ইউরিয়া সার

উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতার পথে, চ্যালেঞ্জ গ্যাসে

  নিউজ ডেস্ক
  প্রকাশিতঃ সকাল ১১:১৪, বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০২২, ১৩ শ্রাবণ ১৪২৯

দেলওয়ার হোসেন
   

ইউরিয়া সার উৎপাদনে দেশের কারখানাগুলো হাঁটছে সক্ষমতার পথে। গ্যাস সংকটে পড়ে সাম্প্রতিক সময়ে বন্ধ আছে দুটি কারখানা। দেশের অন্য দুটি সার কারখানা সচল থাকা, পাশাপাশি মজুত সার দিয়ে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত চাহিদা মেটানো সম্ভব বলে মনে করছেন খাত-সংশ্নিষ্টরা। উৎপাদন আরও বাড়াতে কারখানাগুলো সংস্কার করছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)। তবে গ্যাস সংকটের গ্যাঁড়াকলে পড়ে উৎপাদন না বাড়লে আগের মতোই বেশি দামে সার আমদানি করতে হবে। গেল এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে দেশীয় কারখানায় সার উৎপাদন বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

জানা যায়, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন গত ১ জুন থেকে সার খাতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দর ৪ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা করেছে। এতে প্রতি টন সার উৎপাদনে খরচ বেড়েছে ১৯ হাজার ৫৯১ কোটি টাকা।

গত জুনে জামালপুরের যমুনা ফার্টিলাইজার কারখানায় (জেএফসিএল) ২ কোটি ৬৩ লাখ ৬১ হাজার ৬৫৪ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহূত হয়েছে। এ জন্য ৩০ কোটি ৪৪ লাখ ৮০ হাজার ১০৪ টাকা অতিরিক্ত বিল গুনতে হবে। গ্যাসের দর বাড়ায় অতিরিক্ত টাকা সরকার পরিশোধ না করলে কারখানাগুলো চালু রাখা কঠিন হবে।


বিসিআইসির তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিবছর সাড়ে ২৬ লাখ টন ইউরিয়া সারের প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে চারটি সার কারখানা থেকে প্রতিবছর ১০ লাখ টন উৎপাদন হচ্ছে। পাশাপাশি কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি (কাফকো) থেকে ৬ লাখ টন সার মিলছে। আগামী বছরের নভেম্বরের মধ্যে ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কারখানাটি নতুন করে চালু হলে এতে আরও ৯ লাখ ২৪ হাজার টন সার উৎপাদন বাড়বে। পুরাতন সার কারখানাগুলো সংস্কার করায় ৫ থেকে ৬ লাখ টন সারের উৎপাদন বাড়বে। এতে চাহিদার পুরো ইউরিয়া সার দেশেই উৎপাদন করা যাবে।



বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম এ কাদের সমকালকে বলেন, চাহিদার পুরো ইউরিয়া সার উৎপাদনে দেশের নিজস্ব সক্ষমতা রয়েছে। তবে আরও উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তারা বিশেষজ্ঞদের মতামত সেভাবে নিতে চান না।

জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রতি কেজি ইউরিয়া সার উৎপাদনে খরচ হয়েছে ১৯ টাকা। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি কেজি সার ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে কেনা হয়েছে। এতে গত অর্থবছরে শুধু ইউরিয়া সার আমদানি বাবদ খরচ হয়েছে ৯ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। প্রতি কেজি সার উৎপাদনে ১৯ টাকা খরচ হলেও কৃষক কিনতে পারছেন ১৪ টাকায়। উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে সার সরবরাহ করতে গিয়ে বছরে গড়ে ৫০০ কোটি টাকা লোকসান গুনছে বিসিআইসি। সংস্থাটি লোকসানের এই টাকা সরকারের কাছ থেকে পাচ্ছে না। তবে সারের দাম বাড়নো হবে কিনা- এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। তবে ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে কৃষকের কাছে বেশি দামে বিক্রি করছে সার। সারাদেশ থেকে এ ধরনের অভিযোগও পাওয়া গেছে। রংপুর, নওগাঁ, রাজশাহী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ অধিকাংশ জেলায় ১৪ টাকার ইউরিয়া সার ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বিসিআইসির চেয়ারম্যান শাহ্‌ মো. ইমদাদুল হক বলেন, কয়েক বছরের তুলনায় ইউরিয়া সারের উৎপাদন অনেক বেড়েছে। ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা চালুর পর সার আমদানি করতে হবে না। দেশে সারের ভবিষ্যৎ অনেক ভালো। এর পরও সরকার সার উৎপাদনে কোনো খরচ দিচ্ছে না। এর মধ্যে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। সরকার টাকা না দিলে গ্যাসের দাম দেওয়া সম্ভব হবে না।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, পর্যাপ্ত সার ব্যবহারের ফলে ২০২০-২১ সালে দেশে মোট দানাদার শস্য উৎপাদন হয়েছে ৪৫৫.৫ লাখ টন। এর মধ্যে চাল, গম, ভুট্টা, আলু, ডাল, পেঁয়াজ ও পাটের মতো ফসল রয়েছে। ইউরিয়া সার গাছের বর্ধন শক্তি বাড়ায়। টিএসপি ও ডিএপি গাছের কা শক্তিশালী করে ফসল উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এমওপি গাছের দৃঢ়তা বাড়িয়ে তোলে।

সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সার বেশি দামে কিনতে বাধ্য হওয়ায় গত অর্থবছরে সারের পেছনে ২৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয় সরকার। এক বছর আগে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে এক টন ইউরিয়া সার ৫০০ ডলারে কিনলেও এখন সেটি ৮০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। টিএসপি সারের দাম ২০০-৩০০ ডলার থাকলেও সেটি বেড়ে ৬০০-৭০০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। ফলে সরকারকে বেশি দামেই সার কিনতে হচ্ছে। আবার করোনার কারণে এই শিল্পও চাপের মুখে পড়েছে। অনেক দেশ নিজেদের উৎপাদন বাড়াতে সার রপ্তানিতে বিধিনিষেধ দিয়ে রেখেছে। চীন বিশ্বের ডিএপি সারের প্রধান রপ্তানিকারক হলেও দেশটি এই সারের রপ্তানিতে এ বছর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এ পরিস্থিতিতে ইউরিয়া সারের উৎপাদন দেশে বাড়ানো গেলে ঝুঁকি কমবে।

কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক সমকালকে বলেন, 'আমদানির চেয়ে উৎপাদিত সারের দাম অনেক কম। তবে গ্যাস সংকটের কারণে সার কারখানাগুলো চালানো কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। সবকিছু নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির ওপর। এসব নিয়ে সরকার অনিশ্চয়তায় রয়েছে।' তিনি বলেন, 'সার কারখানার বাড়তি গ্যাসের দাম পরিশোধের ব্যাপারে অর্থ, শিল্প ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করা হবে।'

কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, 'টিএসপি, এমওপি ও ডিএপি সারের যে মজুত আছে, তাতে আগামী বোরো মৌসুম পর্যন্ত কোনো সমস্যা হবে না। সরকারের ত্বরিত পদক্ষেপে বিকল্প উৎস কানাডা থেকে সার আনা সম্ভব হচ্ছে। চলমান পরিস্থিতি আগামী দুই মাসের মধ্যে ঠিক হলে সবকিছু স্বাভাবিক করা সম্ভব।'

মজুত আছে ৭ লাখ টন সার :চলমান গ্যাস সংকটের মধ্যেও গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ৭ লাখ ১৪ হাজার ৪৮১ টন সার মজুত আছে। দেশের বৃহৎ কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডে (সিইউএফএল) গ্যাস সংকটে বন্ধ হয়ে গেলেও মজুত সার দিয়ে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত চাহিদা মেটানো যাবে। আসছে আমন মৌসুমে সার পেতে সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী সচিব রিয়াজ উদ্দীন আহমেদ বলেন, 'আমাদের জমি সীমিত। সারের ব্যবহারের কারণেই জনসংখ্যার সঙ্গে মিল রেখে আমাদের উৎপাদন বেড়েছে, দেশের খাদ্যের চাহিদার বেশিরভাগ দেশেই হচ্ছে। ফলে সার ব্যবহার রাতারাতি বন্ধ করে দিলে সেটা ফসল উৎপাদনের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।'

সমকাল

Share This Article


দেশের দুই বিভাগে ঝড়-বৃষ্টির আভাস

ট্রান্সকমের বিরোধ: বিক্রি হচ্ছে প্রথম আলো?

ঈদ ও নববর্ষে পদ্মাসেতুতে ২১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা টোল আদায়

হিলি সীমান্তে বিএসএফকে মিষ্টি দিয়ে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাল বিজিবি

শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনায় মসৃণভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন : মার্কিন থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক

সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষা করে উদীচীর অনুষ্ঠান দুঃখজনক : তথ্য প্রতিমন্ত্রী

মন্ত্রণালয়ের সুনাম বাড়াতে সবাইকে কাজ করতে হবে: প্রতিমন্ত্রী

পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে সরকার: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

ডিএমপির তৎপরতায় এবার ঈদে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি

কারো যেন ডেঙ্গু না হয় সেজন্য সবাইকে কাজ করতে হবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

দ্বাদশ সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু ২ মে

প্রস্তাবিত ৫ ব্যাংকের বাইরে একীভূত করা হবে না