বিএনপিতে ফখরুল-খসরু জুটি চায় সুশীলরা

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সন্ধ্যা ০৭:২৯, শুক্রবার, ২৯ জুলাই, ২০২২, ১৪ শ্রাবণ ১৪২৯

সুশীল সমাজের সাথে বিএনপির একটি যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুশীল সমাজের কয়েকজন প্রতিনিধি এখন নিয়মিত বিএনপি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন, বিএনপিকে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন। বিশেষ করে সরকারের বিভিন্ন ব্যর্থতা, দুর্বলতাগুলো তারা হাতে-কলমে শেখাচ্ছেন বিএনপির নেতৃবৃন্দকে। সুশীল সমাজের শেখানো বক্তব্যই এখন বিএনপি নেতারা বলছেন। 

আর এ কারণে বিএনপি এখন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা বা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে এসে অর্থনৈতিক সংকট, বিদ্যুৎ সংকট, লোডশেডিং, রেমিট্যান্স ইত্যাদি তাত্ত্বিক বিষয় নিয়ে কথাবার্তা বলছেন। বিএনপির নেতাদের সঙ্গে সুশীলদের এই যোগাযোগ রাজনীতিতে একটি ইঙ্গিতবাহী ঘটনা বলেই অনেকে মনে করছেন। সুশীল সমাজও মনে করছে যে, বিএনপিকে আওয়ামী লীগের বিকল্প একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে দাঁড় করানো যেতে পারে। আর সেই লক্ষ্যে তারা বিএনপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আগের চেয়ে আরো বাড়িয়েছে। এই ঘনিষ্ঠতা বাড়ালেও সুশীলরা মনে করছে, বিএনপিতে বর্তমান যে নেতৃত্বের ধারা, সেই নেতৃত্বের ধারা পরিবর্তন হওয়া দরকার।

সুশীল সমাজের মধ্য থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে এক ধরনের সহানুভূতি রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো বেগম খালেদা জিয়া এখন শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং দলের নেতৃত্ব গ্রহণে অক্ষম। এ কারণেই সুশীল সমাজ বিএনপিতে বিকল্প নেতৃত্ব চায়। পশ্চিমা দেশগুলোর মতোই সুশীল সমাজও তারেক জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপিকে দেখতে চায় না। বরং তারা মনে করে যে, তারেক জিয়ার নেতৃত্ব থাকার কারণে বিএনপি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সহযোগিতা এবং সমর্থন পাচ্ছে না। সুশীল সমাজ এটাও মনে করে যে, তারেক জিয়া যেহেতু একাধিক মামলায় দণ্ডিত, বিদেশে পলাতক, সেজন্য এই মুহূর্তে তার নেতৃত্ব থেকে সরে যাওয়া উচিত। সাম্প্রতিক সময়ে সুশীলদের সঙ্গে বিএনপির যে যোগাযোগ, সেই যোগাযোগে তারা বিএনপিকে একটি স্বচ্ছ, অবিতর্কিত ব্যক্তিদের নেতৃত্বে আনার প্রস্তাব দিয়েছে।

বিএনপির সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন যে, বিএনপিতে অনেক ভালো লোক রয়েছে, তাদেরকে সামনে নিয়ে আসলে জাতীয়ভাবে যেমন বিএনপির ইমেজ বাড়বে, তেমনি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বিএনপির গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। পশ্চিমা দেশগুলো যেভাবে তারেক জিয়ার বিকল্প নেতৃত্ব চায়, ঠিক তেমনিভাবে সুশীল সমাজও মনে করে যে, এই মুহূর্তে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বা নেতৃত্বের সামনে নিয়ে আসাটা জরুরি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, সুশীলরা মনে করছেন যে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটি গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে এবং তার একটি ইতিবাচক ইমেজ রয়েছে। আর এই কারণেই সুশীল সমাজ তাকেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করতে চায়। সুশীল সমাজের দ্বিতীয় পছন্দ হলো আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে সুশীলদের দীর্ঘদিনের যোগাযোগ রয়েছে। বিশেষ করে হোসেন জিল্লুর রহমানের সাথে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এর খবর পাওয়া যায়।

সুশীল সমাজ মনে করে যে, এই মুহূর্তে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে বিএনপির মহাসচিব যদি করা হয়, তাহলে বিএনপির ইমেজটা বাড়বে। একই সাথে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এটাও মনে করে যে, বিএনপির এখনই জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করা উচিত এবং এ ব্যাপারে বিএনপির আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও প্রত্যাশা করে তারা। বিএনপির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সুশীলদের একাধিক বৈঠকে জামায়াত প্রসঙ্গটি এসেছে। বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করবে কিনা, এ বিষয়টিও তারা জানতে চেয়েছে। তবে পশ্চিমা কূটনীতিকদের সাথে যেমন তারেক জিয়া নেতৃত্বে থেকে সরে যাওয়া এবং জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ নিয়ে বিএনপির নেতৃবৃন্দ কোনো কথা বলেননি, ঠিক একইভাবে সুশীলদের কাছেও এই বিষয়টি নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি বিএনপি নেতৃবৃন্দ। বরং বিএনপির নেতারা মনে করেন যে, বর্তমান বাস্তবতায় তারেক জিয়াকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে বিএনপির জন্য তা হবে আত্মঘাতী। এর ফলে বিএনপি ভেঙে যেতে পারে। বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন যে, সুশীল সমাজ তারেক জিয়ার ব্যাপারে তাদের আপত্তি জানিয়েছে কিন্তু বিএনপির নেতৃবৃন্দ মনে করেন যে, জিয়া পরিবারের বাইরে বিএনপির নেতৃত্ব নেওয়ার মতো সক্ষমতা এই মুহূর্তে কারো নেই। সেজন্য সুশীল সমাজের সাথে বিএনপির সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত কতদিন থাকবে সেটি দেখার বিষয়।

বিষয়ঃ বিএনপি

Share This Article