সুন্দরবনের মধুর জিআই স্বত্ব পেল ভারত

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ১০:২৪, শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ১০ ফাল্গুন ১৪৩০

এতে ক্ষিপ্ত সুন্দরবনের মধু সংগ্রহ ও বিপণন কাজে নিয়োজিতরা। জিআই না পেলে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের মধুর অবস্থান তৈরিতেও সংকট হবে বলে আশঙ্ক তাদের। আর বন বিভাগ বলছে, সুন্দরবনের খলিসা মধুর ভৌগোলিক নির্দেশক স্বত্ব পেতে আবেদন করা হবে। 

এবার সুন্দরবনের মধুর ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) স্বত্ব পেয়েছে ভারত। আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব বিষয়ক সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস অর্গানাইজেশনে’র (ডব্লিউআইপিও) কাছ থেকে এ স্বত্ব পেয়েছে প্রতিবেশী দেশটি। অথচ সুন্দরবনের বেশির ভাগ অংশ বাংলাদেশের ভিতর যেমন, তেমনি মধু আহরণের দিক দিয়েও এগিয়ে বাংলাদেশ।

এতে ক্ষিপ্ত সুন্দরবনের মধু সংগ্রহ ও বিপণন কাজে নিয়োজিতরা। জিআই না পেলে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের মধুর অবস্থান তৈরিতেও সংকট হবে বলে আশঙ্ক তাদের। আর বন বিভাগ বলছে, সুন্দরবনের খলিসা মধুর ভৌগোলিক নির্দেশক স্বত্ব পেতে আবেদন করা হবে। 

১০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনের ৬৬ ভাগ অর্থাৎ ৬ হাজার ৫১৭ বর্গ কিলোমিটার জায়গা বাংলাদেশের। আর ৩ হাজার ৪৮৩ বর্গকিলোমিটার জায়গা ভারতের। এই বনে মধু সংগ্রহের দিক থেকেও এগিয়ে বাংলাদেশ। গত বছরও ৪০০ মেট্রিক টন মধু আহরণ হয়েছে সুন্দরবন থেকে। সেখানে ভারতের আহরণ মাত্র ১৫৭ মেট্রিক টন। 

 

তারপরও ভৌগোলিক নির্দেশক সনদ না পাওয়াকে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা বলছে মধু সংগ্রহ ও বিপণনকারীরা। পাশাপাশি তাদের দাবি, এর ফলে বাংলাদেশের মধুর আন্তর্জাতিক বাজারে অবস্থান করতেও বিপাকে পড়তে হবে। 

সুন্দরবনের মধু সংগ্রহ করে বিক্রি করে থাকেন তানভীর আহমেদ মুন্না। মুন্না বলেন, ‘সুন্দরবনের বেশি অংশ বাংলাদেশের ভেতর ও মধু সংগ্রহ আমাদের বেশি তাই মধু জিআই আমরা পাওয়ার দাবিদার। আমরা দাবি করবো মধু জিআই ফিরে পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টরা কাজ করবেন।’

অপর ব্যবসায়ী অলিউল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, ‘সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতার কারণেই আমরা সুন্দরবনের মধুর জিআই লাভ করতে পারিনি। এ জন্য ব্যবসায়িকভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো।’ 

ব্যবসায়ী সোহেল পারভেজ বলেন, ‘জিআই না পাওয়ায় আমাদের মধুর আন্তর্জাতিক বাজারে অবস্থান পেতে কষ্ট হবে। ভারত জিআই পাওয়ায় অন্যান্য দেশ মধু সংগ্রহের ক্ষেত্রে ভারতেই আগে নজর দেবে জিআই থাকার কারণে।’

মধু সংগ্রহ ও বিপণন কারীদের সংগঠন ‘মৌমাছি ও মধু’ এক বছর আগে বন বিভাগ, শিল্প মন্ত্রণালায় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের নিয়ে আবেদন করার চেষ্টা করেও আবেদন করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মধু জাদুঘর ও গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক সৈয়দ মো. মঈনুল আনোয়ার।

তিনি বলেন, ‘সুন্দরবনের মধু সংগ্রহ ও বিপণনের সাথে জড়িত ২২ হাজার সদস্যের একটি জোট আছে ‘বাংলাদেশ মধু ও মৌমাছি’। এই জোট বন বিভাগ, শিল্প মন্ত্রণালায় ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের নিয়ে গত বছর আবেদন করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দুর্ভাগ্যবশত সেটি করা সম্ভব হয়নি।’

বন বিভাগ বলছে, বাংলাদেশে পাঁচ ধরনের মধু পাওয়া যায় সুন্দরবনে। খলিসা, গড়ান, কেওড়া, বাইন ও গেওয়া মধু। এর মধ্যে খলিসা মধু শুধু সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে পাওয়া যায়। এ কারণে খলিসা মধুর ভৌগোলিক নির্দেশক স্বত্বের জন্য আবেদন করবে তারা। 

সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মো. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, ‘সুন্দরবনের খলিসা মধু ইউনিক, এটি শুধু বাংলাদেশে পাওয়া যায়। আমরা এই খলিসা মধু নিয়ে সামনে এগোবো।’

১৮৬০ সাল থেকে সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করা হয়। মধু সংগ্রহ থেকে বন বিভাগ প্রতিবছর অর্ধকোটি টাকার রাজস্ব আয় করে। এর সাথে জড়িত রয়েছে এক হাজারের বেশি মৌয়াল।

বিষয়ঃ বাংলাদেশ

Share This Article