু নির্মাণ হলেও ঠিকাদারকে কাজে বিল ও সেতুর যন্ত্রাংশ বিদেশ থেকে আমদানি ব্যয় ডলারে মেটাতে হয়েছে। গত ৯ বছরের বাজেটে পদ্মা সেতুর জন্য তিন থেকে ছয় হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত বরাদ্দ রাখা হলেও সেই টাকায় শুধু বেতন ভাতা ও দেশীয় বাজার থেকে কেনাকাটার ব্যয় মেটানো হয়েছে। একটি মাত্র প্রকল্পে প্রতি বছর বাজেটে এত টাকা বরাদ্দ রাখাকে অসম্ভব ও অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বাধা বলা হয়েছিল। এ চাপ গত আট বছর সইতে হয়েছে দেশের অর্থনীতিকে।

এত ব্যয়ে সেতু নির্মাণের সমালোচনা ছিল। একে বিলাসী প্রকল্পও বলা হচ্ছিল। তবে সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০২৫ সালে প্রতিদিন ৪১ হাজার ৫৫০টি যানবাহন পদ্মা সেতু পারাপার হবে। সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, ১৮ বছরের যানবাহনের টোল থেকে উঠে আসবে পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয়। সমীক্ষা অনুযায়ী পদ্মা সেতুর কারণে বছরে ৬৮০ কোটি টাকা পরিবহনে সাশ্রয় হবে। দেশের বার্ষিক জিডিপির প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ২৩ শতাংশ বাড়াবে পদ্মা সেতু। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি করবে। বর্ষার তিন মাস বন্যায় আর শীতের দুই মাস ঘন কুয়াশায় পদ্মা সেতুর কাজ বারবার ব্যাহত হয়েছে। সব বাধা ডিঙিয়ে পদ্মা সেতু আজ বাস্তবতার নাম।

বিষয়ঃ উন্নয়ন

Share This Article


বিশ্ববাজারে সোনার দাম কমেছে

সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করে দিলো সরকার

বিএনপি নেতা হাবিবকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত

কেউ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি: প্রধানমন্ত্রী

প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

ব্যাংকে আমানত বেড়েছে ১০ দশমিক ৪৩ শতাংশ

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের প্রভাব মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

জিডিপি কমার পূর্বাভাসে চিন্তার কিছু নেই: অর্থমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রীর সৌদি আরব ও গাম্বিয়া সফর বাতিল

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন ১৭ এপ্রিল

লেবাননে তিন হিজবুল্লাহ কমান্ডারকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের

দেশজুড়ে বইছে তাপপ্রবাহ, গরম আরও বাড়ার আভাস