‌‘স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য ও নিশ্চিত করতে সরকার প্রয়াস চালাচ্ছে’

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ বিকাল ০৪:০১, শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ১১ ফাল্গুন ১৪৩০

আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ হলো দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীকে মানসম্পন্ন ও সহজলভ্য চিকিৎসা সেবা প্রদান। দেশে জনসংখ্যার অনুপাতে চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা কম। তাই বিপুল জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবা প্রদানে ডাক্তার ও নার্সদের আরও আন্তরিক হতে হবে।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য ও নিশ্চিত করতে সরকার নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের উপযোগী দূষণমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতের মাধ্যমে একটি কল্যাণমূলক সমাজ ও রাষ্ট্র তৈরি করাই সরকারের লক্ষ্য।

শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ কার্ডিওভাসকুলার রিসার্চ ফাউন্ডেশন ও যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারভেনশনাল একাডেমির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত হৃদরোগ বিষয়ক ৪র্থ আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

রাষ্ট্রপতি বলেন, স্বাধীনতার পরপরই দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে তিনি চিকিৎসা সেবাকে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য জেলা, থানা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণের যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধুর হাতেই বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন শুরু হয়। তিনি স্বাস্থ্যকে সংবিধানের মূল অধিকারের অংশ হিসেবে সংযোজন, প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় স্বাস্থ্যকে গুরুত্বদান, গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, চিকিৎসকদের চাকরি প্রথম শ্রেণির মর্যাদা প্রদান এবং বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ গঠনসহ বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, বঙ্গবন্ধুর দর্শনকে সামনে রেখেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার সারা দেশে হাসপাতালগুলোর শয্যাসহ চিকিৎসক, নার্স, সাপোর্টিং স্টাফের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করছে। মেডিকেল শিক্ষার প্রসারে নতুন নতুন মেডিকেল কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হচ্ছে। গ্রাম পর্যায়ে জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সারা দেশে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ফ্রি স্বাস্থ্য, পরিবার কল্যাণ ও পুষ্টি সেবা প্রদান করা হচ্ছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতাল থেকে মোবাইল ফোন ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা চালু করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ হলো দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীকে মানসম্পন্ন ও সহজলভ্য চিকিৎসা সেবা প্রদান। দেশে জনসংখ্যার অনুপাতে চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা কম। তাই বিপুল জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবা প্রদানে ডাক্তার ও নার্সদের আরও আন্তরিক হতে হবে। দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবা প্রদানে অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে। অর্থের অভাবে তারা যাতে চিকিৎসা বঞ্চিত না হন বা অবহেলার শিকার না হন তা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় আপনাদের (চিকিৎসক) অধিকতর সতর্কতা ও দায়িত্বশীলতা, পেশাদারিত্বের সঙ্গে করতে হবে। খাদ্যাভাস পরিবর্তন, বিশৃঙ্খল জীবনযাপন, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানাবিধ কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বে হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অসংক্রামক এ রোগটি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে এবং রোগীর চিকিৎসা আরও সহজ ও সহজলভ্য করতে আজকের এ সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।

রাষ্ট্রপতি বলেন, চিকিৎসা বিজ্ঞান নিত্য পরিবর্তনশীল। নতুন নতুন রোগের প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে তা জয়ের জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞান এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ ও অঞ্চল ভেদে রোগের প্রকৃতি ও ধরন আলাদা। তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে রোগের প্রকার, ধরন ও প্রকৃতি পরিবর্তন হতে পারে। এসব বিবেচনায় রেখে চিকিৎসা, শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। উন্নত বিশ্বের গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে চিকিৎসকদের জানতে হবে এবং তাতে নিজেদের সম্পৃক্ত করতে হবে। হৃদরোগ, ক্যান্সার, এইডসসহ অন্যান্য প্রাণঘাতি রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে জনগণকে সচেতন করে তুলতে হবে।

মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, আজকের হৃদরোগ বিষয়ক আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশনে দেশি-বিদেশি বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা অংশগ্রহণ করবেন। জ্ঞানের আদান-প্রদানের মাধ্যমে আমাদের দেশের চিকিৎসকরা সমৃদ্ধ হবেন। বিশেষভাবে তরুণ চিকিৎসকদের সামনে উন্মোচিত হবে জ্ঞানের নতুন দিগন্ত। বেঞ্জামিন ফ্রাংকলিন মজা করে বলেছিলেন, ‘তরুণ চিকিৎসক আর বৃদ্ধ নাপিত হতে সাবধান’।

তিনি বলেন, আমি মনে করি আমাদের চিকিৎসক বিশেষ করে তরুণ চিকিৎসকদের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও পেশাদারিত্বের উন্নয়নে এ সম্মেলন ইতিবাচক অবদান রাখবে। হৃদরোগের উন্নততর চিকিৎসা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে তারাও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবেন। কমিউনিটি পর্যায়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠী যেন আরও সহজেই উন্নত চিকিৎসা সেবা পেতে পারেন সেই দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখবেন, এই প্রত্যাশা করি।

Share This Article